প্রাচীনকাল থেকেই অপরাধীদের শাস্তি দিতে বিভিন্ন দেশে নানান অদ্ভুত এবং হাড়হিম করা পন্থার কথা ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দোষীদের নাক কেটে শাস্তি দেওয়ার বিবরণও।
লোককথা অনুযায়ী, প্রাচীন মিশরে এমন এক শহর ছিল যেখানে শাস্তি হিসাবে দোষীদের নাক কেটে দেওয়া হত। তবে এতেই রেহাই মিলত না। নাক কেটে ফেলার পর তাঁদের বন্দি বানিয়েও রাখা হত। শহরের মাঝখানে এক দুর্গে বন্দি করে রাখা হত এই ‘নাক-কাটা’ অপরাধীদের। এই শহরের নাম ছিল রাইনোকোলুরা।
বর্তমান গাজা শহরের কাছে আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে ১৩০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে রাইনোকোলুরা শহরটি তৈরি হয়েছিল।
কথিত আছে, নাক কাটা বন্দিদের অদ্ভুত চেহারার কারণেই গ্রিকরা এই শহরের নাম দিয়েছিলেন রাইনোকোলুরা।
এই শহরে নাকি শাস্তি হিসাবে কারাগারে পাঠানোর আগে দোষীদের নাক কেটে ফেলা হত।
এই কারাগারে নাকি এমন কোনও বন্দি ছিলেন না, যাঁদের নাক আস্ত ছিল। রাইনোকোলুরা শহরটি মূলত সাজাপ্রাপ্তদের বন্দি বানাতেই তৈরি করা হয়েছিল।
কথিত আছে, এক বার এই শহরের চৌহদ্দিতে পা দিলে ফিরে যাওয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন। পুরো শহরই ঘেরা ছিল প্রায় ৬৬ ফুট উঁচু দেওয়াল দিয়ে, যার উপরে পাহারা দিতেন সশস্ত্র রক্ষীরা।
কিন্তু এই কারাগারে দোষীদের নাক কেটে নেওয়ার কারণ ছিল খুব অদ্ভুত। কারা কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল, কোনও বন্দি কারাগারের কড়া নিরাপত্তা পেরিয়ে বাইরে বেরোতে সক্ষম হলেও তাঁদের চেহারার বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য আবার ধরা পড়ে যাবেন।
প্রাচীন ইতিহাসবিদদের মতে, এই শহরে জীবন কাটানো ছিল খুবই কঠিন। খাবার এবং পানীয় দলের সরবরাহ ছিল খুবই পরিমিত। শহর পরিচালনার দায়িত্ব ছিল বন্দিদের উপরেই।
এই মহানগরীতে বসবাসকারী প্রত্যেকেই ছিলেন মার্কামারা অপরাধী।
রাইনোকোলুরা শহর নিয়ে বিভিন্ন কথা প্রচলিত থাকলেও, এই শহরের অস্তিত্বের বিষয়ে সন্দিহান ইতিহাসবিদদের একটা বড় অংশ।
যদিও গ্রিক ইতিহাসবিদ ডিওডোরাস সিকুলাসের মতে, রাইনোকোলুরা শহরটি প্রাচীন মিশর এবং ইজরায়েল সীমান্তের মাঝামাঝি কোনও একটা জায়গায় ছিল।
ডাকাতদের শাস্তি দিতে ইথিওপিয়ার রাজা অ্যাক্টিসানেস এই শহর তৈরি করেছিলেন বলেও ডিওডোরাসের লেখা থেকে জানা যায়।
আরেক গ্রিক ইতিহাসবিদ স্ট্র্যাবো আবার লিখে গিয়েছেন, রাইনোকোলুরা শহরের পত্তন করেন ইথিওপিয়ানরা। মিশর আক্রমণ করতে সুবিধা হবে ভেবে মিশরের সীমান্তে এই শহর তৈরি করেছিলেন ইথিওপিয়ার শাসকরা।
রাইনোকোলুরা শহরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও প্রাচীন মিশরে শাস্তি হিসাবে যে নাক কেটে দেওয়া হত, সেই তথ্য সমর্থন করার প্রচুর প্রমাণ রয়েছে।