আগামী সোমবার (১৮ জুলাই) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ। বৃহস্পতিবার হবে গণনা। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু এবং কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ বিরোধী শিবিরের যশবন্ত সিনহার মধ্যে।
লোকসভা এবং রাজ্যসভা সাংসদদের পাশাপাশি ভারতের ২৮টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লি ও পুদুচেরি বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যেরাও ভোট দেবেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে। নয়া কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরে এখনও বিধানসভা গঠিত হয়নি।
লোকসভার নির্বাচিত সদস্য সংখ্যা ৫৪৩। রাজ্যসভার নির্বাচিত সদস্য সংখ্যা ২৩৩। তবে এখন রাজ্যসভায় ৫টি আসন খালি রয়েছে। ৩০টি বিধানসভার মোট বিধায়কের বর্তমান সংখ্যা ৪,১২৩।
দেশের বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে লোকসভা ও রাজ্যসভায় নির্বাচিত প্রত্যেক সাংসদের ভোটমূল্যই সমান— ৭০৮। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যের বিধায়কদের ভোটমূল্যে রয়েছে গুরুতর তারতম্য।
ভোটমূল্যের হিসাবে শীর্ষে উত্তরপ্রদেশ। সে রাজ্যের এক জন বিধায়কের ভোটমূল্য ২০৮। পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেক বিধায়কের ভোটমূল্য ১৫১। সবচেয়ে কম ভোটমূল্য সিকিমের বিধায়কদের। মাত্র ৭!
অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনও প্রার্থী যদি সিকিমের মোট ৩২ জন বিধায়কের সকলেরই ভোট পান, তা হলেও তাঁর ঝুলিতে যাওয়া ভোটের মূল্য হবে ২২৪। উত্তরপ্রদেশের ১ জন বিধায়কের ভোটমূল্যের চেয়ে সামান্য বেশি!
১৯৭১ সালের জনগণনার রিপোর্টকে ভিত্তি করে সাংসদ ও বিধায়কদের ভোটমূল্য নির্ধারিত হয়। ২০২৬ সাল পর্যন্ত ওই জনগণনার ভিত্তিতেই সাংসদ ও বিধায়কদের ভোটের মূল্য নির্ধারিত হবে। তার পর হতে পারে নতুন মূল্যায়ন।
ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে সাংসদ এবং বিধায়কদের সম্মিলিত ভোটমূল্য ১০ লক্ষ ৯৮ হাজার ৭৮২। সাংসদ ও বিধায়কদের সম্মিলিত ভোটমূল্য প্রায় সমান। কয়েকটি আসন খালি থাকায় এ বার মোট ভোটমূল্য ১০ লক্ষ ৮১ হাজার ৯৯১।
বিধায়কদের সম্মিলিত ভোটমূল্য ৫ লক্ষ ৪৯ হাজার ৪৭৪। সাংসদদের সম্মিলিত ভোটমূল্যও সেটাই ধরে নিয়ে ওই সংখ্যাকে মোট সাংসদ সংখ্যা (৭৭৬) দিয়ে ভাগ করা হয়। ভাগফলকে নিকটবর্তী পূর্ণ সংখ্যায় নিয়ে গেলে প্রত্যেক সাংসদের ভোটমূল্য দাঁড়ায় ৭০৮।
রাজ্যওয়াড়ি বিধায়কদের ভোটমূল্য হিসাবের পদ্ধতিটাও অনেকটা একই রকম। কোনও রাজ্যের জনসংখ্যাকে প্রথমে সেই রাজ্যের বিধায়ক সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয়। তার পর সেই ভাগফলকে ১০০০ দিয়ে ভাগ করা হয়। এতে যে সংখ্যা, সেটাই ভোটমূল্যের ভিত্তি।
ভোটমূল্যের সেই ভিত্তি যদি পূর্ণ সংখ্যা হয়, তা হলে সেটাই সেই রাজ্যের প্রত্যেক বিধায়কের ভোটমূল্য। যদি পূর্ণ সংখ্যা না হয়, তা হলে নিকটবর্তী পূর্ণ সংখ্যাটিকেই সেই রাজ্যের প্রত্যেক বিধায়কের ভোটমূল্য ধরা হয়।
১৯৭১ সালে আদমশুমারির হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৪৩ লক্ষ ১২ হাজার ১১। বিধায়ক সংখ্যা ২৯৪। তাই নির্বাচন কমিশন নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেক বিধায়কের ভোটমূল্য হয় ১৫১।
ভোটমূল্যের হিসাবে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু ও ঝাড়খণ্ড। দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের ওই দুই রাজ্যে প্রতি বিধায়কের ভোটমূল্য ১৭৬। তার ঠিক পরেই মহারাষ্ট্র। সেখানে প্রতি বিধায়কের ভোটমূল্য ১৭৫।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে পড়শি রাজ্য বিহার। সেখানে প্রতি বিধায়কের ভোটমূল্য ১৭৩। বিধায়কদের ভোটমূল্যের হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের আগে রয়েছে দক্ষিণের দুই রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ (১৫৯) এবং কেরালাও (১৫২)।
উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির জনসংখ্যা কম হওয়ায় সেখানকার বিধায়কদের ভোটমূল্যও কম। মিজোরাম ও অরুণাচল প্রদেশে ৮, নাগাল্যান্ডে ৯, মেঘালয়ে ১৭, মণিপুরে ১৮, ত্রিপুরায় ২৬। উত্তর-পূর্বের বৃহত্তম রাজ্য অসমে বিধায়ক পিছু ভোটমূল্য ১১৬।
দেশের রাজধানী দিল্লির বিধায়ক পিছু ভোটমূল্য ৫৮, কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরির বিধায়কদের ১৬। গোয়ার ২০। পশ্চিমবঙ্গের আর এক পড়শি রাজ্য ওড়িশায় বিধায়ক পিছু ভোটের মূল্য ১৪৯।