প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার কেউ নেই! শুধু এ কারণেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বিখ্যাত পরিশুদ্ধ জলের কোম্পানি বিসলেরি।
কোম্পানির মালিক অশীতিপর রমেশ চৌহান অবসর চান। তাঁর উত্তরসূরি এক মাত্র মেয়ে জয়ন্তী চৌহান। তিনি এই ব্যবসার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।
কিন্তু তা সত্ত্বেও কোম্পানি বিক্রির কথা ঘোষণা করেছেন রমেশ চৌহান। কারণ? মেয়ে নাকি বাবাকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি এই ব্যবসায় আগ্রহী নন!
মিনারেল ওয়াটার ছাড়াও একাধিক ঠান্ডা পানীয় ভারতের বাজারে এসেছে রমেশ চৌহানের সৌজন্যে। এবং সেই পণ্যগুলি এখনও বিদেশি ঠান্ডা পানীয়ের কোম্পানিগুলিকে টেক্কা দেয়। সেই সংস্থাই বিক্রির মুখে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, রমেশের ব্র্যান্ড কেনার দৌড়ে একেবারে সামনের সারিতে রয়েছে টাটা গোষ্ঠী। তবে তা এখনও চূড়ান্ত নয়।
বড় কোনও কোম্পানির দায়িত্ব পরিবার সূত্রে উত্তরসূরিরাই নেন। কিন্তু রমেশের কন্যা তার ব্যতিক্রম।
বিসলেরি ইন্টারন্যাশনাল সংস্থার বর্তমান চেয়ারপার্সন রমেশ চৌহানের একমাত্র মেয়ে জয়ন্তী। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে দিল্লি এবং মুম্বইয়ে। পড়াশোনার জন্য কিছু দিন নিউ ইয়র্কেও ছিলেন তিনি।
স্নাতক হওয়ার পর জয়ন্তী লস অ্যাঞ্জেলসের ফ্যাশন ইনস্টিটিউট অফ ডিজ়াইন অ্যান্ড মার্চেন্ডাইজ়িং-এ পড়াশোনা করেন। পরে আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্যাশন স্টাইলিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি।
মাত্র ২৪ বছর বয়সে বাবার সংস্থায় কাজ শুরু করেন জয়ন্তী। কোম্পানির অন্দরে জয়ন্তী পরিচিত জেআরসি নামে। বাবার অধীনে দ্রুত ব্যবসার কাজকর্ম শিখছিলেন। কিন্তু এখন তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এই ব্যবসায় তাঁর আগ্রহ নেই।
কিন্তু কেন? সংস্থার অন্দরের খবর, জয়ন্তী দিল্লির অফিসের কাজকর্মের দেখাশোনা করতেন। বস্তত, কোম্পানির একেবারে নিচুতলার কাজও হাতেকলমে শিখেছেন।
জয়ন্তী দায়িত্ব নিয়ে পরিশ্রুত পানীয় জলের কারখানার সংস্কার করেছেন। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে তাঁরই হস্তক্ষেপে।
এমনকি, সংস্থার অন্দরেও বদল ঘটিয়েছেন জয়ন্তী। সূত্রের খবর, মানবসম্পদ উন্নয়ন থেকে সেলস এবং মার্কেটিং— সব বিভাগকে নতুন করে সাজিয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে কোম্পানির মুম্বইয়ের অফিসেরও ভার নেন জয়ন্তী।
শুধু তাই নয়। মূলত জয়ন্তীর উদ্যোগে বেশ কিছু নতুন পণ্যও বাজারে আসে। জলের কোম্পানি বাজারে আনে হাতশুদ্ধিও। বিসলেরির বিজ্ঞাপনী প্রচারেও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে তাঁর।
সংস্থার ওয়েবসাইট বলছে, পণ্য বিক্রি এবং বিপণনের দায়িত্বে থাকা দলের নেতৃত্বে ছিলেন জয়ন্তী। ব্র্যান্ডের মান এবং নাম দুটোই যাতে উজ্জ্বল হয়, তার সর্বত চেষ্টা করেছেন তিনি।
তার পরেও এমন সংস্থার ভার নিতে কেন নারাজ জয়ন্তী? কেন সংস্থা বিক্রি হচ্ছে? এখানে উঠে আসছে একাধিক তথ্য।
একটি রিপোর্ট বলছে, ২০২৩ অর্থবর্ষের মধ্যে ২২০ কোটি টাকা লাভের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল পরিশুদ্ধ জলের সংস্থা। লক্ষ্য থেকে খুব একটা পিছিয়েও নেই তারা। ২০২০ অর্থবর্ষে কোম্পানির লাভ ছিল ১০০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ৯৫ কোটি টাকা।
কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। মালিকের বয়স এখন ৮২ বছর। শরীর এখন সঙ্গ দিচ্ছে না। বিশাল ব্যবসার ভার আর নিতে পারছেন না তিনি। অন্য দিকে, মেয়েও বাবাকে জানিয়েছেন কোম্পানির পুরো দায়িত্ব নিতে তিনি অপরাগ।
সংবাদ সংস্থাকে চৌহান এটুকুই জানিয়েছেন যে তিনি ব্যবসার ন্যূনতম অংশও নিজের কাছে রাখবেন না। এখন চান অখণ্ড অবসর। জীবনের শেষ সময়টা প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার এবং নানা সেবামূলক কাজের জন্য রাখছেন।