শহরের অভিজাত এলাকায় অভিজাত এক স্পা। সেখানে ফেশিয়াল, বডি মাসাজ, চুল কাটার নামেই চলত ‘অনৈতিক কারবার’। তা জানতে পেরে পুলিশ যখন তল্লাশি চালাতে গেল, ঘটল ভয়ঙ্কর ঘটনা। চার তলা থেকে লাফ মারলেন দুই মহিলা। ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে প্রকাশ, মৃত্যু হয়েছে এক জনের। আহত অন্য জন। তার পরেই মামলা করল পুলিশ। ঢাকার গুলশনের ঘটনা।
বুধবার গুলশনের স্পায়ে হঠাৎ হানা দেয় পুলিশ। কলিংবেল বাজায়। শুনে আতঙ্কে মাথা ঠিক রাখতে পারেননি দুই মহিলা কর্মী। বুঝেছেন, এ বার গ্রেফতার হতে পারেন। তাই ভয়ে দৌড়ে চার তলার ছাদে ওঠেন। তার পর ছাদ থেকে ঝাঁপ দেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এক মহিলার। অন্য জন গুরুতর আহত।
এই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ওই স্পায়ের মালিক হাসানুজ্জামান ওরফে হাসান, তাঁর স্ত্রী-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ওই ফ্ল্যাটের মালিক। এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, স্পায়ের নামে ‘অনৈতিক’ কাজ চলত সেখানে। মধুচক্র চলত বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও হাসান এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে বার বার অভিযোগ উঠেছে। ‘প্রথম আলো’কে পুলিশ জানিয়েছে, একাধিক বার গ্রেফতারও করা হয়েছে তাঁদের। যদিও কিছু দিনের মধ্যে জামিনে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। এর পর ফের শুরু করেন ‘অনৈতিক’ ব্যবসা।
যদিও এ বার গুলশনের ওই স্পায়ে অন্য কারণে গিয়েছিলেন পুলিশ কর্মীরা। ওই এলাকাটি আবাসিক। সেখানে কী ভাবে বাণিজ্যিক সংস্থা চালানো হচ্ছে, তা জানতেই ওই স্পায়ের দরজায় কলিং বেল বাজিয়েছিল পুলিশ। তাতেই বিপত্তি।
গুলশন থানার ওসি ফরমান আলি ‘প্রথম আলো’-কে জানান, লোকলজ্জার ভয়েই লাফিয়ে পড়েছিলেন ওই দুই মহিলা কর্মী। তাতেই মারা গিয়েছেন এক জন।
গুলশন থানার তরফে আরও জানানো হয়, গত দু’মাসে অন্তত চার বার ওই স্পায়ে অভিযান চালায় পুলিশ। এখন স্পায়ের মালিক, তাঁর স্ত্রী ও বাকিদের ধরার চেষ্টা করছে।
এই ঘটনা যদিও প্রথম নয় ঢাকায়। এর আগেও ঢাকার গুলশনের স্পায়ে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। ধরেছিল অন্তত ২৫ জনকে।
২০২২ সালের অক্টোবরে গুলশনের তিনটি স্পায়ে তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ। তার অনেক দিন আগে থেকেই ওই স্পাগুলির উপর নজর ছিল পুলিশের। অনেক দিন ধরেই খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন পুলিশকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত খবর নিশ্চিত হয়।
‘দ্য বেস্ট স্পা’, ‘অপ্পো থাই স্পা’ এবং ‘লোটাস থাই স্পা’য়ের ২৫ জন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সে বার। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ১৯ জন মহিলা।
পুলিশ আধিকারিক মীরাজ হোসেন জানিয়েছিলেন, ওই স্পায়ের কর্মীদের মধুচক্রে নামানো হচ্ছে। বিশেষ সূত্রে এই খবর পেয়েছিলেন তাঁরা। সেই নিয়ে অভিযোগও আসে। তার পরেই তল্লাশি অভিযানে নামে পুলিশ।
অনেক দিন ধরেই ঢাকায় অভিযোগ উঠেছিল যে, শহরের অনেক স্পা মধুচক্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে কাজ করানোর জন্য জোর করে মেয়েদের গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে আসা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। অনেকেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই কাজে নামতে বাধ্য হচ্ছেন। এর পরেই সক্রিয় হয় পুলিশ।
তবে গত বুধবার গুলশনে যা ঘটেছে, তা আগে কখনও ঘটেনি। তাই অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কী ভাবে স্পাগুলি লাইসেন্স পাচ্ছে, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্পায়ের মালিকদের গ্রেফতারের দাবিতে সরব বিভিন্ন মহল।
হাসানের ওই স্পা নিয়ে মুখ খুলেছেন স্থানীয়রাও। ওই ফ্ল্যাটেরই অন্য বাসিন্দারা ‘প্রথম আলো’কে জানিয়েছেন, অনেক দিন ধরেই সন্দেহ হচ্ছিল তাঁদের। তবে ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিদের সঙ্গে হাসানের যোগাযোগ রয়েছে বলে তাঁরা মুখ খুলতে পারেননি।
ওই ফ্ল্যাটের রক্ষীরা জানিয়েছেন, ওই স্পায়ের মালিক ছিলেন ইশরাত নামে এক মহিলা। তিন-চার বছর আগে তাঁর থেকে ভাড়া নিয়েছিলেন হাসান। এর পর স্ত্রী পায়েলকে দিয়ে সেখানে স্পা চালাতেন। রক্ষীরা আরও বলেছেন, সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলত স্পা। রোজ সেখানে ৮ থেকে দশ জন মহিলা যাতায়াত করতেন। কারা আসতেন সেই ফ্ল্যাটে, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।