অর্থনৈতিক অনটনে ভুগছিল পাকিস্তান। ঋণের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছিল দেশের সরকার। সেই পরিস্থিতি কিছুটা সামলে উঠতেই আবার পুরনো ছন্দে ভারতের ‘শত্রু’ পড়শি।
স্বাধীনতা দিবসের উদ্যাপনে এ বছর ভারতকে টেক্কা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে পাকিস্তান। ভারতের চেয়েও লম্বা পতাকা উত্তোলন করে তারা তাক লাগিয়ে দিতে চায়।
আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ) পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। তার পর থেকেই অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকছিল দেশটি। সম্প্রতি আইএমএফ আবার তাদের অর্থসাহায্য করেছে।
আইএমএফের কাছ থেকে সম্প্রতি ৩০০ কোটি ডলারের (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা) অর্থসাহায্য পেয়েছে পাকিস্তান। ওই টাকা তাদের দেওয়া হয়েছে সরকারের ঋণ পরিশোধের জন্য।
পরিসংখ্যান বলছে, আগামী দু’বছরের মধ্যে সুদ-সহ বিদেশ থেকে নেওয়া যাবতীয় ঋণ পরিশোধ করার জন্য বিপুল টাকা দরকার পাকিস্তানের।
কিন্তু আইএমএফের অর্থসাহায্য পাওয়ার পরেই পতাকা সংক্রান্ত ঘোষণাটি করেছে পাকিস্তান। তারা জানিয়েছে, এ বছর স্বাধীনতা দিবসে তারা ৫০০ ফুট উঁচু জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবে।
পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ৫০০ ফুটের পতাকাটি তোলা হবে। সব ঠিক থাকলে সেটাই হবে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম পতাকা।
পাক সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, আগামী ১৪ অগস্ট পাকিস্তানের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে লাহোরের লিবার্টি চক এলাকায় বিশেষ পতাকাটি উত্তোলন করা হবে।
এই পতাকা তুলতে বিস্তর খরচ করছে পাকিস্তান। তাদের মুদ্রায় এতে প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। ভারতীয় মুদ্রায় বর্তমানে যার পরিমাণ ১১ কোটি টাকার বেশি।
৫০০ ফুটের পতাকা তুলে পাকিস্তান ভারতকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে তেমন কোনও মন্তব্য বা ঘোষণা করেনি সে দেশের সরকার।
ছয় বছর আগে, ২০১৭ সালের স্বাধীনতা দিবসেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সে বছর ৭০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পাকিস্তান যে পতাকা তুলেছিল, তা ছিল ৪০০ ফুট উঁচু।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে পঞ্জাবের ওয়াঘা সীমান্তে ভারত ৩৬০ ফুটের পতাকা উত্তোলন করেছিল। তাতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছিল। পতাকা তুলেছিলেন পঞ্জাবের তৎকালীন মন্ত্রী অনিল জোশী।
মার্চে ভারতের তোলা ৩৬০ ফুটের পতাকার ‘জবাব’ আসে অগস্টের স্বাধীনতা দিবসে। পাকিস্তানের উত্তোলিত পতাকাটি ছিল ভারতের চেয়ে ৪০ ফুট বেশি উঁচু।
সেই থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে অঘোষিত ‘পতাকা-যুদ্ধ’ চলছে বলে মনে করা হয়। প্রতি বারই পতাকার উচ্চতায় ভারতকে টেক্কা দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় পাকিস্তানের আচরণে।
সূত্রের খবর, এ বছর স্বাধীনতা দিবসে ভারতের ৪১৩ ফুট উঁচু তেরঙা জাতীয় পতাকা তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। গত এক বছর ধরেই এ নিয়ে কথাবার্তা চলছে।
পাকিস্তান এ বার এক ধাক্কায় পতাকার উচ্চতা অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। ৫০০ ফুট উঁচু পতাকা দক্ষিণ এশিয়ায় আগে দেখা যায়নি।
৪০ কোটি খরচ করে পতাকা উত্তোলনকে অনেকে পাকিস্তানের বিলাসিতা হিসাবে দেখছেন। কিছু দিন আগেও দেশটিতে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। দেউলিয়া হয়ে যেতে বসেছিল সরকার।
আইএমএফের সাহায্য ছাড়াও সম্প্রতি বেশ কিছু দেশের কাছ থেকে ঋণ পেয়েছে পাকিস্তান। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি পাক সরকারকে টাকা দিয়েছে। সাহায্য করেছে চিনও।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা সামলে নেওয়ার পরেই পতাকার জন্য এত খরচের সিদ্ধান্তে নানা মহলে সমালোচিত হচ্ছে পাকিস্তান সরকার। তবে আপাতত সে সবে কান দিচ্ছে না তারা। জোরকদমে চলছে অগস্টের প্রস্তুতি।