চেহারায় একেবারে ছোটখাটো। সাধ্যের মধ্যে মত্তবিত্তদের হাতে গাড়ি তুলে দেওয়ার লক্ষ্যেই তার আবির্ভাব হয়েছিল। তবে জন্মলগ্ন থেকেই তাকে ঘিরে তাড়া করেছে বিতর্ক। রাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে তার জন্মস্থানও পরিবর্তন হয়েছিল। জন্মের পর তেমন সফল হতে পারেনি। এখন তার টিকিও পাওয়া যায় না। ইদানীং, রাস্তায় খুব একটা চলাফেরা করে না সে। তবে নতুন অবতারে সে ফিরে আসতেই পারে। তার নাম টাটা ন্যানো।
টাটা গোষ্ঠীর সাধের গাড়ি এই ন্যানো। শিল্পপতি রতন টাটার নাকি ‘স্বপ্নের গাড়ি’ এটি। এক দশকেরও বেশি সময় আগে দেশে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল এই চারচাকা।
‘এক লাখি’ গাড়ি হিসাবে বাজারে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ন্যানোর। টাটাদের লক্ষ্য ছিল, সাধ্যের মধ্যে সস্তায় যাতে চারচাকার স্বপ্ন দেখতে পারেন মধ্যবিত্তরা। কিন্তু, সেই লক্ষ্যপূরণ করতে গিয়ে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছে টাটাদের।
প্রথমে ঠিক হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুরে গড়ে উঠবে ন্যানো কারখানা। কিন্তু জমিজটে সিঙ্গুরের মাটিতে আর ন্যানোর জন্ম হয়নি। যা ঘিরে বাংলার রাজনীতি তো বটেই, জাতীয় রাজনীতিও আন্দোলিত হয়েছিল।
রাজনৈতিক গোলমালের জেরে সিঙ্গুর থেকে গুজরাতের সানন্দে সরেছিল ন্যানো কারখানা। ২০০৮ সালে শুরু হয়েছিল ন্যানোর যাত্রা।
তবে যেমনটা ভাবা হয়েছিল, তেমনটা ঘটেনি। ন্যানো ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতর তুঙ্গে উঠেছিল। কিন্তু গাড়ির ব্যবসা তেমন লাভজনক হয়নি। ভারতীয় গাড়ি বাজারে তেমন জনপ্রিয়ও হয়ে উঠতে পারেনি এই গাড়ি।
এত কম দামে চারচাকার গাড়ি ভারতের বাজারে আগে আসেনি। তবে সাফল্য না-পাওয়ায় ধীরে ধীরে মন্দার মুখে পড়েছিল ন্যানোর ব্যবসা। রাস্তায় তাই আজকাল খুব একটা দেখাও পাওয়া যায় না এই গাড়ির।
২০১৮ সালে শেষ বার উৎপাদন হয়েছিল এই গাড়ির। তার পর থেকে ন্যানোর যাত্রাপথ থমকে গিয়েছে। তবে ন্যানো নিয়ে জনমানসে উৎসাহের অন্ত নেই। আর সেই কারণেই আবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে ন্যানো।
শোনা যাচ্ছে, একেবারে নতুন অবতারে আবার বাজারে পা রাখতে পারে ন্যানো। যদিও টাটা মোটরসের তরফে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি।
নতুন লুকে ফিরতে পারে টাটা ন্যানো! এই খবর চাউর হতেই গাড়িপ্রেমীরা উচ্ছ্বসিত। কেমন হবে নতুন ন্যানো দেখতে? অনেকেই নিজেদের বিভিন্ন ভাবনার কথা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম শিল্পী নবীন আদিত্য।
নতুন টাটা ন্যানো কেমন দেখতে হতে পারে, তার ছবি প্রকাশ করেছেন নবীন। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে।
দেখতে সেই ন্যানোর মতোই। তবে লুক একেবারে অন্য রকম। যাকে বলে কিনা, ঝাঁ-চকচকে। রয়েছে এলইডি হেডলাইট। গাড়ির মাথায় রয়েছে ট্র্যাক (রুফ ট্র্যাক)।
কাঠামো হবে ন্যানোর আগের মডেলের মতোই। তবে গোটা চেহারার মধ্যে এসইউভি-র ছোঁয়া রয়েছে। দেখে মনে হতে পারে যেন, ছোটখাটো এসইউভি।
আগামী দিনের ন্যানোতে চাকায় সবটাই টেরেন টায়ার রাখা হয়েছে। গাড়িতে দুই দরজা রাখা হয়েছে।
শোনা যাচ্ছে, ইলেক্ট্রিক গাড়ি হিসাবে ন্যানোর প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারে টাটা মোটরস। দেশে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির চাহিদা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। একাধিক ই-গাড়ি তৈরি করেছে টাটা মোটরস। ফলে ন্যানোর পুনর্জন্ম হলে তা বৈদ্যুতিক গাড়ি হতে পারেই বলে মনে করা হচ্ছে।