‘বিশ্ব উষ্ণায়ন’ শব্দবন্ধের সঙ্গে সকলেই কমবেশি পরিচিত। মানবসভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে পৃথিবীর বুকে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দূষণ। আর সেই দূষণেই লুকিয়ে আছে উষ্ণায়নের বীজ।
দূষণের কারণে ধীরে ধীরে উষ্ণ হচ্ছে পৃথিবী। তার গড় তাপমাত্রা ক্রমবর্ধমান। এর ফলে বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। কমছে অক্সিজেনের মতো প্রাণদায়ী শ্বাসবায়ু।
বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন। দীর্ঘ দিন ধরেই তারা মানুষকে সচেতন হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন। গাছ কাটা, যথেচ্ছ নগরায়ন চলছে তাঁদের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়েই।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আগামী দিনে পৃথিবীর উষ্ণতা এতটাই বেড়ে যাবে যে, মেরুপ্রদেশের বরফ গলে যেতে পারে পুরোপুরি। তার ফলে স্থলভাগ চলে যেতে পারে সমুদ্রের তলায়।
তবে পৃথিবী ধ্বংসের সেই আশঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে এ বার প্রকাশ্যে এল নতুন ভবিষ্যদ্বাণী। বিজ্ঞানীদের একাংশের মত, আগামী কয়েকশো কোটি বছরের মধ্যে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে জলে ডুবে নয়।
পৃথিবীর ‘শেষের সে দিন’ আরও ভয়ানক হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, ‘শ্বাসরুদ্ধ হয়ে’ মৃত্যুর পথে এগোচ্ছে সৌরজগতের এই তৃতীয় গ্রহ।
২০২১ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছিল, অক্সিজেনপূর্ণ সময় পৃথিবীতে চিরস্থায়ী হবে না। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আগামী কয়েকশো বছরের মধ্যে নাটকীয় পরিবর্তন হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।
বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রথম থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ছিল না। পৃথিবী সৃষ্টির পর নানা গ্যাসের মতো অক্সিজেন বায়ুমণ্ডলে তৈরি হয় অনেক দেরিতে।
২৪০ কোটি বছর আগে ‘গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট’-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে অক্সিজেনের আবির্ভাব হয়। তার পর ধীরে ধীরে জলে এবং স্থলে আসে প্রাণের স্পন্দন। অক্সিজেনের মাধ্যমেই সেই প্রাণ লালিত হচ্ছে পৃথিবীতে।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, আগামী কয়েকশো বছরে হু হু করে অক্সিজেনের মাত্রা কমবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। পরিবর্তে বাতাসে বৃদ্ধি পাবে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ। মিথেন যে কোনও প্রাণীর শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি গ্যাস।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পরিবর্তিত হলে অক্সিজেন নির্ভর সমস্ত প্রাণীর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে। মানুষও আর থাকবে না। অক্সিজেন কমতে শুরু করলেই বৃদ্ধি পাবে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা।
সূর্যের ক্রমবর্ধমান ঔজ্জ্বল্যের পাশাপাশি পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণও কমে যাবে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। তার ফলে পৃথিবীতে গাছও বাঁচতে পারবে না আর।
গাছের সালোকসংশ্লেষের জন্য প্রয়োজন কার্বন ডাই অক্সাইড। এই গ্যাস বাতাস থেকে গ্রহণ করে গাছ অক্সিজেন ত্যাগ করে। কার্বন ডাই অক্সাইডের অভাবে আগামী কয়েকশো বছরের মধ্যে পৃথিবী হয়ে উঠবে উদ্ভিদশূন্য।
উদ্ভিদের অভাব অক্সিজেনের ঘাটতির অন্যতম কারণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে অক্সিজেন ফুরিয়ে আসার নেপথ্যে থাকবে আরও একাধিক কারণ।
গবেষকদের মতে, এই মুহূর্তে পৃথিবীতে যে পরিমাণ অক্সিজেন আছে, আগামী কয়েকশো বছরের মধ্যে তার পরিমাণ অন্তত কয়েকশো গুণ কমে আসবে। ঘেঁটে যাবে পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র।
তবে আশার কথাও শুনিয়েছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। তাঁদের মতে, আগামী কয়েকশো বছরে পৃথিবী থেকে অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলেও চিন্তা নেই। কারণ তত দিনে তৈরি হয়ে যাবে বিকল্প ব্যবস্থা।
অন্য কোনও গ্রহে আগামী দিনে মানুষ বসতি স্থাপন করে ফেলবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। ফলে পৃথিবীতে অক্সিজেন কমে গেলেও মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা এখনই তাঁরা ছাড়তে চাইছেন না।