নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় মন্ত্রিসভায় কমল মহিলা সদস্যের সংখ্যা। আগের মন্ত্রিসভায় ১০ জন মহিলা ছিলেন। রবিবার সন্ধ্যায় নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে শপথ নিয়েছেন সাত জন মহিলা। বাদ পড়েছে স্মৃতি ইরানি-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নাম।
বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার গড়লেও লোকসভায় এ বার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি মোদীর দল। তাই মন্ত্রিত্বের ক্ষেত্রে শরিকদের চাহিদাও মেটাতে হয়েছে তাঁকে। বাদ দিতে হয়েছে নিজের দলের বেশ কয়েক জনকে।
রবিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তৃতীয় বারের জন্য শপথগ্রহণ করেছেন মোদী। তাঁর সঙ্গে শপথ নিয়েছেন আরও ৭১ জন। মোদীর এই নতুন মন্ত্রিসভায় মোট ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রী রয়েছেন। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ৪১ জন।
এর আগে মোদীর মন্ত্রিসভায় যে ১০ জন মহিলা সদস্য ছিলেন, এ বার তাঁদের মধ্যে থেকে বাদ পড়েছেন স্মৃতি ইরানি। তিনি উত্তরপ্রদেশের অমেঠী কেন্দ্র থেকে লোকসভায় লড়েছিলেন। কিন্তু পরাজিত হয়েছেন।
এ ছাড়াও এ বার মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন ভারতী পওয়ার, সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি, দর্শনা জরদোশ, মিনাক্ষী লেখি এবং প্রতিমা ভৌমিক।
মোদীর তৃতীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়েছে যে সাত জন মহিলার, তাঁরা হলেন নির্মলা সীতারামন, অন্নপূর্ণা দেবী, সাবিত্রী ঠাকুর, নিমুবেন বাম্ভনিয়া, রক্ষা খডসে, শোভা কারনদলাজে, শোভা কারনদলাজে এবং অনুপ্রিয়া পটেল।
নির্মলা সীতারামন— বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ নির্মলা সীতারামন। লোকসভায় লড়েননি। আগের মন্ত্রিসভায় তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। রবিবার পূর্ণমন্ত্রী হিসাবেই শপথ নিয়েছেন। তবে কোন মন্ত্রকে তাঁকে এ বার পাঠানো হবে, তা স্পষ্ট নয়। এই নিয়ে পর পর তিন বার মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্য হলেন নির্মলা।
অন্নপূর্ণা দেবী— মোদীর তৃতীয় মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে দু’জন মহিলা শপথ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ঝাড়খণ্ডের অন্নপূর্ণা দেবী। তিনি অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) সম্প্রদায়ের নেত্রী। ঝাড়খণ্ড এবং অবিভক্ত বিহারের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। আগে আরজেডির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ঝাড়খণ্ডে বিজেপির সংগঠন তৈরিতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সাবিত্রী ঠাকুর— মোদী মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী হিসাবে রবিবার শপথ নিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের আদিবাসী নেত্রী সাবিত্রী ঠাকুর। এ বারের নির্বাচনে ধার কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছেন।
নিমুবেন বাম্ভনিয়া— গুজরাতের ভাবনগর কেন্দ্র থেকে এ বারের লোকসভা নির্বাচনে সাড়ে চার লক্ষের বেশি ভোটে জিতেছেন নিমুবেন বাম্ভনিয়া। গুজরাত থেকে এ বার বিজেপি তিন মহিলাকে টিকিট দিয়েছিল, নিমুবেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি গুজরাতে বিজেপির মহিলা মোর্চার দায়িত্বেও ছিলেন। রবিবার প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন তিনি।
রক্ষা খডসে— মহারাষ্ট্রের তিন বারের সাংসদ রক্ষা খডসে রবিবার প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। তিনি প্রাক্তন বিজেপি নেতা একনাথ খডসের নাতনি। মহারাষ্ট্রের রাবের কেন্দ্র থেকেই এ বারও তিনি ভোটে লড়েছিলেন। জিতেছেন ২ লক্ষ ৭২ হাজার ভোটের ব্যবধানে।
শোভা কারনদলাজে— কর্নাটকের বিজেপি নেত্রী শোভা কারনদলাজে আগের মন্ত্রিসভাতেও ছিলেন। তিনি কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। কর্নাটকের তিন বারের সাংসদ তিনি। এ বার ভোটে লড়েছিলেন বেঙ্গালুরু উত্তর কেন্দ্র থেকে। আড়াই লক্ষের বেশি ভোটে জিতে তিনি বেঙ্গালুরুর প্রথম মহিলা সাংসদ হয়েছেন। রবিবার শপথ নিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী হিসাবে।
অনুপ্রিয়া পটেল— উত্তরপ্রদেশের মিরজ়াপুর কেন্দ্র থেকে এ বার ৩.৭০ লক্ষের বেশি ভোটে জিতেছেন আপনা দলের প্রধান অনুপ্রিয়া পটেল। তিনি ওবিসি কুড়মি সম্প্রদায়ের নেত্রী। আগের মন্ত্রিসভায় বাণিজ্য বিভাগের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। এ বারও প্রতিমন্ত্রী করা হল অনুপ্রিয়াকে।
রবিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে, মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর মতো রাষ্ট্রনেতারা।
নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে সোমবার বিকেলে নিজের বাসভবনে বৈঠক করবেন মোদী। সেখানে মন্ত্রক বণ্টন নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।