প্রায় তিন মাস ধরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলতে থাকা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দুই পক্ষেরই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না আপাতত।
ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকার দখল নিতে রাশিয়া প্রচুর উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র ব্যবহার ইতিমধ্যে করে ফেলেছে। আর কিছু অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা তারা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে।
এই বার নতুন এক ধরনের অস্ত্রের পরীক্ষা করল রাশিয়া। রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিশফ জানিয়েছেন, তাঁরা এক নতুন লেজার অস্ত্রের পরীক্ষা সম্পন্ন করে ফেলেছেন।
বরিশফের বক্তব্য অনুযায়ী, এই অস্ত্র শত্রু দেশের কৃত্রিম উপগ্রহকে ‘অন্ধ’ করে দিতে পারে এবং ড্রোনকে ধ্বংস করে দিতে পারে নিমেষে।
রাশিয়ার সামরিক বিভাগের উন্নয়নের দিকগুলিও বরিশফের তত্ত্বাবধানে। তিনি জানান, এই অস্ত্র খুব সহজেই প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের ড্রোনকে ধ্বংস করতে সক্ষম। শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীর ১৫০০ কিলোমিটার উপর থাকা কৃত্রিম উপগ্রহকে অচল করতেও সক্ষম।
এই অস্ত্রের নাম ‘দ্য পেরেসভেট সিস্টেম’। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে ইতিমধ্যেই এই অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
নতুন প্রজন্মের অস্ত্র এমন সময় রাশিয়ার হাতে এসেছে, যখন পুতিনের সেনা ইউক্রেনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণের পর থেকে রাশিয়া তার এক তৃতীয়াংশ সৈন্য হারিয়েছে।
২০১৮ সালে বেশ কয়েকটি নতুন অস্ত্রের কথা ঘোষণা করেছিলেন পুতিন। যার মধ্যে ছিল অন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ছোট পারমাণবিক অস্ত্র, পারমাণবিক ড্রোন, সুপারসনিক অস্ত্র এবং লেজার অস্ত্র।
আন্দাজ করা হচ্ছে, ‘দ্য পেরেসভেট সিস্টেম’-এর নাম করা হয়েছে রাশিয়ার মধ্যযুগীয় সন্ন্যাসী আলেকজাণ্ডার পেরেসভেটের নামে। যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করতে গিয়ে মারা যান।
বরিশফ আরও জানান, আমাদের বিজ্ঞানীরা যে উন্নত অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, তার সাহায্যে আমরা যে কোনও অস্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করতে সক্ষম হতে পারব।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বরিশফের এই ঘোষণার পর আমেরিকা এবং চিনের মত পরমাণু শক্তিধর দেশগুলিও এই অস্ত্র তৈরিতে উদ্যোগী হয়ে উঠবে।
বরিশফের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, রাশিয়ার এই অস্ত্র আমেরিকার নজরদারি বিচ্ছিন্ন করতে ব্যবহার করতে পারে। যুদ্ধের শুরু থেকেই রাশিয়ার অন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র এবং ইউক্রেন সীমান্তে সেনাবাহিনীর অবস্থানের উপর ক্রমাগত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা।
সাংবাদিক বৈঠকে ইউরি বরিশফ জানান, তিনি সদ্যই নিঝনি নভোগরদ প্রদেশের সারভ শহর থেকে সব কিছু তদারকি করে ফিরেছেন।
এই সারভ শহরের অপর নাম আরঝামাস-১৬। এই শহর রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার গোপন ঘাঁটি।
বরিশফ জানান, এই অস্ত্র পদার্থবিদ্যার সম্পূর্ণ নতুন তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।