শপিং মলের কর্মচারীকে খুনের অভিযোগে ২২ বছরের তরুণীকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করল নয়ডার পুলিশ। অভিযুক্তের নাম পায়েল ভাটি। নিহত তরুণীর নাম হেমা চৌধুরি।
অভিযোগ, নিজেকে মৃত প্রমাণ করতে পেশায় গৌড় সিটি মলের কর্মচারী হেমাকে খুন করেন পায়েল। এর পর নিজের পোশাক মৃতা তরুণীর দেহে পরিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেন, যাতে মনে হয় যে পায়েলই মারা গিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত পায়েল এবং তাঁর প্রেমিক অজয় ঠাকুর মৃত তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতার এবং পায়েলের মধ্যে শারীরিক গঠনে অনেক মিল থাকার কারণেই তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতান অভিযুক্ত এবং তাঁর প্রেমিক। এই বন্ধুত্ব ছিল এক বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অঙ্গ।
পুলিশ সূত্রে খবর, কাজ শেষ করে গৌড় সিটি মল থেকে বেরোনোর পর হেমাকে নিজেদের বধপুরার বাড়িতে নিয়ে যান পায়েল এবং অজয়। সেখানে হেমাকে খুন করার পর তার কব্জি কেটে দেয় অভিযুক্তেরা। মুখ বিকৃত করার জন্য ঢেলে দেওয়া হয় গরম তেল। এর পর সুইসাইড নোটে পায়েল লেখেন, ‘‘রান্নাঘরে আমার মুখে গরম তেল পড়েছে এবং আমি এই ভাবে বাঁচতে পারব না। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’’
এর পর অভিযুক্ত পায়েল তাঁর পোশাক মৃতার দেহে পরিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যান বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশের দাবি, হেমাকে খুন করার মাত্র এক সপ্তাহ পরে ১৯ নভেম্বর বুলন্দ শহরের একটি মন্দিরে বিয়ে করেন পায়েল এবং অজয়।
খুনকে আত্মহত্যার রূপ দিতে ওই সুইসাইড লিখে যান পায়েল। দেহ উদ্ধারের পর সুইসাইড নোটের লেখা অনুযায়ী, তরুণীর দেহ পায়েলের মনে করে তা পায়েলের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পরে পরিবারের তরফে কোনও প্রশ্ন না করেই সেই লাশ দাহ করে দেওয়া হয়। মুখ চেনা না গেলেও চেহারায় সাদৃশ্য থাকার কারণে তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন এই দেহ পায়েলরই।
কিন্তু হেমা নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিসরাখ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
মলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ এবং হেমার ফোন খতিয়ে দেখতে শুরু করে পুলিশ। তদন্তকারীরা দেখেন, হেমার ফোন শেষ বার পায়েলের বাড়ির ৫০ মিটারের মধ্যে সক্রিয় ছিল।
রীতিমতো গোয়েন্দা কাহিনির ধাঁচে এর পর তদন্ত এগোয়। শেষ পর্যন্ত পায়েলের পাতা জাল ভেদ করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা বুঝতে পারেন, পায়েল বলে যে দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, তা আসলে হেমার।
বৃহস্পতিবার পায়েলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বুন্দলশহরের একটি ভাড়া বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশের তদন্তকারী দল।
এক জন পুলিশ আধিকারিক সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, পায়েলের বাবা-মা প্রায় ছ’মাস আগে আত্মহত্যা করেন।
বাবা-মার মৃত্যুর জন্য দাদার শ্বশুরবাড়িকেই দায়ী করেন পায়েল। বাবা-মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে দাদার শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের খুনের ছক কষছিলেন তিনি। আর সেই কারণেই প্রেমিকের সঙ্গে মিলে নিজেকে মৃত প্রমাণিত করার পরিকল্পনা ফাঁদেন।
এই পরিকল্পনার নেপথ্যে যুক্তি ছিল, দাদার শ্বশুরবাড়ির লোকেদের মৃত্যুতে কিছুতেই সন্দেহের তির পায়েলের দিকে আসবে না। কারণ, তখন তিনি খাতায়কলমে ‘মৃত’।
নয়ডা পুলিশের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে পুলিশ। তদন্তের বিষয়ে শুক্রবার বিস্তারিত জানানো হবে বলেও পুলিশ সূত্রে খবর।
পায়েলের প্রেমিক অজয় পুরো ঘটনায় কতটা জড়িত ছিলেন, তা-ও তদন্ত করে জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারী দলের আধিকারিকরা।