অভিনেত্রী মায়ের বিভিন্ন মুহূর্ত ভিডিয়ো রেকর্ডিং করছিল কন্যা। কিন্তু ক্যামেরায় মায়ের বক্ষবিভাজিকা দেখা যেতেই হাতটি বাড়িয়ে ঢেকে দিল সে। তারকা এবং তাঁর সন্তানের ওই ভিডিয়োটি নিয়ে আলোচনা আর বিতর্ক তার পর থেকে যেন থামতেই চাইছে না ইনস্টাগ্রামে।
মায়ের নাম পদ্মা পার্বতী লক্ষ্মী। যদিও লোকে তাঁকে চেনে পদ্মালক্ষ্মী নামেই। যিনি বিতর্কিত লেখক সলমন রুশদির প্রাক্তন স্ত্রী। তিনি নিজেও এক জন লেখকের পাশাপাশি সমাজকর্মী, টিভি সঞ্চালক, অভিনেত্রী এবং প্রভাবী।
হলিউডের ছবিতে অভিনয় করেছেন পদ্মালক্ষ্মী। বলিউডে তাঁর প্রথম ছবি শাহেনশা। অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে। বর্তমানে একটি খাবার সংক্রান্ত অনুষ্ঠানের টিভি সঞ্চালক। ইনস্টাগ্রামেও প্রায়ই নিজের রান্নাবান্নার রিল বানান। সেই সব রিলও বেশ জনপ্রিয়।
তেমনই একটি রিলের ভিডিয়ো রেকর্ডিংয়ের সময় ক্যামেরায় পিছনে থাকা অভিনেত্রী-কন্যা তার মায়ের শরীর প্রদর্শন নিয়ে একটু সচেতন হয়ে পড়ায় বিতর্কের সূত্রপাত। ভিডিয়োটি যদিও অভিনেত্রীই পোস্ট করেছিলেন তাঁর ইনস্টাগ্রামে।
জিন্সের উপর সাদা রঙের খাটো টপ পরেছিলেন পদ্মা। তাঁর ফাঁকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল বক্ষবিভাজিকা। ক্যামেরায় তা হাত বাড়িয়ে আড়াল করতেই শুরু হয় মা-মেয়ের কথোপকথন।
পদ্মা মেয়েকে প্রশ্ন করেন, ‘‘কী করছে বলো তো তুমি?’’ জবাবে কন্যা কৃষ্ণা বলে, ‘‘সেন্সর করছি।’’ জবাবে মেয়েকে পদ্মা বলেন, ‘‘তুমি কি জানো এখানেই বছর দেড়েক পেট ভরিয়ে বড় হয়েছো তুমি!’’ শুনে থেমে যায় মেয়ে। ভিডিয়োর উপরে লেখা ফুটে ওঠে, ‘‘এই বার পেয়েছি তোমায়।’’ এই ভিডিয়োটি নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
পদ্মার জবাবের তারিফ করেছেন অনেকেই। তবে বিতর্ক হয়েছে তার চেয়েও বেশি। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রামে এক মহিলা লিখেছেন, ‘‘আমি চার সন্তানের মা হয়ে বলছি, মেয়ে যখন তোমাকে নিয়ে অপ্রস্তুত বোধ করে, তখন সে দিকে খেয়াল রাখাটাই বাঞ্ছনীয়।’’
জবাবে অবশ্য ওই মহিলাকে এবং বাকি সমালোচকদেরও পদ্মা জানিয়েছেন, তিনি তাঁর কন্যার সঙ্গে মজা করছিলেন। এ নিয়ে এত গুরুগম্ভীর আলোচনা অপ্রয়োজনীয়। যদিও বিতর্ক তাতে থামেনি। তবে পদ্মালক্ষ্মীর কাছে বিতর্ক নতুন কথা নয়। তাঁর জীবনে বিতর্ক বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে।
ভারতের তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম। তবে পদ্মালক্ষ্মীর বেড়ে ওঠা পুরোপুরিই বিদেশে। আমেরিকায় পড়াশোনা শেষ করে মডেলিং করে আসেন অভিনয়ে। বলিউডে তাঁর প্রথম ছবি ছিল ‘বুম’। ছবিটি আগাগোড়াই বিতর্কের শীর্ষে থেকেছে।
ছোটবেলায় ‘ধর্ষিত’ হয়েছিলেন অভিনেত্রী। ১৬ বছর বয়সে তাঁর থেকে বয়সে অনেক বড় প্রেমিক তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। পদ্মালক্ষ্মীর দাবি, সে কথা বহু দিন কাউকে জানাননি। কারণ আরও কম বয়সে এক আত্মীয়ের যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বাড়িতে বলায় তাঁর বাবা-মা তাঁকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
পদ্মালক্ষ্মীর নাম গোটা দুনিয়া জানতে পারে সলমন রুশদির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের পর। ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ লিখে মুসলিম দুনিয়ার ‘চক্ষুশূল’ হয়ে তত দিনে বিখ্যাত রুশদি। তাঁকে প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয়। বাক্স্বাধীনতা আন্দোলনের মূর্ত প্রতীকও হয়ে উঠেছেন রুশদি।
পাঁচ বছর রুশদির সঙ্গে থাকার পর তাঁকে বিয়ে করেন পদ্মা। তবে সেই বিয়ে তিন বছরের বেশি টেকেনি। নিজের বইয়ে অভিনেত্রী লিখেছিলেন, তাঁর সঙ্গে অমানবিক আচরণ করতেন সলমন। যৌনতাই ছিল তাঁর মূল আকর্ষণ। এতটাই যে অভিনেত্রী প্রবল অসুস্থ থাকাকালীন তাঁর উপর রেগে গিয়েছিলেন তিনি। যৌনসম্পর্কের ধকল নিতে অক্ষম অভিনেত্রীকে রুশদি বলেছিলেন, এমন জানলে ভুল জায়গায় সময় নষ্ট করতেন না তিনি।
সলমনের সঙ্গে পদ্মার সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কের জল অনেক দূর গড়ায়। তবে অভিনেত্রী বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। কিছু দিনের মধ্যেই আবার সম্পর্কে জড়ান। ব্রিটেনের রাজকুমারী ডায়ানার প্রাক্তন প্রেমিক টেড ফর্স্টম্যানের সঙ্গে। টেড ছিলেন এক জন ধনকুবের। তবে পদ্মার থেকে বয়সে প্রায় ৩০ বছরের বড়।
টেডের সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীন আবার নতুন সম্পর্কে জড়ান পদ্মা। ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট অ্যাডাম ডেলের সঙ্গে অল্প কয়েক দিনের পরিচয়েই শারীরিক সম্পর্ক। এমনকি, অন্তঃসত্ত্বাও হয়ে পড়েন পদ্মা। অথচ, তখনও সবাই জানে, অভিনেত্রী পদ্মা লক্ষ্মী টেডেরই প্রেমিকা।
কিন্তু গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর এক নতুন বিতর্কের মুখোমুখি হন পদ্মা। সন্তানের বাবা কে? শেষমেশ সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষাও করাতে হয় পদ্মাকে। জানা যায় তাঁর সন্তানের বাবা অ্যাডামই।
কিন্তু অ্যাডামের সঙ্গে তখন কোনও সম্পর্কেই নেই অভিনেত্রীর। তিনি তথনও টেডের সঙ্গেই থাকছেন। পদ্মা এবং তাঁর সন্তানের দায়িত্ব নেন টেডই। প্রসবের সময়েও পাশে থাকেন। কিন্তু তার পরেই মঞ্চে হাজির হন অ্যাডাম। পিতৃত্বের অধিকার দাবি করেন তিনি।
শেষে কন্যা কৃষ্ণার নামে অ্যাডামের নাম জুড়ে স্বস্তি পান পদ্মা। তবে প্রেমে পড়া বন্ধ হয়নি তাঁর।
টেডের মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর পর অভিনেতা রিচার্ড গেয়ারের প্রেমে পড়েন। দু’জনের সম্পর্ক ছিল ছ’মাস। তার পর সেই সম্পর্কও ভেঙে যায়। ২০১৪ সালে অভিনেত্রী ঘোষণা করেন তিনি একা। এবং একাই ভাল আছেন।
ইদানীং তাঁকে মাঝেমধ্যেই দেখা যায় কন্যা কৃষ্ণার সঙ্গে ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করতে। তবে দেখা গেল সেখানেও বিতর্ক থেকে মুক্তি পাননি তিনি।