এক দিকে করিনা কপূর খান অন্য দিকে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন। দাঁড়িপাল্লার দু’দিকে বলিপাড়ার দুই খ্যাতনামী অভিনেত্রী। তবে পাল্লাটা যেন ঐশ্বর্যার দিকেই বেশি ঝুঁকেছিল বাঙালি পরিচালকের।
সেপ্টেম্বর মাসে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় মার্ডার-থ্রিলার ঘরানার ছবি ‘জানে জান’। এই ছবির মাধ্যমে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আত্মপ্রকাশ করলেন করিনা। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি ৪৩ বছরেও পা রাখেন অভিনেত্রী। এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বাঙালি পরিচালক সুজয় ঘোষ। করিনার জন্মদিনে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিতে অভিনয় করেন জয়দীপ আহলাওয়াত এবং বিজয় বর্মার মতো তারকারা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘জানে জান’ ছবির অভিনেত্রী হিসাবে করিনা নন, বরং সুজয়ের প্রথম পছন্দ ছিল ঐশ্বর্যা। আট বছর আগেই এই ছবি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন সুজয়। এক সাক্ষাৎকারে সে কথা জানান করিনা নিজেই। এমনকি ঐশ্বর্যার একটি পুরনো সাক্ষাৎকারেও তার প্রমাণ মেলে।
২০০৫ সালে কেইগো হিগাশিনোর লেখা ‘দ্য ডিভোশন অফ সাসপেক্ট এক্স’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। এই কাহিনির উপর ভিত্তি করে সুজয় যে একটি হিন্দি ছবি তৈরি করবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। এমনকি, ঐশ্বর্যার সঙ্গে এই ছবি নিয়ে আলোচনাও করেছিলেন সুজয়।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে ঐশ্বর্যাকে প্রশ্ন করা হয়, তাঁকে আগামী কোন ছবিতে দেখা যেতে পারে। অভিনেত্রী সে প্রশ্নের উত্তরে জানান, সুজয়ের পরিচালনায় দু’টি ছবিতে অভিনয় করার কথা তাঁর।
তখন ঐশ্বর্যা জানিয়েছিলন, ‘দ্য ডিভোশন অফ সাসপেক্ট এক্স’ উপন্যাসের উপর নির্ভর করে সুজয় একটি ছবি বানাচ্ছেন। সুজয়ের ‘দুর্গা রানি’ ছবির কাজও রয়েছে আমার কাছে। অভিনেত্রী বলেন, ‘‘দু’টি ছবির মধ্যে সুজয় কোন ছবির কাজ আগে শুরু করবেন, সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’’
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘দুর্গা রানি’ নামে যে ছবিটির কথা ঐশ্বর্যা বলেছিলেন, সে ছবিটির নাম বদলে ফেলেন সুজয়। শুধুমাত্র ছবির নাম নয়, অভিনেত্রীও বদলে ফেলেন তিনি।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, ছবির নাম পরিবর্তন করে ‘কহানি’ রাখেন পরিচালক। সে ছবিতে আর ঐশ্বর্যা নন, বরং অভিনয় করতে দেখা যায় বিদ্যা বালনকে।
‘দ্য ডিভোশন অফ সাসপেক্ট এক্স’ উপন্যাসের উপর নির্ভর করে যে ছবি নির্মাণের কথা ছিল, তা থেকেও সরে যান ঐশ্বর্যা। ছবির কাজও পিছিয়ে যায় অনেকটাই। পরে আবার এই ছবি নিয়ে পরিকল্পনা করেন সুজয়। ঐশ্বর্যার পরিবর্তে সে ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান করিনা।
‘জানে জান’ ছবির প্রথম ঝলক মুক্তির অনুষ্ঠানে করিনা জানান, এই ছবির সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন তাঁর জীবনসঙ্গী তথা বলি অভিনেতা সইফ আলি খান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সুজয়ও। কথা প্রসঙ্গে সুজয় বলেন, ‘‘স্বামী হয়ে এই ছবির দায়িত্ব করিনার উপর দিয়ে দিয়েছেন সইফ। সইফের সঙ্গে এই ছবিতে কাজ করার কথা ছিল আমার। কিন্তু কোনও কারণবশত একসঙ্গে কাজ করা আর হল না।’’
সুজয় বলেন, ‘‘প্রতিটি ছবিরই নিজস্ব ভাগ্য থাকে বলে আমি মনে করি। আগে সইফের সঙ্গে কাজ করার কথা ছিল। পরে সেই ছবি করিনার কাছে ফিরে এল, যেন এক চক্র পূর্ণ হল।”
করিনা সাক্ষাৎকারে জানান, ‘জানে জান’ ছবিটি নিয়ে সইফের উৎসাহ বাঁধ ভেঙেছে। অভিনেত্রী বলেন, ‘‘ছবি কবে মুক্তি পাবে সে অপেক্ষায় দিন গুনছিল সইফ। প্রথম ঝলক মুক্তির পর সেই ভিডিয়োটিই চার বার দেখে ফেলেছে ও। ঝলক দেখেই সইফ বলেছিল, সকলেই তাঁদের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন।’’
যদিও সুজয়ের দাবি, ‘দ্য ডিভোশন অফ সাসপেক্ট এক্স’ উপন্যাসটি পড়ার পর তিনি কল্পনা করে নিয়েছিলেন যে, তিনটি চরিত্রে কে কে অভিনয় করবেন। সুজয় বলেন, ‘‘নরেন চরিত্রটি বেশ চমকপ্রদ। এক দিকে গণিতে দক্ষ আবার অন্য দিকে মার্শাল আর্টও জানে। জীবনে কোনও দিনও নিজের যত্ন নেয়নি সে। জয়দীপের জন্য এই চরিত্রটি একদম মানানসই ছিল।’’
‘জানে জান’ ছবির প্রসঙ্গে সুজয় বলেন, ‘‘ইনস্পেক্টর কর্ণ চরিত্রের জন্য আমার এমন কাউকে প্রয়োজন, প্রথম দেখাতেই যাকে মনে ধরে যায়। সেই হিসেবে বিজয়ের কথা আমার মাথায় আসে।’’
করিনার অভিনয় নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ সুজয়। পরিচালক বলেন, ‘‘মায়া চরিত্রটি পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য এক দক্ষ অভিনেত্রীর দরকার ছিল, যিনি চরিত্রটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে পারেন। আমি চিত্রনাট্য থেকে যা কল্পনা করতে পেরেছি। করিনা তার থেকেও বেশি ভাবতে পেরেছে। এমন অভিনেতা থাকলে পরিচালক হিসাবে দায়িত্বও বেড়ে যায়।’’