আইআইটি বম্বের মতো নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ পেলেও সেখানে মন টেকেনি। মাঝপথেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়া ছেড়েছুড়ে অভিনয়ের সুযোগ খুঁজতে শুরু করেন। আপাতত ‘কোটা ফ্যাক্টরি’-তে ঢুকে নজর কাড়ছেন বিহারের সেই অখ্যাত বাসিন্দা রঞ্জন রাজ।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সের বাধা পেরোতে বছর দুয়েক বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল রঞ্জনকে। বিহারের অরওয়াল জেলার তাঁদের পারিবারিক বসতি।
বিহারের স্কুলে পড়ার সময় থেকেই মেধাবী ছাত্র হিসাবে পরিচিতি ছিল তাঁর। দ্বাদশের বার্ষিক পরীক্ষার আগে থেকেই জয়েন্টের বেড়া পেরোতে কঠোর অনুশীলন শুরু করে দিয়েছিলেন রঞ্জন।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রঞ্জনের আশা ছিল, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে মোটা অঙ্কের চাকরি জুটিয়ে সংসারের হাল ফেরাবেন। বছর দুয়েকের চেষ্টায় সে স্বপ্ন সফল হওয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। জয়েন্ট এন্ট্রান্সে সফল হওয়ার পর আইআইটি বম্বে থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পান।
বিহারের ‘ক্ষুদ্র’ পরিসর থেকে আইআইটি বম্বের মতো দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে খানিকটা যেন হকচকিয়ে গিয়েছিলেন রঞ্জন। তাঁর সহপাঠীরা যে এখানে পড়াশোনার বাইরেও অন্য অনেকে শখ লালন করছেন।
রঞ্জনের সহপাঠীদের কেউ গানবাজনা নিতে ব্যস্ত তো কেউ আবার থিয়েটার বা সিনেমায় অভিনয়ের চেষ্টায় ছিলেন। পুঁথিগত শিক্ষার বাইরেও যে অন্য জগৎ রয়েছে এবং তা নিয়ে স্বপ্ন বোনা যায়— চাক্ষুষ করেছিলেন তিনি।
আইআইটি বম্বেতে পড়ার সময় থেকেই এ বার তিনিও অভিনয় শেখার দিকে মন দেন। রঞ্জনের স্বপ্নের পালে হাওয়া দিয়েছিলেন তাঁর মা। ইঞ্জিনিয়ার নন, অভিনেতা হওয়ায় স্বপ্নে বুঁদ ছেলেকে এ পথে এগোতে বাধা দেননি তিনি।
১৯৯৪ সালের ১৮ মে জন্ম রঞ্জনের। তাঁর থেকেও মায়ের স্বপ্ন ছিল, চাকরিজীবী নয়, বড় হয়ে অভিনেতা হোক ছেলে। স্কুলে পড়াশোনার সময় থেকেই ছেলেকে নাটকে যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহ দিতেন।
কলেজে পড়ার সময়ও নাটকে অভিনয়ে ছেদ পড়েনি রঞ্জনের। মূলত মায়ের উৎসাহেই তত দিনে তাতে আগ্রহ জন্মেছে। তবে পরিবারের আরও এক জন রোজগেরে বাড়লে তো সংসারে হাল ফিরতে পারে! সে ভাবনা থেকেই জয়েন্টের প্রস্তুতি শুরু করে দেন রঞ্জন।
পটনার একটি কোচিং ক্লাসে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। স্কুলের পড়ার শেষে সেখানেই জয়েন্টের প্রস্তুতিতে লেগে পড়েছিলেন রঞ্জন। জয়েন্টের ফল বার হতেই খুশির হাওয়া বয়েছিল রঞ্জনদের পরিবারে।
আইআইটি বম্বের ক্যাম্পাসে থাকাকালীন অন্য স্বপ্নের পিছু ধাওয়া করতে শুরু করেন রঞ্জন। বছর দুয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পর তা ছেড়ে দেন। এ বার লক্ষ্য— অভিনয়ের মঞ্চে নাম কামানোর।
নাটকের পাশাপাশি বলিউডি গানের সঙ্গে নাচেও পটু ২৭ বছরের রঞ্জন। সেই সঙ্গে নাটকের চরিত্রে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারেন। এই ‘স্বল্প পুঁজি’ নিয়েই অভিনেতা হওয়ার লক্ষ্যে দৌড় শুরু করেন তিনি।
থিয়েটারের মঞ্চ নয়, অভিনেতা হওয়ার লক্ষ্যে রঞ্জনের পাখির চোখ ছিল বাজারচলতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ওয়েব সিরিজ়গুলি। ২০১৪ সালে ‘ইন্টারভ্যাল ত্রিডি’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে সুযোগ পেয়ে যান।
অভিনেতা হিসাবে কেরিয়ারের গোড়ায় এর পর বেশ কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি করেন রঞ্জন, ‘লটস অফ লভ’, ‘রাজু’, ‘দ্য মনিটাইজ়েশন’-সহ বেশ কয়েকটিতে কাজ পান।
২০১৪ সালেই বলিউডি ছবিতে অভিষেক হয়েছিল রঞ্জনের। তাঁর প্রথম সিনেমা ছিল ‘শুরুয়াত কা ইন্টারভ্যাল’। এর দু’বছর পর টিনু সুরেশ দেশাইয়ের ‘রুস্তম’-এ কাজের সুযোগ জোটে। তবে রঞ্জনের কেরিয়ারে সেই ছোট্ট চরিত্র তেমন লাভের গুড় দিতে পারেনি। সে ছবিটি অক্ষয় কুমারের সিনেমা হয়েই নাম কুড়িয়েছে।
প্রয়াত সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ‘ছিছোরে’-এ নিজেকে প্রমাণের আরও একটা সুযোগ পেয়েছিলেন রঞ্জন। তবে ২০১৯ সালের সে ছবিটিও তাঁর কেরিয়ারকে বিশেষ এগিয়ে দিতে পারেনি। একই কথা বলে চলে আয়ুষ্মান খুরানার সঙ্গে ‘বালা’তে তাঁর কাজের বিষয়েও।
রঞ্জনের অভিনয় জীবনের রেখচিত্র বদলে দিয়েছে ‘কোটা ফ্যাক্টরি’। অনেকের মতে, নেটফ্লিক্সের এই ওয়েব সিরিজ়টি আসলে ‘মোশন এডুকেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা নিতিন বিজয়ের জীবনের উপর ভিত্তি করে অনুপ্রাণিত। আইআইটি এবং মেডিক্যালের পড়ুয়াদের যিনি কোচিং করিয়ে সাফল্য পেয়েছেন।
কোচিং স্কুলের জন্য খ্যাতি রয়েছে রাজস্থানের কোটার। রাঘব সুব্বুর পরিচালনায় সেই থিমকেই ছুঁয়েছে ‘কোটা ফ্যাক্টরি’। নামী কলেজে ঢোকার স্বপ্ন নিয়ে আসা প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়া, প্রবেশিকার পড়াশোনার চাপ, কোচিং ক্লাসকে ঘিরে তাঁদের জীবনের খুঁটিনাটি তুলে ধরে এ সিরিজ়।
‘কোটা ফ্যাক্টরি’-তে বালমুকুন্দ মীনার চরিত্রে খ্যাতির আলোয় এসে পড়েন রঞ্জন। এককালে নিজেও যে জয়েন্টের প্রস্তুতিতে লেগে থাকতেন, সে সব মুহূর্তকে আরও এক বার পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন তিনি।
‘কোটা ফ্যাক্টরি’র দ্বিতীয় মরসুমে তুমুল সাফল্য এসেছে রঞ্জনের। তাঁর এ সাফল্যের রহস্য কী? রঞ্জন বলেন, ‘‘ছোটখাটো চরিত্র হলেও সেগুলির জন্য খুব খেটেছি। এটাই কাজে লেগে গিয়েছে। ফলে চরিত্র ছোট হলেও আমার কাজ নজরে পড়েছে।’’