শুক্রবার মস্কো-কিভ সঙ্ঘাত ১৬ দিনে পা দিল। ইতিমধ্যেই ক্রেমলিনের আগ্রাসনের মুখে পড়ে বিপর্যস্ত ইউক্রেন। ইউক্রেনের উপর অবিরাম বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে রুশ সেনা। বুধবার মারিউপোলের এক হাসপাতালে হামলা চালিয়ে বিশ্ব জুড়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে রাশিয়াকে।
তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের আত্মবিশ্বাসী প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির প্রথম থেকেই দাবি ছিল, এই যুদ্ধে শেষমেশ তাঁর জয় নিশ্চিত।
জয় নিশ্চিত করতে এ বার নতুন সঙ্গীর সাহায্য পাচ্ছে কিভ সরকার। নতুন এই সঙ্গীর নাম ‘দি মার্কসম্যান’। আর্ন্তজাতিক মহলে যিনি পরিচিত ‘ওয়ালি’ নামে।
ওয়ালি বিশ্বের অন্যতম প্রতিভাবান স্নাইপার। অব্যর্থ লক্ষ্যপূরণে এই স্নাইপারের জুড়ি মেলা ভার। একটি গুলি করেই দূর থেকে শত্রুপক্ষকে খতম করতে পারদর্শী ৪০ বছর বয়সি এই বন্দুকধারী। অনেকেরই মতে তিনি বিশ্বের ভয়ঙ্করতম স্নাইপার।
শত্রু নিধনে দক্ষ এই স্নাইপারের জন্ম কানাডায়। তিনি রয়্যাল কানাডিয়ান ২২ রেজিমেন্টের সদস্য। রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে কানাডা থেকে এই ওয়ালিকেই নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করেছে ইউক্রেন।
২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত চলা আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ওয়ালি। এ ছাড়া ২০১৫ সালে ইসলামিক স্টেটের (আইসিস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়ও বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি।
২০১৭ সালে আইসিস-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রয়্যাল কানাডিয়ান ২২ রেজিমেন্টের ওয়ালির এক সতীর্থ দু’মাইলেরও বেশি দূরত্ব থেকে এক আইসিস জঙ্গি নিধন করেন। এটি সবচেয়ে দূর থেকে চালানো স্নাইপার গুলি হিসেবে রেকর্ডও গ়ড়ে। তবে অনেকেই মনে করেন এই গুলিটি চালিয়েছিলেন স্বয়ং ওয়ালিই।
এক দিনে একাই শত্রুপক্ষের ৪০ সদস্যকে খতম করেছিলেন ওয়ালি।
ক্রেমলিনের পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার উদ্দেশে ৫২টি দেশ থেকে ইউক্রেনের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা দু’লক্ষেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ওয়ালিও এক জন।
কিছু দিন আগে অবধি এক জন কম্পিউটার বিশারদ হিসেবে কাজ করছিলেন ওয়ালি। মস্কো-কিভ সঙ্ঘাত শুরু হতেই তিনি বিপদের মুখে পড়া ইউক্রেনের সাহায্য করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বেন বলেই সিদ্ধান্ত নেন।
স্ত্রী এবং এক বছরের সন্তানকে রেখে যুদ্ধে নামার জন্য প্রস্তুত ওয়ালি। তবে নিরাপত্তার কারণে ওয়ালির মতো পারদর্শী সেনা সদস্যদের পরিবারের তথ্য গোপন রাখা হয়।
সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘‘ইউক্রেনকে ধ্বংস হতে দেখে মনে হচ্ছিল আমার নিজের সন্তান কষ্টে আছে।’’ আর সেই কারণেই তিনি কিভ সরকারকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তিনি জানান।
মানবিকতার খাতিরেই তিনি এই যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষ নিতে চলেছেন বলেও তিনি জানান।
ইতিমধ্যেই ওয়ালির মতো ১০ হাজার প্রশিক্ষিত সেনা সদস্যদের নিয়ে একটি বিশেষ দল গঠন করতে চলেছে ইউক্রেন। এই দলে থাকবেন এক লক্ষ ২০ হাজার সেচ্ছাসেবকও।
যুদ্ধক্ষেত্রে আরও সাহায্য পেতে আর্ন্তজাতিক সশস্ত্র বাহিনীর কাছেও সাহায্য চেয়ে পাঠিয়েছিলেন জেলেনস্কি।