ইউক্রেনের উপর আক্রমণের তেজ ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে রাশিয়া। মাঝেমধ্যেই ছক পাল্টে ফেলছে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ। রণকৌশলে আকাশপথকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। ২৫ মাস কেটে গেলেও দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধের আবহের কোনও পরিবর্তন হয়নি। এ বার ইউক্রেনকে ধ্বংস করতে পুতিনের দেশ ব্যবহার করছে ওড্যাব (ওডিএবি-১৫০০) বোমা।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ইউক্রেনের আরসুমি ওব্লাস্টের ভেলিকা পিসারিভকা শহরের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয়। গত ৩০ মার্চ এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার সঙ্গে সঙ্গেই শহরের চারপাশ ধোঁয়ায় ভরে যায়। বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই হামলা চালানো হয়েছে ওডিএবি-১৫০০ ব্যবহার করে।
যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের সঙ্গে ব্যবধান তৈরি করতে রাশিয়া নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। আর তার জন্য পুতিনের সেনাবাহিনী ব্যবহার করছে সোভিয়েত আমলের কিছু ক্ষেপণাস্ত্র। বলা হচ্ছে, ওডিএবি-১৫০০ বোমাটিও সেই সোভিয়েত আমলেরই।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ওডিএবি-১৫০০ হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জুলিয়ান রোপকে নামে এক সামরিক বিশ্লেষক দাবি করেছেন, বিস্ফোরণের ফলে ধোঁয়ার মেঘ তৈরি হয়। সেই মেঘের উচ্চতা মাটি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার। তা থেকেই এই বোমার শক্তি আন্দাজ করা সম্ভব।
সোভিয়েত আমলে যুদ্ধক্ষেত্রে ওডিএবি সিরিজের বেশ কিছু বোমা ব্যবহার করা হত। এই সিরিজের সবচেয়ে ছোট বোমা ওডিএবি-৫০০-এর হামলার প্রভাব ৩০০ বর্গমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। ওডিএবি-১৫০০-এর প্রভাব ৫০০ বর্গমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
ইউক্রেন যুদ্ধে এই ওডিএবি-১৫০০ ব্যবহার করারই প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। বিভিন্ন অসামরিক এলাকায় এই বোমা ফেলা হয়েছে বলেই খবর। জুলিয়ানের কথায়, ‘‘ইউক্রেনের শহরগুলি ধ্বংস করতে রাশিয়া নয়া পন্থা অবলম্বন করেছে।’’
ইউক্রেনের সামরিক বিশেষজ্ঞ ওলেকজ়ান্ডার কোভালেঙ্কো এই হামলার ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়ান সেনা যুদ্ধে সোভিয়েত যুগের বোমা ব্যবহার করছে।’’ এই সব বোমা পুরনো হলেও প্রভাব মারাত্মক বলেই দাবি করছেন ওলেকজ়ান্ডার।
শুধু ওডিএবি-১৫০০ নয়, সোভিয়েত আমলের আরও বেশ কিছু বোমা ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করছে রাশিয়া। নতুন প্রযুক্তির মিশেলে তৈরি করা পুরনো বোমাগুলি অনেক দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
গত মাসে ইউক্রেনের উপর ফ্যাব (এফএবি-১৫০০) নামে একটি বোমা ফেলেছিল রাশিয়া। সোভিয়েত আমলের এই বোমার ওজন দেড় টন। এই বোমার মধ্যে তার প্রায় অর্ধেক ওজনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়।
সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া যদি কোনও এলাকার দখল নিতে চায় তবে সেখানে সবার আগে ওডিএবি-১৫০০, এফএবি-১৫০০ বোমাগুলি ফেলে। এর ফলে অনেকটা জায়গা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া সেই সংঘাতে এখনও হামলা, পাল্টা হামলা চলছে। রাশিয়ার আক্রমণে পিছু হটেনি ইউক্রেন। যদিও সংঘাতের তীব্রতা অনেকটাই কমেছে।
প্রবল শীত আর তুষারপাত কমে আসার পরেই নতুন করে ইউক্রেনে আক্রমণের অভিঘাত বাড়িয়েছে পুতিনের সেনা। দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা হয়েছে ইউক্রেনের রাজধানী শহর কিভে। তবে ইউক্রেন সেনার ‘এয়ার ডিফেন্স ফোর্স’ বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে বলেও খবর।
রাশিয়ার হামলার নতুন ছক ঠেকাতে ইউক্রেনও পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন রণকৌশলের মাধ্যমে গত এক বছরে উত্তর-পূর্বের খারকিভ, জ়াপোরিজিয়া, দক্ষিণে মাইকোলিভের বেশ কিছু এলাকা থেকে রুশ বাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেন সেনা।
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ কবে শেষ হবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন সামরিক বিশেষজ্ঞেরা। যে ভাবে যুদ্ধে নতুন নতুন অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া, তাতে অনেকেই আশঙ্কা করছেন পুতিন ইউক্রেনকে পুরোদস্তুর ধ্বংস না করে থামবেন না।