প্রথমে সবাই ভেবেছিলেন যুদ্ধ তাড়াতাড়ি থেমে যাবে। রাশিয়ার সঙ্গে পেরে উঠবে না ইউক্রেন।
কিন্তু সেই সব জল্পনায় জল ঢেলে দু’মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেল যুদ্ধ চলছে।
রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলনস্কির নেতৃত্বে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের সেনা। রক্তাক্ত হচ্ছে দু’পক্ষই। মৃত্যু হচ্ছে। তবু লড়াই থামছে না।
যখন প্রথম যুদ্ধ শুরু হয়, সেই সময় প্রায়শই জেলনস্কিকে দেখা যেত চকোলেট রঙের একটি পশমের জ্যাকের পরে রয়েছেন।
যে ভাবে তিনি নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে, অনেক বেশি শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাতে অনেকের কাছেই যেন ‘তারকায়’ পরিণত হয়েছেন জেলনস্কি।
তাঁর সেই ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ডে তহবিল সংগ্রহে নামল ইউক্রেনের দূতাবাস।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়ে এই তহবিল সংগ্রহ শুরু হয়েছে লন্ডনে। সেখানেই বিক্রি হল জেলনস্কির পশমের জ্যাকেট।
১ লক্ষ ১০ হাজার ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকা) মূল্যে বিক্রি হয়েছে সেই সাদামাটা পশমের জ্যাকেট।
এই জ্যাকেটে স্বাক্ষর রয়েছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের। ব্যবহারের চাপও স্পষ্ট।
লন্ডনে অনুষ্ঠিত এই তহবিল সংগ্রহ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘সাহসী ইউক্রেন’।
অনুষ্ঠানে যুদ্ধ চলাকালীন ইউক্রেনবাসীদের নানা সাহসিকতার গল্প শোনাানো হয়।
এই অনুষ্ঠানে জেলনস্কির জ্যাকেটের পাশাপাশি বিক্রি হয় ইউক্রেনে ‘ফার্স্ট লেডি’ ওলেনা জেলেনস্কার উপহার দেওয়া খেলনাও।
যুদ্ধের সময় প্রয়াত চিত্রগ্রাহক ম্যাক্স লেভিনের তোলা ছবিও বিক্রিও হয়েছে এই অনুষ্ঠানে।
এই তহবিল সংগ্রহ কর্মসূচিতে বহু অর্থ উঠেছে। যা ব্যয় হবে ইউক্রেনের বিভিন্ন মানবিক কর্মসূচিতে।
দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অর্থ ব্যয় হবে শিশুদের হাসপাতালের বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয় করতে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি বলেন, ‘‘জেলেনস্কি হলেন আধুনিক সময়ের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য নেতাদের এক জন।’’
তিনি ইউক্রেনের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে বলেন, ‘‘যত দিন আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন হবে, তত দিন আমরা পাশে থাকব।’’
ইউক্রেনের সেনা যতই সাহসিকতার পরিচয় দিক না কেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন নাকি মনে করেন, তাঁর পক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধে পরাজিত হওয়া অসম্ভব!
পুতিন বিশ্বাস করেন, যুদ্ধে কোনও ভাবে রাশিয়ে পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে হলে বরং যুদ্ধের তীব্রতার মাত্রা আগের চেয়ে বাড়াতে হবে।
পুতিন সম্পর্কে এই সব কথা বলেছেন আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ)-র প্রধান।
সিআইএ-র প্রধান বিল বার্নস বলেন, ‘‘রুশ সেনারা কিভ দখল করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ডনবাসের প্রধান যুদ্ধক্ষেত্রগুলিতে এখনও লড়াই চালাচ্ছে। তবে এত কিছুর পরও তাঁর বাহিনী ইউক্রেন সেনাদের হারাতে পারবে বলেই মনে করছেন পুতিন। প্রয়োজনে তিনি যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়াতে পারেন।’’
তবে ইউক্রেনের যুদ্ধ-পরিস্থিতি নিয়ে বার্নস কোনও মূল্যায়ন করেননি। যুদ্ধ কী ভাবে শেষ হতে পারে, তা নিয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করেননি।