রড লেভার এরিনায় সতীর্থ ম্যাথু এবডেনকে নিয়ে শনিবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পুরুষ ডাবলস ট্রফি জিতেছেন রোহন বোপান্না। গড়েছেন বিশ্বরেকর্ডও। ৪৩ বছর ৩২৯ দিন বয়সি বোপান্না টেনিসের ওপেন যুগে পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার নজির গড়লেন।
ক্রিকেট, ফুটবল হোক বা টেনিস, ৪৩ বছর বয়সে বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই অবসর নিয়ে নেন। কিন্তু হার না মানার অপর নাম বোপান্না। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন অনুশীলন আর অধ্যবসায়ের জোর কতটা।
যদিও বিশ্বরেকর্ড গড়েও নিজেকে এক ফোঁটা কৃতিত্ব দিতে রাজি নন রোহন। জানিয়েছেন, তাঁর সাফল্যের নেপথ্যনায়িকা তাঁর ‘সুন্দরী’ স্ত্রী।
রোহনের স্ত্রীর নাম সুপ্রিয়া আন্নাইয়া বোপান্না। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চলাকালীন গ্যালারি থেকে স্বামীর জন্য তাঁকে গলা ফাটাতে সারা দুনিয়া দেখেছে।
রোহন এর আগেও জানিয়েছিলেন কী ভাবে সুপ্রিয়া কঠিন সময়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। স্ত্রীর প্রশংসা করে বলা বোপান্নার পুরনো কয়েকটি কথাও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
বোপান্নাকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম ‘ইএসপিএন’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘আমার স্ত্রী এক দিন আমাকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়েছিল, তোমার জীবনে যে সীমাবদ্ধতাগুলি রয়েছে, তা যদি তুমি বদলে ফেলতে পারো, তা হলে সব কিছু বদলে যায়। তোমাকে কেউ আটকাতে পারবে না।’’
বোপান্না আরও বলেন, ‘‘আমাদের সবসময় বলা হয়, এটা ২৫ বছরের মধ্যে করতে হবে, ওটা ৩০ বছরের মধ্যে করতে হবে, সেটা ৪০-এর মধ্যে করতে হবে। খেলা নিয়ে হোক, জীবন নিয়ে হোক, বিয়ে নিয়ে হোক, সন্তান হওয়া নিয়ে হোক, কেউ না কেউ এ সব কথা আমাদের প্রতিনিয়ত বলে। কিন্তু আপনি যদি আপনার সীমাবদ্ধতাগুলিকে সুযোগে বদলে ফেলতে পারেন, তা হলে আর কোনও বাধা থাকে না। ”
ফাইনালের পরে বোপান্না এ-ও জানান যে, কয়েক বছর আগেই তিনি খেলা থেকে অবসর নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু স্ত্রীর সমর্থন এবং বিশ্বাস তাঁকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
বোপান্নার কথায়, ‘‘আমার সুন্দরী স্ত্রী সুপ্রিয়া এবং আমার মেয়ে ত্রিধা, তোমাদের সমর্থন এবং ভালবাসার জন্য অনেক ধন্যবাদ। কয়েক বছর আগে আমি একটি ভিডিয়োবার্তায় জানিয়েছিলাম যে আমি অবসর নেব। কারণ আমি ম্যাচ জিততে পারছিলাম না। সে সময় টানা পাঁচ মাস আমি একটিও ম্যাচ জিতিনি। আমি ভেবেছিলাম যে, আমার খেলার সফর শেষ হতে চলেছে। আমার অধ্যবসায় আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি সত্যিই অনেক কিছু পাল্টে ফেলতে পেরেছি এবং দুর্দান্ত সঙ্গী পেয়েছি।’’
যে স্ত্রীর প্রশংসায় বোপান্না পঞ্চমুখ, সেই সুপ্রিয়ার সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় এক রেস্তরাঁয় খেতে গিয়ে। সেখান থেকে বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব গড়িয়ে প্রেম। বেশ কিছু দিন প্রেমপর্ব চলার পর ২০১২ সালে রোহন এবং সুপ্রিয়ার চার হাত এক হয়।
কর্নাটকের কুর্গের বাসিন্দা রোহন পেশাদার টেনিস তারকা হিসাবে অস্ট্রেলিয়া ওপেন, ফরাসি ওপেন, ইউএস ওপেন এবং উইম্বলডনের মতো নামীদামি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
অন্য দিকে, সুপ্রিয়া বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। এক জন মনোবিজ্ঞানী হওয়ার পাশাপাশি তিনি এক জন মিডিয়া ব্যক্তিত্বও বটে। সুপ্রিয়া ‘রোহন বোপান্না টেনিস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’-এর ডিরেক্টর হিসাবেও কাজ করেন।
অস্ট্রেলিয়া ওপেনের ফাইনালে বোপান্না এবং এবডেন মুখোমুখি হয়েছিলেন সিমোনে বোলেল্লি এবং আন্দ্রেয়া ভাভাসোরির। তাঁদের ৭-৬, ৭-৫ গেমে হারিয়ে দেয় বোপান্না-এবডেন জুটি।
ডাবলসে এটাই প্রথম ট্রফি বোপান্নার। এর আগে মিক্সড ডাবলসে একটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম রয়েছে তাঁর।
পুরুষদের বিভাগে এর আগে সবচেয়ে বেশি বয়সে ট্রফি জেতার রেকর্ড ছিল ফরাসি খেলোয়াড় জাঁ জুলিয়েন রজারের। ২০২২ সালে ৪০ বছর ৯ মাস বয়সে ফরাসি ওপেন জিতেছিলেন তিনি। সঙ্গী ছিলেন মার্সেলো আরেভোলা।
তার আগে মাইক ব্রায়ান ২০১৮ সালের ইউএস ওপেন জিতেছিলেন ৪০ বছর ৪ মাস বয়সে। তালিকায় তৃতীয় আর এক ভারতীয় লিয়েন্ডার পেজ়। তিনি ২০১৩ সালের ইউএস ওপেন জিতেছিলেন ৪০ বছর ২ মাস বয়সে। বোপান্না এঁদের সবাইকেই ছাপিয়ে গেলেন।