রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে বিরোধী দলগুলির সাংসদদের সংঘাত চরমে। শুক্রে শেষ হওয়া বাদল অধিবেশ জুড়ে একের পর এক বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন তিনি।
কখনও রাজ্যসভায় হাসিঠাট্টার ছলে সমাজবাদী নেত্রী জয়া বচ্চনকে কটাক্ষ, কখনও দুর্ব্যবহার, আবার বিরোধী নেতার কণ্ঠরোধ! একের পর এক অভিযোগে রাজ্যসভার অধিবেশন পর্ব উত্তাল হয়েছিল।
সেই বিরোধ এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে ধনখড়কে ‘উৎখাত’ করতে একটি প্রস্তাব আনতে চলেছে বিরোধী দলগুলি । রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের প্রস্তুতি সারা বলে খবর। ইতিমধ্যে নাকি ৮০ জন সাংসদ সংশ্লিষ্ট নোটিসে স্বাক্ষর করেছেন বলেও জানা গিয়েছে।
বিরোধীদের প্রধান তিনটি অভিযোগ, এক) নির্লজ্জ এবং ধারাবাহিক ভাবে পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে রাজ্যসভার অধিবেশন পরিচালনা করেন তিনি। দুই) সংসদের উচ্চকক্ষে বিরোধীদের মতামত প্রকাশের জন্য যথেষ্ট জায়গা ও সময়ের লক্ষণীয় অভাব রয়েছে। তিন) বিরোধী দলের নেতাদের বার বার মতপ্রকাশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ। কী ভাবে আনা যায় অনাস্থা প্রস্তাব?
অনাস্থা প্রস্তাব শুধুমাত্র রাজ্যসভায় পেশ করা যেতে পারে, লোকসভায় নয়। ১৪ দিনের আগাম নোটিস দেওয়ার পর আনা হতে পারে প্রস্তাব। প্রস্তাবে রাজ্যসভার মোট সদস্যের ৫০ শতাংশের অনুমোদন প্রয়োজন। সংসদের উচ্চকক্ষে প্রস্তাব পাশ করার পর সেটিকে লোকসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়।
প্রস্তাবটি বিবেচনাধীন থাকাকালীন চেয়ারম্যান অধিবেশন পরিচালনা করতে পারেন না। তিনি উপস্থিত থাকতে, কথা বলতে এবং আলোচনায় অংশ নিলেও থাকে না ভোটাভুটির অধিকার।
সপ্তাহখানেক আগেই রাজ্যসভার অধিবেশনে জয়া-ধনখড় দ্বৈরথ চরমে উঠেছিল। স্বামী অমিতাভ বচ্চনের নাম ব্যবহার নিয়ে বাদানুবাদ শুরু। সেই দিন বিষয়টি লঘু ভাবে নিলেও গত শুক্রবার বক্তৃতা করতে উঠে শুরুতেই ধনখড়ের কড়া সমালোচনা করেন জয়া।
সেই বক্তৃতা অসমাপ্ত রেখেই জয়াকে হাত তুলে থামিয়ে দেন চেয়ারম্যান। জয়া বচ্চনকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে শেখানোর দরকার নেই।’’
তুমুল হইচই ও বাদানুবাদের পর ধনখড়ের বক্তব্যের জবাবে বিরোধী শিবিরের সাংসদেরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। কিন্তু ধনখড় তাঁর অবস্থানে অনড় ছিলেন।
এর পরই জয়ার সমর্থনে রাজ্যসভার কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া। পরে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বে বাকি বিরোধী সাংসদেরাও রাজ্যসভা ত্যাগ করেন।
পরে জয়া জানান, চেয়ারম্যান যে ভাবে বিরোধী সাংসদদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। মল্লিকার্জুন খড়্গের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ তাঁর।
শুক্রবারই বাদল অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে তা সোমবার পর্যন্ত চলবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। তবে কোনও কারণ না দেখিয়েই শুক্রবার শেষ হয় অধিবেশন। তবে অধিবেশন শেষ হয়ে যাওয়ায় অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আদৌ এগোনো হবে কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে খবর।