কুকুরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের সমীকরণ দীর্ঘ দিন ধরে চর্চিত। কুকুরকেই সবচেয়ে প্রভুভক্ত প্রাণী বলা হয়। তার প্রমাণ মিলেছে আদিম যুগেও। মনে করা হয়, পশুদের মধ্যে কুকুরই প্রথম মানুষের পোষ মেনেছিল।
অনেকেই অনেক রকম কুকুর পোষেন। পিটবুল, রটওয়েলার, হাস্কি, ডোবারম্যান— চারদিকে পোষ্যের ছড়াছড়ি। পোষ্যের হাতে মালিকের প্রাণ বেঁচেছে, এমন নজিরও বিরল নয়।
তবে এ বারের কাহিনি কিছুটা অন্য রকম। মনিবের প্রাণ অবশ্য এ ক্ষেত্রেও পোষ্যের গুণেই বেঁচে গিয়েছে। তবে তার ধরনটা গিয়েছে বদলে।
এই কাহিনির নায়ক সাত মাস বয়সি এক বুলডগ। তার মালিকের বয়স ৬৪ বছর। বৃদ্ধের পায়ের আঙুল কামড়ে ছিঁড়ে ফেলেছে পোষা সেই কুকুরছানা।
বুলডগ সাধারণত খুব একটা হিংস্র কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকে না। আপাতনিরীহ এই কুকুরছানাটি ব্রিটেনের কেমব্রিজ শহরের বাসিন্দা ডেভিড লিন্ডসের জীবনে দুর্বিষহ যন্ত্রণা ডেকে আনতে পারত।
বাড়িতে সোফার উপরে গা এলিয়ে ঘুমিয়েছিলেন ডেভিড। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন। আদরের পোষ্য কখন যে গুটি গুটি পায়ে এসে তাঁর পায়ের কাছে দাঁড়িয়েছে, টের পাননি বৃদ্ধ।
হঠাৎ তাঁর ঘুম ভেঙে যায় স্ত্রীর চিৎকারে। ধড়ফড় করে সোফার উপর উঠে বসেন ডেভিড। নীচের দিকে তাকিয়ে যে দৃশ্য দেখেন, তাতে তাঁর চোখ কপালে ওঠার জোগাড়।
ডেভিড দেখেন, তাঁর একটি পায়ের বুড়ো আঙুল থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসছে। আঙুলের নখও গিয়েছে উপড়ে। সার্বিক ভাবে আঙুলটিকে দেখে মনে হচ্ছে, সেটি থেঁতলে গিয়েছে।
ডেভিড বুঝতে পারেন, আদরের পোষ্যই এই কাজ করেছে। ধারালো দাঁত বসিয়ে বুড়ো আঙুলের হাড় চিবিয়েছে সে। মাংসের হাড়ের সঙ্গে মনিবের পায়ের হাড়ের তেমন কোনও তফাত করেনি।
অথচ, ডেভিড তাঁর থেঁতলে যাওয়া বুড়ো আঙুলটির জন্য কোনও ব্যথা বা জ্বালা অনুভব করেননি। রক্ত বেরোলেও ওই আঙুলে যেন কিছুই হয়নি। এমনকি, শুধু ব্যথা নয়, পায়ের ওই আঙুলটিতে আর কোনও অনুভূতিই পাচ্ছিলেন না ডেভিড।
ডেভিডকে উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, তাঁর বুড়ো আঙুলটির হাড়ে চিড় ধরে গিয়েছে। বুলডগের কামড়েই এমনটা হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
কিন্তু কেন আঙুল থেঁতলে যাওয়ার পরেও ব্যথা পেলেন না বৃদ্ধ? ঘুমের মধ্যে কুকুর তাঁর আঙুল চিবিয়ে চলল, তিনি কেন টেরও পেলেন না? আর কী ভাবেই বা বাঁচল তাঁর প্রাণ?
চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানান, বৃদ্ধের পায়ের ওই অংশে দু’টি ধমনী বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেখান দিয়ে কোনও রকম রক্ত চলাচল করছিল না। সেই কারণেই তাঁর পা কিছু সময়ের জন্য অবশ হয়ে পড়েছিল।
অনুভূতি না থাকায় পায়ের এই সমস্যার কথা বুঝতেও পারেননি বৃদ্ধ। চিকিৎসকেরা জানান, কম জায়গা জুড়ে হওয়ায় চট করে এই অবশ ভাব নজরে আসত না। আর এই অবস্থায় বৃদ্ধের পা যদি বিনা চিকিৎসায় বেশি দিন পড়ে থাকতেন, তবে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে সম্পূর্ণ পা কেটে বাদ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি হতে পারত। হতে পারত মৃত্যুও।
পা কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করলেও পোষ্যের উপর তাই রাগ নেই ডেভিডের। নিজের কাছেই তাকে রাখতে চান, আরও যত্নে বড় করতে চান। কারণ, সে না থাকলে পা যে অবশ হয়ে পড়ে আছে, তা টেরই পেতেন না তিনি।
হাসপাতালে ন’দিন থাকতে হয়েছে ডেভিডকে। তাঁর কথায়, ‘‘এর আগে কখনও আমি বুলডগ পুষিনি। আমাকে কামড়ে ও আমার উপকার করেছে। ওকে বাড়িতেই রাখব।’’
শুধু তাই নয়, মজার ছলে চিকিৎসকদের ডেভিড জানিয়েছেন, তাঁর পায়ের ওই আঙুলটি যদি আর ঠিক করা না যায়, তবে তা কেটে বাদ দিয়ে দিতে। প্রিয় পোষ্যের জন্য তা-ও সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চান তিনি।