পরনে কালো অন্তর্বাস, ছোট স্কার্ট। অন্তর্বাস থেকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে যৌবন। চোখে ধাঁধা লাগাচ্ছে কালো কেশরাশি। সমাজমাধ্যমে এই রূপেই প্রথম ধরা দিয়েছিলেন ক্লদিয়া। তার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে সমাজমাধ্যমে।
‘১৯ বছর বয়সে’ই সমাজমাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ক্লদিয়া। তাঁর রূপে মুগ্ধ ভক্তগণ প্রতিনিয়ত সমাজমাধ্যমে তাঁর ছবি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁর সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়ার আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সমাজমাধ্যমে কাটাচ্ছেন।
ক্লদিয়ার রূপে অনেকে এমনই মোহিত যে, তাঁর নগ্ন ছবি পেতেও হাজার হাজার টাকা খরচ করতেও রাজি অনেক পুরুষ।
কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত উন্মাদনা, এত পাগলামি, তিনি নিজে কি জানেন তাঁর জনপ্রিয়তার কথা? সত্যি বলতে না। তাঁর পক্ষে জানা সম্ভবই নয়। কারণ ক্লদিয়া আদৌ রক্তমাংসের কোনও মানুষ না!
ক্লদিয়া এআই বা ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’-এর সাহায্যে তৈরি এক নারীচরিত্র। তাঁকে এতটাই যত্ন করে বানানো হয়েছে যে, দেখলে রক্তমাংসের মানুষ ছাড়া অন্য কিছু মনে হয় না।
ক্লদিয়ার ‘জন্ম’ দু’জন কম্পিউটার সায়েন্স পড়ুয়ার হাত ধরে। ওই দুই পড়ুয়ার চেষ্টাতেই যেন ক্লদিয়া রক্তমাংসের এক অপরূপ মানবী হয়ে উঠেছেন।
ক্লদিয়ার স্রষ্টারা সংবাদমাধ্যম ‘রোলিং স্টোন’কে জানান, তাঁরা ক্লদিয়ার ছবি বিক্রি করতে পারেন কি না, তা দেখার জন্য সমাজমাধ্যমে ক্লদিয়ার নামে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিলেন।
প্রাথমিক ভাবে ক্লদিয়ার কয়েকটি লাস্যময়ী ছবি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে আনেন ওই দুই পড়ুয়া। তাঁরা দেখেন, ওই অ্যাকাউন্টে অনেকে মেসেজ করে আরও ছবি পাঠানোর কথা বলছেন। এমনকি, আরও ছবি পেতে অনেকে টাকা পাঠানোর প্রস্তাবও দিচ্ছেন।
সেই মতো ক্লদিয়ার আরও ছবি বানিয়ে এবং তা বিক্রি করে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় করেন দুই পড়ুয়া।
এর পর ওই অ্যাকাউন্টে ক্লদিয়ার নগ্ন ছবি পাঠানোর আবেদন জানান অনেক পুরুষ। ছবির পরিবর্তে বহু টাকার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা ক্লদিয়ার ছবিতে অনেকে মন্তব্যও করেন।
এর পরই টনক নড়ে ক্লদিয়ার দুই স্রষ্টার। প্রকাশ্যে আনেন ক্লদিয়ার আসল পরিচয়। তাঁরা ওই অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করে লেখেন, “আক্ষরিক অর্থেই ক্লদিয়া এআই সৃষ্ট একটি কাল্পনিক চরিত্র। কেউ যদি এআই নিয়ে কাজ করেন তা হলে আপনারা অবশ্যই বিষয়টি বুঝতে পারবেন। আপনাদের আশায় জল ঢালার জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।’’
এই পোস্টের পর অনেকেই সমাজমাধ্যমে খোলাখুলি দুঃখপ্রকাশ করেছেন। ক্লদিয়ার সত্যি জেনে তাঁদের মন ভেঙে গিয়েছে বলেও অনেকে জানিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানিয়েছে, ‘স্টেবিলিটি এআই’ লন্ডনভিত্তিক একটি ‘স্টার্ট আপ’ সংস্থা। এই সংস্থা এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করেছে যা এআই ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফিক, অশ্লীল বা আপত্তিকর ছবি তৈরিতে বাধা দেয়।
তবে ‘এআই ইমেজ টুল’ সহজে উপলব্ধ। যে কেউ এটি ডাউনলোড করতে পারেন। তাই এটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা বা অশ্লীল ছবি তৈরি বন্ধ অনেক সময়ই সম্ভব হয় না।
এমন অনেক সংস্থা রয়েছে যারা নিষিদ্ধ হওয়ার আগে এআই ব্যবহার করে নগ্ন ছবি তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেছে।
আর এআই ব্যবহার করে নগ্ন ছবি তৈরির প্রবণতা এতই বেড়েছে যে, এআইকে ভাল কাজে ব্যবহার করতে চান এমন মানুষদের আশঙ্কা বেড়েছে।
এআই ব্যবহার করে নগ্ন ছবি তৈরির রমরমার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিগত ভাবে ঠিক কি না, সে প্রশ্নও ওঠে।