গত কয়েক দিনে ওড়িশার রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে একটা নাম— অর্চনা নাগ। যৌনতার ফাঁদে ফেলে প্রভাবশালী, বিত্তবানদের ‘ব্ল্যাকমেল’ এবং টাকা আদায়ের অভিযোগে তাঁকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বার তাঁর জীবন নিয়ে তৈরি হতে চলেছে সিনেমাও।
অর্চনার জীবন নিয়ে সিনেমা তৈরির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ওড়িশার প্রযোজক শ্রীধর মার্থা। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে কী ভাবে রাজ্যের অভিজাত মহলে নিজের জাল বিস্তার করলেন অর্চনা, তা-ই হবে ছবির বিষয়বস্তু।
ওড়িশার বিভিন্ন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক অর্চনার যৌনচক্রের ফাঁদে পা দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, চলচ্চিত্র প্রযোজক থেকে শুরু করে ধনী ব্যবসায়ী, কেউ বাদ যাননি।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, বেছে বেছে ধনী, প্রভাবশালীদের নিজের ‘শিকার’ বানাতেন অর্চনা। তাঁদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ক্যামেরাবন্দি করে চলত দেদার ব্ল্যাকমেল। তাঁর এই কাজে সহায়তা করতেন স্বামী জগবন্ধু চাঁদ।
জগবন্ধুর সঙ্গে একটি বিউটি পার্লারের সূত্রে পরিচয় হয় অর্চনার। তাঁরা ২০১৮ সালে বিয়ে করেন। ওই বিউটি পার্লারেই যৌনচক্র (সেক্স র্যাকেট) খুলেছিলেন তাঁরা, দাবি পুলিশের।
ওড়িশার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, অর্চনার যৌনচক্রের ফাঁদে পড়েছেন ওড়িশার ২৫ জন রাজনীতিক। তাঁদের মধ্যে ১৮ জন বিধায়ক এবং দুই মন্ত্রীও রয়েছেন।
রাজ্যের এক বিধায়কের সঙ্গে অর্চনার উটিতে রাত কাটানোর কথা এখন লোকের মুখে মুখে ঘুরছে। পুলিশ সূত্রে খবর, অর্চনার মোবাইল ফোন এবং তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া হার্ড ডিস্ক পরীক্ষা করে ওই বিধায়কের সঙ্গে বেশি কিছু ছবি এবং হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন পাওয়া গিয়েছে।
অর্চনার সঙ্গে ওই বিধায়ক যে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সেই ইঙ্গিত পেয়েছে পুলিশ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, অর্চনাকে একটি বিলাসবহুল গাড়িও উপহার দিয়েছিলেন ওই বিধায়ক।
কালাহান্ডির এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম অর্চনার। পরে ভুবনেশ্বরে আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে চলে আসেন। এখান থেকেই তাঁর জীবন ভিন্ন খাতে বইতে শুরু করে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্চনার জীবনযাপনের ধারা বদলেছে। বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়েছেন তিনি। ভুবনেশ্বরে ৩ কোটি টাকার প্রাসাদোপম বাংলো, নাখারার কাছে একটি সুবিশাল ফার্মহাউস রয়েছে তাঁর।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ঘনিষ্ঠ হতেন অর্চনা। তার পর তাঁদের কখনও নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে মহিলাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দিতেন। শুধু তা-ই নয়, ওই ব্যক্তিদের চাহিদা অনুযায়ী মহিলার জোগানও দিতেন তিনি।
অর্চনার সঙ্গেও এই সব প্রভাবশালীদের অনেকে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁদের এই ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিয়ো করতেন অর্চনার স্বামী জগবন্ধু।
অর্চনা এবং জগবন্ধু মিলে ওড়িশার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন, দাবি পুলিশের। সেই তালিকায় মোট ৫০ জনের নাম ছিল। এঁদের থেকেও একই প্রক্রিয়ায় লক্ষ লক্ষ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা।
নয়াপল্লি থানায় ওড়িশার এক চলচ্চিত্র প্রযোজক অর্চনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি পুলিশকে জানান, তাঁর সঙ্গে অন্য মেয়েদের ছবি দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৩ কোটি টাকা দাবি করেছেন অর্চনা।
গত ৬ অক্টোবর অর্চনাকে গ্রেফতার করেছে ওড়িশা পুলিশ। তাঁকে ভুবনেশ্বরের ঝড়পাড়ার বিশেষ জেলে রাখা হয়েছে। সূত্রের খবর, জেলে বসেও বাইরে কী হচ্ছে সব খবর রাখছেন অর্চনা। তাঁর সম্পর্কে কোথায় কী বলা হচ্ছে, কিছুই তাঁর নজর এড়াচ্ছে না।
২৬ বছরের তরুণী ওড়িশার রাজনীতিতে যে ভাবে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন, তার নেপথ্যকাহিনি প্রযোজকের চোখ টেনেছে। তাই শত বিতর্কের জন্ম দেওয়া এই অর্চনার গল্প বড় পর্দায় তুলে ধরার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল।