সম্প্রতি কানাডায় গিয়ে ‘নিখোঁজ’ হয়ে গিয়েছেন পাকিস্তানের এক বিমানসেবিকা। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ)-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার খবরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে পাকিস্তানে।
ওই বিমানসেবিকার নাম মারিয়ম রাজ়া। তাঁর হোটেলের ঘর থেকে একটি চিরকুট পাওয়া গিয়েছে। সেখানে তিনি পিআইএ-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিমান সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কেন এবং কোথায় উধাও হয়ে গেলেন কর্মী? তার সদুত্তর মেলেনি। মেলেনি মারিয়মের খোঁজও। তবে গোটা ঘটনায় ইঙ্গিত রয়েছে, মারিয়ম স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছেন।
গত সোমবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ইসলামাবাদ থেকে কানাডার টরন্টোর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল পিআইএ-র একটি বিমান। তাতে ছিলেন মারিয়ম।
পরের দিন ওই বিমানটির আবার পাকিস্তানে ফেরার কথা ছিল। সেই ফিরতি বিমানে আর মারিয়মকে দেখা যায়নি। তিনি যে হোটেলে ছিলেন সেখানে খোঁজ করেন পিআইএ কর্তৃপক্ষ।
দেখা যায়, হোটেলের ঘরে মারিয়ম নেই। শুধু রয়েছে একটি বিদায়ী চিরকুট। যেখানে সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
বস্তুত, পাকিস্তানের বিমানসেবিকাদের কানাডায় ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও বেশ কয়েক বার একই ঘটনা ঘটেছিল। বরং বলা ভাল, মারিয়ম ‘ট্রেন্ডে’ গা ভাসিয়েছেন।
অনুরূপ ঘটনা শেষ বার ঘটেছিল জানুয়ারি মাসে। পাকিস্তান থেকে আর ফইজ়া মুখতার নামে এক বিমানকর্মী কানাডায় গিয়েছিলেন। তিনিও আর ফেরেননি।
পিআইএ-র মুখপাত্র আবদুল্লাহ হাফিজ খান জানান, করাচি থেকে ফইজ়া কানাডায় গিয়েছিলেন। কিন্তু পরের দিন ফিরতি বিমানে ওঠেননি। কানাডাতেই তিনিও উধাও হয়ে গিয়েছিলেন।
কেন এমন ঘটনা বার বার ঘটছে? একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ২০১৮ সাল থেকে পাকিস্তানের বিমানকর্মীরা বিদেশে আশ্রয় খুঁজছেন। পাকিস্তানে তাঁরা থাকতে চাইছেন না।
এমনকি, পিআইএ-র বেশ কয়েক জন বিমানকর্মী কানাডায় আশ্রয় নিতে চেয়ে আবেদনও জানিয়ে রেখেছেন বলে ওই সংবাদমাধ্যমের দাবি। তাঁদের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
পরিসংখ্যান বলছে, পাকিস্তানি বিমানকর্মীদের কানাডায় ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার রীতি শুরু হয়েছে ২০১৯ সাল থেকে। সম্প্রতি সেই প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৩ সালে অন্তত সাত জন পিআইএ কর্মী কানাডায় গিয়ে আর ফেরেননি। সংবাদমাধ্যমের দাবি, তাঁরা সেখানেই আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন।
২০২৩-এর ডিসেম্বরেও পিআইএ-র দু’জন বিমানকর্মী কানাডার টরন্টোয় ‘উধাও’ হন। তাঁরা না থাকায় প্রয়োজনীয় কর্মী ছাড়াই বিমানটিকে ইসলামাবাদে ফিরতে হয়েছিল।
গত বছরের শেষ দিকে যাঁরা পাকিস্তান থেকে কানাডায় গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছে আয়াজ় কুরেশি, খালিদ আফ্রিদি, ফিদা হুসেন শাহ প্রমুখ। ওই বছর মোট চার জন বিমানকর্মী কানাডায় যান।
২০২৩ সালের মতো ২০২২ সালেও পাকিস্তানের চার বিমানকর্মী কানাডায় চলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আর দেশে ফেরেননি। তাঁরা সকলেই ছিলেন পিআইএ-তে কর্মরত।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল। পিআইএ-র দশাও তথৈবচ। অনেকের মতে সেই কারণেই বিমানকর্মীরা দেশ ছাড়তে চাইছেন। নিজেদের দেশে তাঁরা কর্মজীবনের নিশ্চয়তা খুঁজে পাচ্ছেন না।
পাকিস্তানের অন্যতম সেরা বিমান সংস্থার নাম পিআইএ। এক সময় এই বিমান সংস্থার ভূয়সী প্রশংসা শোনা যেত বিদেশি যাত্রীদের মুখেও।
কিন্তু পিআইএ আর আগের মতো নেই। বদলে গিয়েছে পাকিস্তানও। ঋণের বোঝায় তারা জর্জরিত। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে তারা। অভিযোগ, পিআইএ-তে কর্মীদের বেতনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
কেন উন্নত ভবিষ্যতের জন্য কানাডাকেই বেছে নিচ্ছেন পাক বিমানকর্মীরা? বিশেষজ্ঞদের মতে, কানাডায় বিদেশিদের জন্য কড়াকড়ি কম। সেখানে নাগরিকত্ব লাভের প্রক্রিয়াও তুলনামূলক সহজ।
পিআইএ-র বেতনকাঠামোকেও এর জন্য দায়ী করছেন কেউ কেউ। অভিযোগ, কর্মীরা সেখানে উপযুক্ত বেতন পান না। গত মাসেই পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক ক্যাবিনেট পিআইএ-র বেসরকারিকরণে সম্মতি দিয়েছে।
যাঁরা না জানিয়ে আচমকা পাকিস্তান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, সেই বিমানকর্মীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে পিআইএ-ও। ওই কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের প্রাপ্য সুযোগসুবিধা বাতিল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থা।