রাস্কিন বন্ড রচিত উপন্যাসে মাঝেমধ্যেই উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক দৃশ্য ফুটে ওঠে। কোনও কোনও সময় পরি টিব্বা বলে একটি পাহাড়ি এলাকার উল্লেখও থাকে তাঁর কলমে। কিন্তু এই জায়গার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ভয়ঙ্কর কাহিনি। সন্ধ্যার পর নাকি এলাকাটি এড়িয়ে চলেন স্থানীয়েরাও।
উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূন থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা পথ অতিক্রম করে পৌঁছতে হয় পরি টিব্বায়। এখানকার সৌন্দর্য এতই অপরূপ যে, পাহাড়ি পথ ধরে হেঁটে যেতে দুর্দান্ত লাগে। দিনের আলোয় এখানে যেতে কোনও রকম বাধা না থাকলেও সন্ধ্যা নামতেই পরি টিব্বা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয় পর্যটকদের।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, সন্ধ্যা নামতেই এক যুগলের ‘আত্মা’ পরি টিব্বা এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। সেই ভয়েই নাকি ওই এলাকা এড়িয়ে চলেন স্থানীয়েরা।
পরি টিব্বা এলাকাটি খুব একটা জনবহুল নয়। বহু বছর আগে সেখানে নিজেদের মতো সময় কাটাতে গিয়েছিলেন এক যুগল। সেখানে পৌঁছে সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যান তাঁরা।
স্থানীয়দের দাবি, পরি টিব্বায় অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর সময় যুগলের উপর হঠাৎ বাজ পড়ে। তার পরেই নাকি ঘটনাস্থল থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তাঁরা।
মৃত্যুর কয়েক দিন পর যুগলের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় পরি টিব্বার পাহাড়ি জঙ্গল থেকে। বাজ পড়ে মৃত্যু হওয়ার ফলে তাঁদের দু’জনের দেহই সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছিল বলে দাবি স্থানীয়দের।
ঘটনার পর নাকি সন্ধ্যা নামলেই পরি টিব্বার জঙ্গল থেকে মাঝেমাঝে অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসে। স্থানীয়দের দাবি, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কারণে যুগলের ‘আত্মা’ শান্তি পায়নি। তাই জঙ্গলের ভিতরে এখনও ঘুরে বেড়ায় তাঁদের আত্মা।
পরি টিব্বার জঙ্গলে রাতের অন্ধকারে নানা রকম অলৌকিক কাজকর্ম হয় বলেও ধারণা স্থানীয়দের। এই জঙ্গলের গাছের ঘনত্ব অনেকটাই বেশি। পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেলে অনেক গাছের উপর ছাই রঙের দাগ দেখতে পাওয়া যায়।
আবার কোনও কোনও গাছে নাকি কালো রঙের অদ্ভুত দাগও লক্ষ করা যায়। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, যুগলের আত্মার উপস্থিতির প্রভাবেই গাছে এই ধরনের দাগের উৎপত্তি হয়েছে।
পরি টিব্বা এলাকাটি অনেকটাই উঁচু হওয়ায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হলে গাছের উপরেই অধিকাংশ বাজ পড়ে। বাজ পড়ার কারণে গাছ পুড়ে গিয়ে ছাই বা কালো বর্ণ ধারণ করে বলে মনে করেন স্থানীয়দের অনেকে।
পরি টিব্বা এলাকায় হাতেগোনা যে কয়েকটি বাড়ি রয়েছে সে বাড়িগুলিও নাকি পরিত্যক্ত। এমনকি সন্ধ্যার দিকে ওই এলাকায় ‘প্রেতের উপদ্রব’ হয় বলেও দাবি করেছেন স্থানীয়দের একাংশ।
তবে যুগলের মৃত্যুর পর তাঁদের দেহ কোথায় নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল, আবার কোথা থেকে তাঁদের দেহ হাজির হল, সেই রহস্যের সমাধান হয়নি এখনও।
যে পর্যটকেরা নির্জন স্থানে ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন তাঁদের জন্য পরি টিব্বা আদর্শ পর্যটনস্থল হলেও সন্ধ্যার পর পাহাড়ি জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়াই নিরাপদ মনে করেন তাঁরা।