শীতকালীন অধিবেশনে লোকসভায় ‘রংবাজি’ করেছেন চার হানাদার। তবে এর পরিকল্পনা ছকা হয়ে গিয়েছিল বাদল অধিবেশনের সময়েই।
মে মাসে দরজা খুলেছিল নতুন সংসদ ভবনের। তার পরে গত জুলাই-অগস্টে সেখানে বসে বাদল অধিবেশন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সেই সময়েই দিল্লি এসেছিলেন সংসদ হানার চার হানাদারের এক জন।
দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, ৯ মাস আগে এই সংসদ হানার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেছিলেন হানাদারেরা। আর জুলাই মাসে নতুন সংসদ ভবনের সব কিছু সরেজমিনে দেখে গিয়েছিলেন মনোরঞ্জন ডি নামের এক হানাদার।
বুধবারের হানার ঘটনায় নতুন সংসদ ভবনের বেশ কিছু নিরাপত্তা জনিত পরিবর্তনকে দায়ী করছেন অনেকেই।
কেউ বলছেন পুরনো সংসদ ভবনের তুলনায় নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা অনেক কম থাকে নতুন সংসদ ভবনে। সেটাই বাড়তি সুবিধা করে দিয়েছে হানাদারদের।
আবার এমনও অনেকে বলছেন যে, নতুন সংসদ ভবনে দর্শকদের বসার আসনের সঙ্গে সাংসদদের বসার জায়গার দূরত্ব বেশি নয়। দর্শকদের জন্য নির্ধারিত গ্যালারি অনেকটাই নিচুতে। সেখান থেকে লোকসভা বা রাজ্যসভার অধিবেশন কক্ষের মেঝেয় লাফ দিয়ে নামা বড় একটা কঠিন নয়।
গ্যালারির এই উচ্চতা পুরনো সংসদ ভবনে ছিল অনেকটাই বেশি। নতুনটিতে উচ্চতাগত বদল বুধবারের ঘটনায় হানাদারদের কাজ সহজ করেছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরাও। কারণ এই গ্যালারি থেকেই লাফ দিয়ে নীচে নেমেছিলেন দুই হানাদার।
এ ছাড়াও সংসদে প্রবেশকারীদের জুতো পরীক্ষা না করার বিষয়টিরও উল্লেখ করছেন অনেকে।
সংসদ ভবনে জুতোর মধ্যে রংবোমা নিয়ে ভিতরে ঢুকেছিলেন দুই হানাদার সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি। তদন্তকারীদের অনুমান সংসদে যে জুতো পরীক্ষা করা হয় না তা আগে থেকেই জেনে গিয়েছিলেন তাঁরা।
জুলাই মাসে এই মনোরঞ্জনই এসেছিলেন দিল্লিতে রেকি করতে। সংসদ ভবনের নিরাপত্তাজনিত ফাঁকফোকর তিনিই দেখে গিয়েছিলেন সে বার। সেই অনুযায়ী সাজিয়েছিলেন পরিকল্পনা। তবে সব কাজ যে পরিকল্পনা মেনে হয়েছিল, তা-ও নয়।
বুধবার সংসদে হানা দেওয়ার ঘটনায় দিল্লি পুলিশ যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, সংসদে হানার তারিখটাই নাকি বদলে গিয়েছিল শেষ মুহূর্তে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঐতিহাসিক ১৩ ডিসেম্বরে সংসদে হানার পরিকল্পনা ছিলই না হানাদারদের। তাঁরা গোটা ঘটনাটি পরিকল্পনা করেছিলেন অন্য দিন।
২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর জঙ্গি হামলা হয়েছিল সংসদে। পাঁচ সশস্ত্র জঙ্গি ঢুকে পড়েছিল সংসদ ভবনের ভিতরে। তাদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল এক সাধারণ নাগরিক-সহ মোট ৭ জনের। পরে অবশ্য মারা যায় ওই পাঁচ জঙ্গিও।
সংসদে হামলার সেই কালো দিনের কথা ভেবে যদিও সংসদ হানার পরিকল্পনা করেননি হানাদারেরা। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে, হানাদারদের সংসদ অভিযানের কথা ছিল বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে।
নেহাতই পরিস্থিতির ফেরে বদলে যায় দিন। কারণ নির্দিষ্ট দিনে সংসদে প্রবেশাধিকার পাননি মনোরঞ্জন ডি, সাগর শর্মারা।
গ্যালারির প্রবেশপত্র জোগাড়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মনোরঞ্জনকেই। কথা ছিল তিনি মাইসুরুর সাংসদ প্রতাপ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই প্রবেশপত্র জোগাড় করবেন।
দিন কয়েক আগেই প্রতাপের ব্যক্তিগত সচিবের সঙ্গে কথা হয় মনোরঞ্জনের। তাঁর কাছে সংসদে ঢোকার জন্য ১৪ ডিসেম্বরের প্রবেশপত্র চান তিনি। কিন্তু চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার অর্থাৎ সংসদে হানার ঠিক আগের দিন মনোরঞ্জনকে ডেকে প্রদীপের সচিব জানিয়ে দেন, ১৪ ডিসেম্বরের প্রবেশপত্র পাওয়া যায়নি। তার বদলে তাদের জন্য ১৩ ডিসেম্বরের প্রবেশপত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফলে আচমকাই বদলাতে হয় সমস্ত পরিকল্পনা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত পরিকল্পনা নতুন করে ছকে বুধবার জুতোর মধ্যে রংবোমা নিয়ে সংসদে ঢোকেন মনোরঞ্জনেরা।