বড় বড় বিনিয়োগকারী সংস্থাকে ঘোল খাইয়েছেন তিনি। প্রায় ১০০ কোটি ডলারের প্রতারণা করেছেন। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৮৩০০ কোটি টাকা। প্রতারণার দায়ে আমেরিকায় সাড়ে সাত বছরের জেল হয়েছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী ঋষি শাহের। কে এই ঋষি?
৩৮ বছরের ঋষির একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা ছিল। তার মাধ্যমেই গোল্ডম্যান স্যাক্স গ্রুপ, গুগ্লের অভিভাবক সংস্থা অ্যালফাবেট, ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিৎজ়কারের সংস্থাকে প্রতারণা করেছেন।
‘আউটকাম হেল্থ’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হলেন ঋষি। টাকা তছরুপের অভিযোগে ২০২৩ সালের এপ্রিলে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। সংস্থার অন্য দুই প্রতিষ্ঠাতা শ্রদ্ধা আগরওয়াল এবং ব্র্যাড পার্ডিও দোষী সাব্যস্ত হন।
শ্রদ্ধাকে তিন বছর হোমে থাকার নির্দেশ দেন বিচারক। ব্র্যাডকে দু’বছর তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগই পেশা ঋষির। ২০১১ সালে তিনি ‘জাম্পস্টার্ট’ নামে একটি সংস্থা খুলেছিলেন তিনি। ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং চেয়ারম্যান ছিলেন ঋষি। স্বাস্থ্য প্রযুক্তি, শিক্ষা প্রযুক্তি এবং সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায় ৬০টি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ করেছিল সেই সংস্থা।
ঋষির বাবা ছিলেন চিকিৎসক। ২০০৫ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন একটি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ঋষি। সেটি অর্থনীতি সংক্রান্ত। তার পর ইলিনয়ের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
এক বছর পড়াশোনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন ঋষি। শুরু করেন ব্যবসা। ২০০৬ সালে তিনি খোলেন ‘আউটকাম হেল্থ’। আগে তার নাম ছিল ‘কনটেক্সট মিডিয়া হেল্থ’।
ঋষির এই সংস্থা চিকিৎসকদের দফতর, চেম্বারে টিভি বসাত। তাতে দেখানো হত বিজ্ঞাপন, যার লক্ষ্য ছিলেন রোগীরা। খুব শীঘ্রই উন্নতি করতে থাকে সংস্থা। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংস্থা হয়ে ওঠে ‘আউটকাম হেল্থ’।
ইয়ং প্রেসিডেন্টস অর্গানাইজ়েশন নামে একটি সংস্থারও পরিচালন সমিতিতে ছিলেন ঋষি। স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ছিল এই সংস্থা। নতুন প্রযুক্তি সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে পরামর্শদানের কাজও করতেন তিনি।
২০১৬ সালে ঋষির মোট সম্পত্তির পরিমাণ হয় ৪০০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩৩ হাজার কোটি ডলার। অভিযোগ, আদতে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ তত ছিল না। ভুয়ো বৃদ্ধি দেখানো হয়েছিল। ২০১৭ সালে শাহ এবং তাঁর সহযোগী ২২ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার ডিভিডেন্ট পকেটে ভরেছিলেন তাঁরা। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা।
২০১৭ সালে সত্যি প্রকাশ্যে আসে। ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে। দাবি করে, ‘আউটকাম হেল্থ’-এ প্রতারণা চলেছে। ঋষির বিরুদ্ধে মামলা করে গোল্ডম্যান স্যাক্স এবং অ্যালফাবেটের মতো সংস্থা।
অভিযোগ, সংস্থার মূলধনে বৃদ্ধি দেখিয়ে শেয়ার বিক্রি করেছেন ঋষিরা। সেই শেয়ার কিনে ঠকেছে অ্যালফাবেটের মতো সংস্থাও। আর লাভ করেছেন ঋষি।
লাভের টাকা দিয়ে নিজের বিমান কেনেন ঋষি এবং তাঁর সহযোগীরা। প্রমোদতরীও কেনেন। বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন তিনি।
পরে আদালতে বিচার চলার সময় ঋষি জানান, নিজের তৈরি সংস্থার ব্যর্থতা নিয়ে লজ্জিত হতেন তিনি। কর্মীদের বলতেন মিথ্যা নথি প্রকাশ করতে। তাঁর কথায়, ‘‘কর্মীদের মিথ্যা বলার অনুমতি দিতাম। ক্লায়েন্টের কাছেও ভুয়ো নথি পেশ করতেন তাঁরা।’’
অ্যাটর্নি জেনারেল নিকোল এম আর্জেন্টিয়েরি সওয়াল করে জানান, ভুয়ো রাজস্ব দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের ধন্দে ফেলেছিলেন ঋষিরা। এটা প্রতারণা। এর পরেই ঋষিকে সাত বছরের সাজা দেয় আমেরিকার আদালত।