বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন নীতীশ কুমার। ‘ইন্ডিয়া’র হাত ছেড়ে তিনি এখন এনডিএমুখী। আর তারপরেই প্রাক্তন জোট সঙ্গীর কন্যার কটাক্ষের শিকার হয়েছেন নীতীশ।
‘মহাগঠবন্ধন’ ছেড়ে এনডিএর দিকে পা বাড়িয়েছেন নীতীশ কুমার। রবিবার সকালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
তার পরেই সমাজমাধ্যমে সরব ‘মহাগঠবন্ধন’ শরিক রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবের কন্যা রোহিণী আচার্য। সমাজমাধ্যমে লিখলেন, ‘‘জঞ্জাল ‘ডাস্টবিন’-এ গিয়েছে।’’
মাত্র ১৮ মাস আগে এনডিএ ছেড়ে ‘মহাগঠবন্ধন’-এ যোগ দিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। অষ্টম বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। তখন জানিয়েছিলেন, এনডিএর সঙ্গে ‘সব কিছু ঠিকঠাক চলছে না’।
লোকসভা ভোটের দিকে নজর রেখে বিরোধী দলগুলোকে একজোট করার কাজও শুরু করেন নীতীশ। তার পর আচমকই জোটবদল। আবারও এনডিএর হাত ধরলেন তিনি।
এই ঘটনার পরেই এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লালু-কন্যা রোহিণী লিখলেন, ‘‘আবর্জনা আবার ডাস্টবিনে গিয়েছে। আবর্জনা-গোষ্ঠীকে এই দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনা ফেরানোর জন্য অভিনন্দন।’’
রোহিণী থাকেন সিঙ্গাপুরে। বৃহস্পতিবারও সমাজমাধ্যমে বিতর্কিত পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি। পরে তা মুছেও দেন। আরজেডির তরফে বলা হয়, নীতীশ কুমারের বিষয়ে এই কথা বলা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিষয়ে এক্সে পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি।
এক আরজেডি নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করা হয়েছিল, তাই তা মুছে ফেলা হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করা হচ্ছিল।’’
রোহিণীর সেই পোস্টের স্ক্রিনশট যদিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, তিনি হিন্দিতে লিখেছেন, ‘‘যাঁদের নীতি ভেসে গিয়েছে, তাঁরাই সমাজবাদের রক্ষক হওয়ার দাবি করে।’’
প্রসঙ্গত, তার এক দিন আগে, গত বুধবার ‘পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি’-কে কটাক্ষ করেছিলন নীতীশ। অনগ্রসর (ওবিসি) নেতা কর্পূরী ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ কর্মসূচিতে নীতীশ ওই মন্তব্য করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘‘জেডিইউ নেতৃত্ব কর্পূরী ঠাকুরের দর্শন অনুসরণ করে চলেছেন। পরিবারের কোনও সদস্যকে আমরা রাজনৈতিক ক্ষমতার বৃত্তে নিয়ে আসি না।’’
কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনের নাম না করলেও নীতীশের ওই মন্তব্যের নিশানা আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ এবং তাঁর পরিবার বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা। এর পরেই আরজেডির সঙ্গে নীতীশের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল। এ বার জোট ছেড়েই বেরিয়ে গেলেন তিনি। এরপরেই লালু কন্যার রোষের মুখে পড়েন বিহারের ‘সুশাসন বাবু’।
প্রসঙ্গত, রোহিণী বরাবরই সমাজমাধ্যমে সক্রিয়। লালু-কন্যা হিসাবেই তিনি বেশি পরিচিত। তবে এর আগেও নানা সময়ে নানা বিষয়ে সমাজমাধ্যমে তাঁকে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিক বিষয়ে রোহিণীর মন্তব্যের কারণে অনেকে তাঁকে ‘ঠোঁটকাটা’ বলে থাকেন।
পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় লালুকে জেলে পাঠানোর পর বিচারব্যবস্থার উপর একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন রোহিণী।
একের পর এক টুইট করে রোহিণী কটাক্ষে জর্জরিত করেছিলেন রাজনৈতিক নেতাদের। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার থেকে শুরু করে অমিত শাহ, এমনকি রোহিণীর আক্রমণ থেকে বাদ যাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
‘ঠোঁটকাটা’ রোহিণীর রোষের মুখে পড়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতও। কোভিডের সময় যখন গঙ্গায় দেহ ভাসতে দেখা গিয়েছিল, কঙ্গনা বলেছিলেন নাইজেরিয়ার ছবি দেখিয়ে গঙ্গার বলে দাবি করা হচ্ছে। এই মন্তব্যের পর অভিনেত্রীকে সটান ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ এবং ‘অন্ধ’ বলে মন্তব্য করেন রোহিণী। খবরে এসেছিলেন বাবা লালু প্রসাদ যাদবকে নিজের একটি কিডনি দান করেও।