একের পর এক ঝড় উঠছে সূর্যের বুকে। আশঙ্কা প্রকাশ করে এমনটাই জানিয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। গত ১৯ এপ্রিল সৌরঝড়ের সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছিল নাসা। ২০ এপ্রিল তার প্রভাব পড়ে পৃথিবীতে।
তীব্র সৌরঝড়ের কারণে উত্তরের মেরুজ্যোতি (অরোরা) স্বাভাবিকের চেয়ে আরও দক্ষিণে সরে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, গত সপ্তাহের শেষের দিকে সূর্যের ভিতরে একটি বিস্ফোরণের কারণে সৌরঝড় শুরু হয়েছে। যার জেরে প্রায় ৩০ লক্ষ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর দিকে ঝাপটা মারছে প্লাজমা নামের এক জ্বলন্ত গ্যাস। আর সেই কারণেই মেরুজ্যোতিতে এই পরিবর্তন দেখা গিয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের মত।
ইউরোপ এবং এশিয়ার কিছু অংশ জুড়ে এই মেরুজ্যোতি দেখা গিয়েছিল বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আমেরিকার উইসকনসিন, ওয়াশিংটন, কলোরাডো, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ মেক্সিকো, অ্যারিজোনার বাসিন্দারাও এই মেরুজ্যোতির আভা চাক্ষুষ করেন।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সবুজ ঝিলমিলে আভার পরিবর্তে এই মেরুজ্যোতিতে লালচে সবুজ আভা দেখা গিয়েছিল।
কলোরাডোর বোল্ডারে থাকা ‘ন্যাশনাল ওসিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ)’-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর বিল মুরতাঘ বলেন, ‘‘আমি এই সবুজ আভার স্থান পরিবর্তন নিয়ে খুব জটিল ধারণা রাখতে চাই না।’’
বিল আরও জানান বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তবে সোমবার এবং মঙ্গলবারের রাতের আকাশেও দক্ষিণ ডাকোটা এবং আইওয়া থেকে মেরুজ্যোতি দেখা গিয়েছে।
বিলের মতে, উত্তরের মেরুজ্যোতি যত দক্ষিণে সরবে, তত বেশি মানুষ সেই দৃশ্য দেখতে পারবেন।
বিল আরও জানান, বোল্ডারের দূষণের কারণে রবিবার রাতে সেই শহর থেকে এই মেরুজ্যোতি দেখা যায়নি। কিন্তু যে ভাবে প্রতিনিয়ত সৌরঝড়ের পূর্বাভাস শোনা যাচ্ছে, তার ফলে যে কোনও দিন বোল্ডারের বাসিন্দারাও সেই নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে পেতে পারেন বলে দাবি করেছেন বিল।
এনওএএ অনুযায়ী, রবিবারের সৌরঝড় ছিল সূর্যের বুকে ওঠা তৃতীয় বড় ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর দিকে একের পর এক সৌরঝড় ধেয়ে আসতে পারে।
সোমবার এনওএএ আরও জানিয়েছে, রবিবার প্রথমবার নতুন করে তৈরি হওয়া এই ঝড়ের ধাক্কা অনুভব করেছে পৃথিবী।
এই সৌরঝড়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছিল ভারত মহাসাগরের উপর। কিছু ক্ষণের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল বেতার সংযোগ।
বিজ্ঞানীরা সাবধান করেছিলেন এর প্রভাবে পৃথিবীর বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মহাকাশযান অপারেটরদের কাজে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০ এপ্রিল পৃথিবীর উপর প্রভাব ফেলে সূর্যের ঝড়। গরম হলকা এসে লাগে পৃথিবীর বুকে। সেই সৌরঝড়ের প্রাবল্য কমতে না কমতেই আবার নতুন করে পৃথিবীর দিকে সৌরঝড় ধেয়ে আসার আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে নাসা।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এ বারের সৌরঝড় আরও বড় এবং আরও প্রভাবশালী। নতুন সৌরঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়তে পারে।
নাসার দাবি, সৌরঝড়ের সরাসরি প্রভাব পড়তে চলেছে পৃথিবীতে। সৌরঝড়ের প্রভাবে পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে বড়সড় ফাটল ধরতে পারে বলেও দাবি করেছে নাসা। এমনকি, স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে জিপিএস এবং ইন্টারনেট সংযোগও।