রুশ ফৌজদের জব্দ করতে ইউক্রেনের ভরসা এখন সাড়ে ছ’ফুট দৈর্ঘ্যের এক ‘অ্যালিগেটর’! এর ভয়েই নাকি ইউক্রেনের বহু এলাকা দখল করার পরও সেখান থেকে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে পুতিনবাহিনী। এটাই নাকি জ়েলেনস্কির ‘ব্রহ্মাস্ত্র’।
সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার উদাহরণ অন্তত তেমনই বলছে। ইউক্রেনের ছ’ভাগের এক ভাগ ইতিমধ্যেই রাশিয়ার দখলে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি তার মধ্যে কিছু এলাকায় অধিকার কায়েম করার ডাকও দিয়েছিলেন গণভোটের মাধ্যমে। কিন্তু নির্দেশ কার্যকর হওয়ার আগেই দেখা গিয়েছে রুশ অধিকৃত বেশ কিছু এলাকা থেকে পিছু হটতে শুরু করেছে পুতিনবাহিনী।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, ইউক্রেনের ওই ‘অ্যালিগেটর’ই এই অসাধ্যসাধনের নেপথ্য কারণ। সেগুলি আসলে ইউক্রেনের তূণের ব্রহ্মাস্ত্র!
সাধারণত ‘অ্যালিগেটর’ বলতে কুমির গোত্রের প্রাণীর কথা মাথায় আসে। তবে ভোলোদেমির জ়েলেনস্কির এই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ কোনও প্রাণী নয়, আগ্নেয়াস্ত্র।
বিশদে বললে, ‘মেগা স্নাইপার রাইফেল’। যার গুলি এক মাইল দূর থকেও হাফ ইঞ্চি পুরু ইস্পাতের বর্ম ভেদ করে শরীরে ঢুকতে পারে। ঘায়েল করতে পারে সব রকম সতর্কতা নিয়ে থাকা যোদ্ধাদের।
এই রাইফেলেরই নাম ‘স্নাইপেক্স অ্যালিগেটর’। ইউক্রেনের নিজের দেশে তৈরি এই রাইফেলকে দেখলেও ভয় লাগবে।
ইউক্রেনের অ্যালিগেটরের ঘোড়ায় টান দেন যাঁরা, অনেক সময় তাঁদেরকেও উচ্চতায় হার মানায় এই অস্ত্র। অ্যালিগেটরের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ছ’ফুট।
ওজনও নেহাত কম নয়। ৫৫ পাউন্ড অর্থাৎ ২৪ কেজি ওজনের এই রাইফেলকে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় বসানোর জন্য সাহায্য নিতে হয়।
১৪.৫ এমএম ক্যালিবারের গুলি ব্যবহার করতে হয় এই রাইফেলে। যেখানে ভারতীয় রাইফেলে ব্যবহৃত গুলির ক্যালিবার স্রেফ সাড়ে পাঁচ এমএম। বর্ম ছাড়া এই গুলি কারও শরীরে বিঁধলে তার প্রভাব হবে অনেকটা বিস্ফোরকের মতোই।
অ্যালিগেটর থেকে ছোড়া এই গুলি এক সেকেন্ডে পৌঁছে যেতে পারে ৯৮০ মিটার। যুদ্ধে ব্যবহৃত রাশিয়ার সাঁজোয়া গাড়ি বিটিএস -৮০কে একটি বুলেটের আাঘাতে এক মাইল দূর থেকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে এই রাইফেল।
শুধু স্থবির লক্ষ্যে নয়, চলমান লক্ষ্যবস্তুকেও নিখুঁত নৈপুণ্যে আঘাত করতে পারে অ্যালিগেটর। সে ভাবেই তৈরি করা হয়েছে এই মেগা স্নাইপার রাইফেলকে।
এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকেও ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে অ্যালিগেটরের। চলমান বিমানকে ধ্বংস করতে না পারলেও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিমানকে শেষ করা এর ‘বাঁয়ে হাত কা খেল’।
একটি রাইফেলে গুলির পাঁচটি ম্যাগাজিন রাখা যায় একসঙ্গে। তবে এই রাইফেল লক্ষ্যে যেমন মারণ আঘাত হানতে পারে, তেমনই যিনি রাইফেল চালাচ্ছেন তার দিকেও আসতে পারে আঘাত। তাই শ্যুটারকে বাঁচাতেও রাইফেলেই রাখতে হয় আড়ালের ব্যবস্থা।
পদাতিক বাহিনীর ব্যবহারের উপযুক্ত। সামান্য ভারী হলেও সহজে বহনযোগ্য। এই রাইফেলের সাহায্যে রাশিয়ার বাহিনীর হাজারো সাঁজোয়া গাড়িকে ধ্বংস করতে পেরেছে জ়েলেনস্কির সেনারা।
২০২০ সালের জুনে প্রথম এই রাইফেল আত্মপ্রকাশ করে। বহুজাতিক সংস্থা জাডো হোল্ডিং লিমিটেড তৈরি করেছিল স্নাইপেক্স অ্যালিগেটরকে। এই সংস্থার তিনটি সদর দফতরের একটি ইউক্রেনেই। বাকি দু’টি জার্মান এবং নেদারল্যান্ডসে।
২০২১ সালের মার্চ থেকে এই অস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয় ইউক্রেনে। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে এর পূর্ণ মাত্রার ব্যবহার শুরু হয়।
রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধ এই অ্যালিগেটর হামলাকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সমান বলেও ব্যাখ্যা করেছেন যুদ্ধ বিশেষজ্ঞরা।
বস্তুত, বিশেষজ্ঞদের অনেকে এমনও বলছেন যে, পুতিনের আগ্রাসন আর রাশিয়ার সেনাদেরকে এখনও ইউক্রেন অনেক জায়গায় ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছে তাদের এই ব্রহ্মাস্ত্রের দৌলতেই।