আর ক’দিন বাদেই টুইটারের সিইও হিসাবে এক বছর পূর্ণ হত ভারতের পরাগ আগরওয়ালের। কিন্তু তার আগেই তাঁকে ছাঁটাই করে দেওয়া হল। বৃহস্পতিবার টুইটার অধিগ্রহণ করেছেন টেসলাকর্তা তথা বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের ইলন মাস্ক। ‘মাইক্রো ব্লগিং সাইট’-এর মালিকানা হাতে পাওয়ার পরই পরাগকে সিইও পদ থেকে ছেঁটে ফেলেছেন ইলন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে টুইটার কেনার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন মাস্ক। তার পর থেকেই জল্পনা চলছিল, মাস্কের হাতে টুইটারের মালিকানা এলে, অনেককেই তিনি ছাঁটাই করতে পারেন। এমনকি, টুইটারের পরিচালনায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের নিয়ে মাস্কের অসন্তোষের কথাও জানা গিয়েছিল। এই আবহে পরাগকে বরখাস্ত করার চর্চা তখন থেকেই চলছিল।
টুইটারে পরাগের উত্থান ছিল দেখার মতো। ২০১১ সালে এই সংস্থায় যোগ দেওয়ার আগে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত ছিলেন পরাগ। সেই সময় সংস্থায় হাজার জনেরও কম কর্মী ছিলেন।
কয়েক বছরের মধ্যেই ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে বড় লাফ দেন পরাগ। সংস্থার ‘চিফ টেকনোলজি অফিসার’ (সিটিও) পদে নিযুক্ত হন তিনি।
এর পর গত বছরের নভেম্বরে টুইটারের সিইও হিসাবে পদোন্নতি ঘটে পরাগের। সিইও হিসাবে বার্ষিক ১০ লক্ষ ডলার ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি টুইটারের শেয়ার বাবদ পরাগ পাবেন সওয়া কোটি ডলার।
টুইটারের সঙ্গে দীর্ঘ যাত্রাপথের শরিক পরাগকে রাতারাতি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এর জন্য অনেক টাকা দিতে হবে মাস্ককে।
গবেষণা সংস্থা ‘ইক্যুইলার’ জানিয়েছে, মালিকানা বদলের ১২ মাসের মধ্যে যদি পরাগকে বরখাস্ত করা হয়, তা হলে প্রায় ৪ কোটি ২০ লক্ষ ডলার দিতে হবে তাঁকে। ভারতীয় মুদ্রায় যার অঙ্ক ৩৪৫ কোটি টাকারও বেশি।
পরাগের কেরিয়ারের সাফল্য রীতিমতো চোখধাঁধানো। কখনওই তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৮৪ সালের ২১ মে রাজস্থানের আজমেঢ়ে জন্ম পরাগের।
পরাগের বাবা ছিলেন ‘ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যাটোমিক এনার্জি’ বিভাগের শীর্ষ আধিকারিক। মা অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা। ২০০১ সালে মুম্বইয়ের ‘অ্যাটোমিক এনার্জি জুনিয়র’ কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হন পরাগ।
ওই বছরই তুরস্কে ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে’ স্বর্ণপদক পান পরাগ। এর পর ২০০৫ সালে আইআইটি বম্বে থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিটেক করেন।
আইআইটি বম্বের পর পরাগের গন্তব্য ছিল স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পিএইচডি করেন।
স্ট্যানফোর্ডে পিএইচডি সম্পূর্ণ করার পরই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে টুইটারে যোগ দেন পরাগ। সেই সফর বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর আচমকাই শেষ হল।
পরাগের দুই সন্তান রয়েছে। তাঁর স্ত্রীর নাম বিনীতা আগরওয়াল। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার পর টুইটারের সিইও হিসাবে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলেন পরাগ।
পরাগের সম্পত্তির পরিমাণ আকাশছোঁয়া। সংবাদ সংস্থা সূত্রে দাবি, টুইটারের প্রাক্তন সিইও-র মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১২১৮ কোটি টাকা।
একাধিক জায়গায় বাড়ি রয়েছে পরাগের। নয়াদিল্লিতে চারটি পেন্টহাউস রয়েছে পরাগের। এ ছাড়াও নিউইয়র্কে পেন্টহাউস, ফ্ল্যাট রয়েছে। টেক্সাসেও বাড়ি রয়েছে তাঁর।
বাড়ির পাশাপাশি গাড়ির সংখ্যাও নেহাত কম নয়। মার্সিডিজ বেঞ্জ, ল্যান্ড রোভার, রেঞ্জ রোভারের মতো বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে পরাগের।
তবে এত সম্পত্তি থাকলেও টুইটারের সিইও পদ থেকে যে ভাবে রাতারাতি পরাগকে বরখাস্ত করলেন ইলন, তা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। যদিও টুইটার থেকে বিদায়ের পর মোটা অঙ্কের টাকা পাবেন পরাগ। কিন্তু যিনি সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে টুইটারের মতো সংস্থার শীর্ষপদে যে ভাবে আসীন হয়েছিলেন, তাঁর বিদায়বেলা যে এতটা নিষ্ঠুর হবে, তা বোধহয় অনেকেই ভাবেননি।