শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ওম রাউত পরিচালিত ‘আদিপুরুষ’। প্রথম ঝলক প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই নিম্নমানের সিজিআই এবং পৌরাণিক চরিত্রের বেশভূষা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন ছবি নির্মাতারা। ছবি মুক্তির পর সিজিআই এবং দুর্বল সংলাপ নিয়ে সমালোচনার জালে আরও জড়িয়ে পড়ে ‘আদিপুরুষ’।
সমাজমাধ্যমে নেটব্যবহারকারীরা ইতিমধ্যেই রামানন্দ সাগরের ‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকের সঙ্গে ‘আদিপুরুষ’-এর তুলনা করেছেন। অধিকাংশের মতে, রামানন্দ পরিচালিত ধারাবাহিকই নাকি সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটির থেকে ঢের ভাল। কেউ কেউ আবার প্রায় চার দশক পুরনো ধারাবাহিক দেখতে শুরু করেছেন।
১৯৮৭ সালে রামানন্দ সাগরের প্রযোজনায় এবং পরিচালনায় দূরদর্শন চ্যানেলে ‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকটি শুরু হয়। ধারাবাহিকের রাম থেকে রাবণ, সকলেই অভিনয় দক্ষতায় মন কেড়েছিলেন দর্শকের। কিন্তু এখন এই তারকারা কী করছেন, কোথায় রয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনুরাগীদের মনে।
‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকে রামের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় অরুণ গোভিলকে। তবে এই ধারাবাহিকে অভিনয় করে নিজের কেরিয়ারে ইতি টানেননি তিনি। তার পরেও বহু ছবি এবং ধারাবাহিকে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন।
তেলুগু, ভোজপুরি, কন্নড় ছবির পাশাপাশি ‘বুক ভরা ভালবাসা’ নামে একটি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন অরুণ। রামের চরিত্রের জন্য তিনি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন যে, ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লব কুশ’ এবং ১৯৯৫ সালের ‘জয় বীর হনুমান’ ধারাবাহিকেও রামের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
‘আশিকি’, ‘পল ছিন’, ‘ক্যায়সে কহুঁ’, ‘গায়ত্রী মহিমা’র মতো হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন অরুণ। সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ‘জুবিলি’ ওয়েব সিরিজ়ে দেখা গিয়েছে অরুণকে।
চলতি বছরের আগস্ট মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে ‘ওহ মাই গড ২’ ছবিটি। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, এই ছবিতে অক্ষয় কুমার এবং পঙ্কজ ত্রিপাঠীর পাশাপাশি অরুণকেও অভিনয় করতে দেখা যাবে। বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, এই ছবিতে রামের চরিত্রে দেখা যাবে অরুণকে।
‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকে সীতার চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও দীপিকা চিখলিয়া তাঁর কেরিয়ার শুরু করেন হিন্দি ছবির মাধ্যমে। ১৯৮৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সুন মেরি লয়লা’ ছবিতে বলি অভিনেতা রাজ কিরণের নায়িকা হিসাবে অভিনয়জগতে পা রাখেন তিনি।
সীতা চরিত্রে অভিনয়ের পর একাধিক হিন্দি, কন্নড়, মালয়ালম, ভোজপুরি, তামিল এবং গুজরাতি ছবিতে অভিনয় করেছেন দীপিকা।
১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আশা ও ভালবাসা’ ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন দীপিকা।
২০১৯ সালে শেষ বার বড় পর্দায় অভিনয় করতে দেখা যায় দীপিকাকে। অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘বালা’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন তাঁকে। ছবিতে ইয়ামি গৌতমের মায়ের চরিত্রে দেখা যায় দীপিকাকে।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, সরোজিনী নাইডুর জীবনের উপর ভিত্তি করে একটি হিন্দি ছবি তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই ছবির একটি চরিত্রে দেখা যেতে পারে দীপিকাকে।
হিন্দি ছবি ‘দ্য নক্সালাইটস’-এ স্মিতা পাতিলের সঙ্গে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৮০ সালে যাত্রা শুরু সুনীল লহরীর। ‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকে লক্ষ্মণের চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি গড়ে ওঠে তাঁর।
‘রামায়ণে’ অভিনয়ের পর হাতেগোনা কয়েকটি হিন্দি ছবিতে দেখা যায় সুনীলকে। ২০১৭ সালে ‘অ্যা ডটার’স টেল পঙ্খ’ ছবিতে শেষ অভিনয় করেছিলেন তিনি।
‘লব কুশ’ ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছিলেন সুনীল। ২০২০ সালে দু’একটি রিয়্যালিটি শোয়ে অতিথি হিসাবে যান তিনি। বর্তমানে অভিনয়জগৎ থেকে দূরে রয়েছেন সুনীল।
‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকে রাবণ চরিত্রে অভিনয়ের আগে একাধিক হিন্দি এবং গুজরাতি ছবিতে দেখা গিয়েছে অরবিন্দ ত্রিবেদীকে। ‘রামায়ণে’ অভিনয়ের পর অভিনয়জগৎ থেকে সরে যান তিনি।
‘রামায়ণ’ মুক্তির এক দশক পর বিরতি নিয়ে আবার অভিনয় শুরু করেন অরবিন্দ। ১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দেশ রে জয়া দাদা পরদেশ জয়া’ নামের একটি গুজরাতি ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। ২০২১ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন অরবিন্দ।
‘রামায়ণে’র হনুমান চরিত্রের উল্লেখ করা হলেই দারা সিংহের কথা মনে আসে দর্শকের। নিখুঁত অভিনয়ের মাধ্যমে ছোট পর্দায় হনুমান চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন দারা।
কুস্তিগির হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন দারা। ‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের আগে অসংখ্য তামিল, পঞ্জাবি এবং হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনা এবং প্রযোজনার কাজও করেছেন তিনি।
হনুমান চরিত্রের জন্য জনপ্রিয়তা লাভের পর বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন দারা। ২০০৭ সালে করিনা কপূর খান এবং শাহিদ কপূর অভিনীত ‘জব উই মেট’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অতা পতা লাপতা’ হিন্দি ছবিতে অতিথিশিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় দারাকে। তার পর আর অভিনয়ের সুযোগ পাননি তিনি। ওই বছর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অভিনেতা।
‘আদিপুরুষ’ ছবিতে যুদ্ধের দৃশ্যে ইন্দ্রজিৎকে যে ভাবে দেখানো হয়েছে তা নিয়ে দর্শক হাসিঠাট্টায় মেতেছেন। এই প্রসঙ্গে ‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকে ইন্দ্রজিতের ভূমিকায় বিজয় অরোরার অভিনয়ের কথাও তুলেছেন দর্শক।
১৯৭২ সালে বলিপাড়ায় পা রেখেছিলেন বিজয়। ‘রামায়ণ’-এর পাশাপাশি ‘বিক্রম অওর বেতাল’ ধারাবাহিকের একাধিক পর্বেও বিজয়ের অভিনয় দেখা গিয়েছে।
শুধুমাত্র হিন্দি ছবিতে অভিনয়ই নয়, হিন্দি এবং গুজরাতি নাটকেও অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন বিজয়। নিজের কেরিয়ারে ১১০টি ছবি এবং ৫০০টি ধারাবাহিকের পর্বে অভিনয় করেছেন তিনি।
২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইন্ডিয়ান বাবু’ নামের হিন্দি ছবিতে শেষ দেখা যায় বিজয়কে। ২০০৭ সালে ৬২ বছর বয়সে পেটের সমস্যায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান অভিনেতা।
রামানন্দ সাগরের ‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকে বিভীষণের ভূমিকায় অভিনয় করেই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের পরিচয় গড়ে তোলেন মুকেশ রাওয়াল। টেলিভিশনের পাশাপাশি বড় পর্দাতেও অভিনয় শুরু করেন তিনি। রাজেশ খন্না এবং ফারাহ নাজ অভিনীত ‘ও ফির আয়েগি’ ছবিতে অভিনয় করেন মুকেশ। ২০১৪ সালে একটি গুজরাতি ছবিতে শেষ দেখা যায় তাঁকে। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে এক ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান অভিনেতা।
বলি অভিনেতা ভারত ভূষণের কন্যা অপরাজিতা ভূষণ। রাবণের স্ত্রী মন্দোদরীর ভূমিকায় অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। কানাঘুষো শোনা যায়, অভিনয়জগৎ থেকে বিরতি নিয়েছেন অপরাজিতা। পুণেতে পরিবার-সহ থাকেন তিনি।