ইউক্রেনে নতুন করে হামলার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু সেই কথা নিজেই ভাঙলেন তিনি! সোমবার সকালে নতুন করে ইউক্রেনের মাটিতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল রাশিয়ার বিরুদ্ধে।
সোমবার কিভে ইরানের ‘কামিকাজে ড্রোন’ দিয়ে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। রাজধানী শহরের মধ্য শেভচেনকিভস্কে জেলায় একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
এই প্রসঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অফ স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমার্ক বলেছেন, ‘‘রাশিয়া ভাবছে, এতে ওদের লাভ হবে। আসলে ওদের হতাশারই বহিঃপ্রকাশ এটা।’’
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৬টা ৩৫ মিনিট ও ৬টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে কিভে তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে। প্রথম বিস্ফোরণের কিছু ক্ষণ আগেই বিমান হামলার সাইরেন শোনা গিয়েছিল।
বিস্ফোরণের জেরে ক্ষয়ক্ষতি কী হয়েছে, তা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। বাসিন্দাদের সতর্ক করে তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ক’দিন আগেও ইউক্রেনের রাজধানীতে ইরানের তৈরি ওই ড্রোন হামলা চালায়। ইউক্রেন প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, কিভের পশ্চিমে একটি ছোট শহর মাকারিভে সরকারি পরিকাঠামো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে ড্রোন হামলায়।
কিছু দিন আগেই, কিভ-সহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর সেই প্রথম ব্যাপক হারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় মস্কো। ৮৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় ইউক্রেনে।
গত ১০ অক্টোবরের হামলায় কমপক্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে ইউক্রেন। জখম হন আরও ১০৫ জন। এই ঘটনায় রাশিয়ার নিন্দায় সরব হয় আন্তর্জাতিক মহল।
এর আগে রাশিয়া-ক্রাইমিয়া সংযোগকারী সেতুতে ট্রাক বিস্ফোরণ ঘটে। রাশিয়ার সন্দেহ, ইউক্রেন সরকার জড়িত রয়েছে এই কাজে। তার পর থেকেই ইউক্রেন জুড়ে রুশ হামলা বেড়েছে।
কিভের উপর যখন আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে মস্কো, সেই আবহে গত সপ্তাহে পুতিন জানান, ইউক্রেনে তাঁরা নতুন করে হামলার প্রয়োজন দেখছেন না। এমনকি, ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারেও যে রাশিয়া আগ্রহী, সে বার্তাও দেন পুতিন।
তবে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় আমেরিকাকে কোনও ভাবেই চান না বলে স্পষ্ট করে দেন পুতিন। নেটোর সঙ্গে রুশ বাহিনীর যদি কোনও রকম সংঘর্ষ বাধে, তা হলে তার পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
এর আগে, ইউক্রেনের চার অঞ্চলে গণভোট করানোর পর হুমকির সুরে পুতিন বলেছিলেন যে, তাঁদের এলাকায় প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে তিনি পরমাণু হামলা চালাবেন। যার নিন্দা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
১৩। ইউক্রেনে হামলা চালানোর জন্য তাঁদের সংরক্ষিত বাহিনীর অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা নেই বলেও স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন পুতিন। কিন্তু তার পরও সোমবার নতুন করে ইউক্রেনের মাটিতে যে ভাবে আগ্রাসন দেখাল রাশিয়া, তাতে দুই দেশের মধ্যে সঙ্ঘাতের তীব্রতা আরও বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। তার পর থেকে চলছে দু’দেশের যুদ্ধ। রুশ হামলায় কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের একাংশ।
যুদ্ধের বীভৎসতা প্রাণ কেড়েছে বহু মানুষের। ইউক্রেনের বহু মানুষ আশ্রয়হীন অবস্থায় রয়েছে। দারিদ্রও বাড়ছে। ক্ষতি হয়েছে রাশিয়ারও। তাদেরও বহু সেনার মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়ত যে ভাবে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে রাশিয়া, তাতে যুদ্ধ থামার লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না।