Donald Trump’s Tariff Effect

ফল-সব্জি, মদ থেকে কফি বা পেট্রল, ট্রাম্পের শুল্ক-খোঁচায় বেশি খরচ করে কী কী কিনতে হতে পারে আমেরিকাবাসীদের?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক চালু করায় আমেরিকার বাজারে দামি হতে চলেছে বহু পণ্য। এখন থেকে বেশি টাকা দিয়ে কী কী কিনতে হবে যুক্তরাষ্ট্রবাসীদের?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:২০
Share:
০১ ১৮
US President Donald Trump

ছাড় দিয়ে পারস্পরিক শুল্ক চালু করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতীয় পণ্যে ২৬ শতাংশ কর ধার্য করেছে তাঁর প্রশাসন। নতুন নিয়মে রাতারাতি মোট ১৮০টি দেশের আমদানি শুল্ক বদলে ফেলেছে ওয়াশিংটন। কিন্তু, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রবাসীর শিরে সংক্রান্তি! নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু জিনিস বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে তাঁদের। ফলে আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতির হার যে বাড়তে পারে, তা বলাই বাহুল্য।

০২ ১৮
Trump's Tariff Effect

ট্রাম্পের ছাড়যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোন জিনিসের দাম চড়া হতে চলেছে, ইতিমধ্যেই মিলেছে তার ইঙ্গিত। তালিকার একেবারে শীর্ষে রয়েছে পোশাক এবং জুতো। এই দুই পণ্য মূলত চিন, ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে ওয়াশিংটন। নতুন নিয়মে সংশ্লিষ্ট তিনটি দেশের পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ, ৪৬ শতাংশ এবং ৩৭ শতাংশ শুল্ক নেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন।

Advertisement
০৩ ১৮
Liquor

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে অবশ্যই থাকবে মদ। আমেরিকার বাজারে স্প্যানিশ ওয়াইন, ফরাসি শ্যাম্পেন এবং জার্মান বিয়ারের দাম বৃদ্ধির প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে পেটি পেটি মদ পাঠায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই জোটের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের উপর ২০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন বর্ষীয়ান রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।

০৪ ১৮

প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগে ইইউ থেকে আমদানি করা মদের কাঁচামাল ও কোহলের উপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমিক দেন ট্রাম্প। যদিও তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ভারত আবার আমেরিকা থেকে আমদানি করে বোরবন হুইস্কি। ১৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে এতে শুল্ক ১০০ শতাংশ করেছে নয়াদিল্লি। নতুন পারস্পরিক শুল্ক নীতিতে এ দেশের বাজারে এই হুইস্কির দাম কমার সম্ভাবনা প্রবল।

০৫ ১৮

বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কফি আমদানিকারী দেশ হল আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্র আরাবিকা এবং রোবাস্টা, এই দু’ধরনের কফি বিদেশ থেকে কিনে থাকে। মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ল্যাটিন আমেরিকা থেকে ৪৮০ কোটি ডলার মূল্যের আনরোস্টেড কফি আমদানি করেছিল ওয়াশিংটন। মূলত ব্রাজ়িল এবং কলম্বিয়া থেকে আমেরিকার বাজারে আসে এই পানীয়।

০৬ ১৮

যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন জানিয়েছে, আমদানি করা কফির ৩৫ শতাংশ আসে ব্রাজিল থেকে। বাকি ২৭ শতাংশ পাঠায় কলম্বিয়া। ল্যাটিন আমেরিকার এই দুই দেশের উপর ছাড় দিয়ে ১০ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক চালু করছেন ট্রাম্প। ফলে মার্কিন বাজারে কফি দামি হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

০৭ ১৮

বিশ্লেষকদের দাবি, নতুন এই শুল্ক নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বাড়তে পারে অপরিশোধিত তেলের দর। কারণ, কানাডা থেকে সর্বাধিক ‘তরল সোনা’ কিনে থাকে ওয়াশিংটন। উত্তরের প্রতিবেশী দেশটির পণ্যের উপর উচ্চ হারে শুল্ক ধার্য করেছেন বর্ষীয়ান রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে আমদানি করা কাঁচা তেলের ৬১ শতাংশই অটোয়া থেকে পেয়েছে আমেরিকা।

০৮ ১৮

নতুন নিয়মে কানাডা থেকে আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের উপর ১০ শতাংশ কর নেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। কিন্তু ট্রাম্প জমানায় অটোয়া-ওয়াশিংটনের সম্পর্কে চিড় ধরেছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে মার্কিন পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে পারে উত্তরের প্রতিবেশী। সে ক্ষেত্রে কানাডা থেকে আমদানি করা পেট্রোপণ্যের উপর শুল্ক আরও বাড়াবে ওয়াশিংটন। তখন পেট্রল, ডিজ়েল এবং বিমান-জ্বালানির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে বলে আশঙ্কা।

০৯ ১৮

যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানির দর বৃদ্ধি পেলে পরিবহণ খরচ আকাশ ছোঁয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বেলাগাম হতে পারে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার। এ ছাড়া ট্রাম্পের নয়া নীতিতে আমেরিকায় বাড়বে গাড়ির দাম। কারণ আমদানি করা গাড়ি এবং গাড়ির যন্ত্রাংশের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি।

১০ ১৮

সংবাদ সংস্থা সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর আমেরিকার কারখানায় উৎপাদিত ১ কোটি ২ লক্ষ গাড়ির অধিকাংশ যন্ত্রাংশ এসেছে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে। ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক নীতিতে এতে বড় প্রভাব পড়তে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর্থিক সমীক্ষক সংস্থা ‘অ্যান্ডারসন ইকোনমিক গ্রুপ’ তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, মার্কিন বাজারে গাড়ির দাম ২,৫০০ ডলার থেকে ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

১১ ১৮

সমীক্ষকদের অনুমান, নতুন নিয়ে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থাগুলির তালিকায় প্রথমেই থাকবে অডি, বিএমডব্লিউ, জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভার, মার্সিডিজ-বেন্‌জ়, জেনেসিস এবং লেক্সাসের নাম। এর মধ্যে জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভার ভারতের টাটা গোষ্ঠীর সংস্থা। আগামী দিনে আমেরিকায় বিলাসবহুল সেডান এবং ‘স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল’ বা এসইউভির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।

১২ ১৮

এ ছাড়া মেক্সিকো থেকে বিপুল পরিমাণে অ্যাভোকাডো (বিশেষ এক ধরনের ফল) আমদানি করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি চালু হতেই এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে মার্কিন কৃষি বিভাগ। দফতরের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মেক্সিকান ফল এবং সব্জির উপর শুল্ক আরোপের ফলে ঘরোয়া বাজারে চড়া দাম দিয়ে এগুলি কিনতে হবে সাধারণ আমেরিকাবাসীকে।

১৩ ১৮

চলতি বছরের ২ এপ্রিল রাজধানী ওয়াশিংটনের ঐতিহ্যশালী ‘শ্বেত প্রাসাদ’-এর (পড়ুন হোয়াইট হাউস) গোলাপ বাগানে দাঁড়িয়ে ছাড় যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক চালুর ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বার পারস্পরিক শুল্কনীতি চালু করার কথা বলেন তিনি। এর পর মার্কিন পার্লামেন্ট ‘কংগ্রেস’-এ ভাষণ দেওয়ার সময়ে বিষয়টির উল্লেখ করতে শোনা যায় তাঁকে।

১৪ ১৮

ওয়াশিংটন অবশ্য জানিয়েছে, ছাড়যুক্ত পারস্পরিক শুল্কগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সমস্ত পণ্যের উপর ১০ শতাংশ বেস করের অতিরিক্ত হিসাবে ধার্য করা হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলাদা আলাদা শিল্পের ক্ষেত্রে কী ভাবে ছাড়যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক নীতি কার্যকর করবেন, তা স্পষ্ট করেনি যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।

১৫ ১৮

নতুন নিয়ম চালু করার মুহূর্তে আলাদা করে ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথা বলেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লির নীতি খুবই কঠিন। কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী এখানে এসেছিলেন। তিনি আমার দুর্দান্ত বন্ধু। আমি তাঁকে বলি, বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও আপনি আমাদের সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করছেন না। মার্কিন পণ্যের উপর ভারত ৫২ শতাংশ শুল্ক নিয়ে থাকে। আমরা সেখানে ২৬ শতাংশ নেব, অর্থাৎ অর্ধেক।’’

১৬ ১৮

ভারতের সমস্ত প্রতিবেশী দেশের উপর বেশি হারে শুল্ক আরোপ করেছেন বর্ষীয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ বার থেকে চিনা পণ্যে ৩৪ শতাংশ কর নেবে আমেরিকা। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে শুল্কের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২৯ ও ৩৭ শতাংশ। একই ভাবে নতুন নিয়মে শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ শুল্ক নেবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।

১৭ ১৮

ব্রিটেন, ব্রাজ়িল, সিঙ্গাপুর, চিলি, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক ও কলম্বিয়া— এই সাতটি দেশের ক্ষেত্রেও ছাড়যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক ১০ শতাংশ ধার্য করেছে ট্রাম্প প্রশাসন, যা সর্বনিম্ন। আমেরিকার ‘অভিন্নহৃদয় বন্ধু’ ইজ়রায়েলের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে শুল্ক দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশ। সম পরিমাণ শুল্ক দিতে হবে ফিলিপিন্সকেও। তাইওয়ান এবং ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে এটি যথাক্রমে ৪৬ ও ৩২ শতাংশ।

১৮ ১৮

নতুন নিয়ম চালু করার সময়ে ট্রাম্প বলেন, ‘‘অনেক দিক ধরে অন্যান্য দেশ আমাদের দুর্বল নিয়মকানুনের সুযোগ নিয়ে আমেরিকাকে লুট করে চলেছে। কিন্তু আর নয়। ২ এপ্রিল চিরকাল ‘মুক্তি দিবস’ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আমরা এখন সেই দেশগুলির উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করব।’’

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement