১৯৯৯ সালে দক্ষিণ স্পেনের একটি পরিত্যক্ত খনির ভিতরে আবিষ্কৃত হয় ‘পালপি জিয়োড’। ‘পালপি জিয়োড’ বিশ্বের সব চেয়ে বড় স্ফটিক গুহা।
জিয়োড’ শব্দটির অর্থ বড় বড় পাথরের মধ্যে অবস্থিত গহ্বর, যা স্ফটিক দিয়ে পূর্ণ থাকে।
স্পেনের পালপি (আলমেরিয়া প্রদেশ) শহরের কাছে ‘পালপি জিয়োড’-এর অবস্থান। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে জাভিয়ের গার্সিয়া-গিনি নামে এক গবেষক এই স্ফটিক গুহা উদ্ধার করেন।
এই গুহাটি ৮ মিটার লম্বা, ১.৮ মিটার চওড়া। উচ্চতা ১.৭ মিটার।
পালপি পৌরসভার পিলার দে জারাভিয়া সিসা খনির ৫০ মিটার নীচে এই স্ফটিক গুহা অবস্থিত। এই সিসা খনি ১৮৭৩ সালে আবিষ্কৃত হয় এবং ১৯৬৯ সালে এই খনি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গুহার ভিতরের আস্তরণ সেলেনাইট (জিপসাম) দিয়ে তৈরি। স্ফটিকগুলির স্বচ্ছতা এবং সৌন্দর্যের জন্য এই গুহা বিশেষ নাম কুড়িয়েছে।
কিন্তু ভিতর থেকে কেমন দেখতে এই স্ফটিক গুহা? দেখে নেওয়া যাক তার ছবি।
বিভিন্ন ধরনের খনিজের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় এই বিশেষ গুহা-তে।
প্রথম আবিষ্কৃত হওয়ার পর এই গুহার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন গবেষকরা।
খনির কাছে কাজ করতে গিয়ে হঠাৎই একটি সুড়ঙ্গ দেখতে পান তাঁরা। সেই সুড়ঙ্গ বরাবর কিছু দূর গিয়েই আবিষ্কৃত হয় এই গুহা।
২০১৯ সালে স্ফটিক গুহাকে জনগণের দেখার জন্য খুলে দেওয়া হয়। তার আগে এটির উপর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা চলেছিল।
এই গুহা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মোট ৪ কোটি ১১ লক্ষ টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছিল সরকারের তরফে। কার্বন এবং আর্দ্রতার হাত থেকে এই স্ফটিকগুলিকে রক্ষা করার উদ্দেশেই এই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয়।
আপদকালীন পরিস্থিতিতে এই গুহার ভিতরে ঢোকা এবং বেরনোর জন্য ৪২ মিটার উঁচু একটি সিঁড়িও করা রয়েছে।
এই গুহার ভিতরে ঢুকলে অতীতে এই খনিতে কাজ করা শ্রমিকদের রাবারের জুতো, জ্যাকেট-সহ খনিতে ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দেখা মেলে।
দেখতে পাওয়া যায় শ্রমিকদের সিগারেট এবং মদের বোতলও। এর অনেকগুলিই প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পরে সেগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
এ ছাড়াও এই গুহার দেওয়ালে শ্রমিকদের খোদাই করা কারুকার্যেরও দেখা মেলে।
তবে এই গুহাতে থাকা জিপসিয়াম স্ফটিকগুলির আনুমানিক বয়স কত, তা সঠিক ভাবে আজও জানা যায়নি।
কিছু পরীক্ষার পরে ধারণা করা হয়েছে যে, এই স্ফটিকরগুলির আনুমানিক বয়স ২ লক্ষ বছর।
মনে করা হয় যে, অনেক আগে পুরো এলাকা জলের তলায় ছিল। কোনও ভাবে অগ্নুৎপাতের ফলে এই পাথরগুলিতে ফাটল দেখা দেয়।
এর পরই এই ফাটলগুলির মধ্যে দিয়ে খনিজতে পরিপূর্ণ গরম লাভা প্রবেশ করে। আর এই লাভা ঠান্ডা হওয়ার পরই স্ফটিকগুলি তৈরি হয়।