দেশের ধনকুবেরদের তালিকায় এ বার ঢুকে পড়লেন প্রয়াত রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার স্ত্রী। আমেরিকার একটি পত্রিকার বিচারে ভারতের ৩০তম ধনী হলেন রেখা ঝুনঝুনওয়ালা।
ধনসম্পত্তির বিচারে প্রতি বছর দেশের সেরা একশো জনের তালিকা প্রকাশ করে ওই পত্রিকাটি। সম্প্রতি সেই তালিকায় প্রয়াত রাকেশকে ছাপিয়ে গিয়েছেন রেখা।
গত বছর ওই তালিকা অনুযায়ী, রাকেশের স্থান ছিল ৩৬তম। তবে চলতি বছরে এই তালিকায় অভিষেকেই রেখা রয়েছেন প্রথম ৩০-এ।
সম্পত্তির নিরিখেও রাকেশকে পিছনে ঠেলে দিয়েছেন রেখা। চলতি বছরের ১৪ অগস্ট প্রয়াত হন রাকেশ। সে সময় তাঁর নিট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
এই মুহূর্তে ৫৯ বছরের রেখার নিট সম্পত্তি ৪৭ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি।
দেশের শেয়ার বাজারের ‘বিগ বুল’ রাকেশের বিনিয়োগ ছিল টাটা মোটরস্, স্টার হেল্থ ইন্সিওরেন্স, অ্যালায়েড ইন্সিওরেন্স থেকে জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থা মেট্রো, তথ্যপ্রযুক্তি ফার্ম অ্যাপটেক, ভিডিয়ো গেম প্রস্তুতকারক সংস্থা নজারা টেকনোলজি-সহ অসংখ্য সংস্থায়।
অনেকের মতে, যে শেয়ারেই বিনিয়োগ করতেন রাকেশ, তাতেই মুনাফা করতেন। এমনকি, লকডাউনের সময়ও লাভের মুখ দেখেছিলেন। রাকেশের পাশাপাশি বিনিয়োগকারী হিসাবে নিজের আলাদা পরিচিতি গড়ে তোলেন রেখাও।
রাকেশ জীবিত থাকাকালীনই এই দম্পতির সবচেয়ে বেশি লাভজনক বিনিয়োগ ছিল টাইটান সংস্থার গয়না ব্যবসায়। আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, ঝুনঝুনওয়ালার মোট বিনিয়োগের এক তৃতীয়াংশ এখানে ঢেলেছিলেন তাঁরা।
চলতি বছর ধনকুবেরদের তালিকায় বেশ কয়েকটি নতুন মুখ দেখা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে নাইকা-র সিইও তথা প্রতিষ্ঠাতা ফাল্গুনী নায়ার ছাড়াও রয়েছেন রেখা।
প্রসঙ্গত, এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন আদানি গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠাতা তথা চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে রয়েছেন শিল্পপতি মুকেশ অম্বানী এবং রাকেশের গুরু বলে পরিচিত রাধাকিশন দমানী।
শেয়ার বাজারে রাকেশের মতোই দূরদর্শী বলে পরিচিত রেখা। উদাহরণ হিসাবে নাগার্জুন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (এনসিসি)-র শেয়ারের কথা বলা যেতে পারে। অতিমারির সময় এই সংস্থার শেয়ার পড়়তির দিকে ছিল। তা সত্ত্বেও আস্থা হারাননি রাকেশ এবং রেখা।
সোমবার পর্যন্ত ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, এনসিসি-র শেয়ারদর ৫২ সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি (শেয়ার প্রতি ৮৪ টাকা) হয়েছে। পড়তির সময়ও যে শেয়ার ধরে রেখেছিলেন রাকেশ এবং রেখা।
বস্তুত, রাকেশের মতো ঘন ঘন শিরোনামে না এলেও দীর্ঘ দিন ধরেই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারী হিসাবে জায়গা করে নিয়েছেন রেখা। অনেকের দাবি, রেখার কাছে এমন ১৯টি সংস্থার শেয়ার রয়েছে, যার আর্থিক মূল্য বিপুল। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর পর্যন্ত ৪টি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি।
শেয়ার বাজারে ‘ভারতের ওয়ারেন বাফেট’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন রাকেশ। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় মোটে ৫,০০০ টাকা শেয়ারে বিনিয়োগের করেছিলেন তিনি। যা ফুলেফেঁপে ৪৬ হাজার কোটিতে পৌঁছয়।
১৯৮৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাকেশের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন রেখা। দম্পতির ৩ সন্তান রয়েছে। ২০০৪ সালের জুনে জন্ম হয় তাঁদের মেয়ে নিষ্ঠার। এর পর আর্যমান এবং আর্যবীর— ২০০৯ সালে যমজ সন্তান আসে তাঁদের ঘরে।
নিজের সাফল্যের সমস্ত কৃতিত্বই রেখাকে দিয়েছিলেন রাকেশ। ৫০তম জন্মদিনে তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘সন্তানদের থেকে আমার কাছে কোনও কিছুই বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। এবং যা-ই হোক না কেন, এ জীবনে অন্য কোনও মহিলাকে রেখার থেকে বেশি ভালবাসতে পারব না।’’