Pak Army Operation In Balochistan

পর পর হামলায় চিনা নাগরিকদের মৃত্যুতে ফুঁসছে ড্রাগন, চাপে পড়ে বালুচিস্তানে বড় অভিযান পাক ফৌজের

স্বাধীনতাকামী বালুচদের একের পর এক হামলায় চিনা নাগরিকদের প্রাণ যেতেই রেগে আগুন বেজিং। ড্রাগনকে শান্ত করতে নিজের দেশেই সেনা অভিযানের নির্দেশ দিয়েছে শরিফ সরকার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০৩
Share:
০১ ২০

চিনের চাপে নতজানু পাকিস্তান। দেশের মধ্যেই সেনা অভিযানের নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ় শরিফ। একে কেন্দ্র করে বালুচিস্তানে নতুন করে গণবিক্ষোভ দানা বাঁধতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

০২ ২০

চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর রাজধানী ইসলামাবাদে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শরিফ। সেখানেই দক্ষিণ-পশ্চিম বালুচিস্তানে সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে অসামরিক এবং পাক ফৌজের পদস্থ আধিকারিকেরা ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement
০৩ ২০

বালুচিস্তানে সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতর। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘ওই প্রদেশের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে সমূল ধ্বংস করতে ফৌজি অভিযানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’’

০৪ ২০

এই সেনা অভিযানে কোন কোন সংগঠনকে নিশানা করা হবে, তা একরকম স্পষ্ট করেছে ইসলামাবাদ। সেই তালিকার একেবারে শীর্ষে নাম রয়েছে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এবং তাদের আত্মঘাতী বাহিনী মাজিদ ব্রিগেডের।

০৫ ২০

এ ছাড়াও বালুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) এবং বালোচ রাজি আজোই সঙ্গরকে (বিআরএএস) নিশানা করা হবে বলে জানিয়েছে শরিফের দফতর। ফলে শীতের শুরুতেই পশ্চিমের প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির সবচেয়ে বড় প্রদেশটির মাটি যে রক্তে ভিজতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।

০৬ ২০

পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতরের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘বালুচিস্তানের এই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি ক্রমাগত নিরীহ নাগরিক এবং বিদেশিদের খুন করছে। দেশের আর্থিক বৃদ্ধিকে বাধা দেওয়া এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করাই এদের মূল লক্ষ্য।’’

০৭ ২০

সূত্রের খবর, ১৯ নভেম্বরের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শরিফের মন্ত্রিসভার সমস্ত সদস্য, বালুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী এবং পাক ফৌজের তিন প্রধান উপস্থিত ছিলেন। সেনা অভিযানের সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিতে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিফ মুনির জোর দেন বলে জানা গিয়েছে। মুনিরের দাবি মেনে নেয় ইসলামাবাদ।

০৮ ২০

দক্ষিণ-পশ্চিম বালুচিস্তানে কবে এবং কখন থেকে সেনা অভিযান শুরু হবে, সেই সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ করতে হচ্ছে। দেশের জন্য বিপজ্জনক এমন যাবতীয় হুমকি উপড়ে ফেলতে সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর।’’

০৯ ২০

সম্প্রতি পাকিস্তানে কর্মরত চিনা নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সেখানে বাহিনী পাঠানোর ঘোষণা করে দেয় বেজিং। এতে ইসলামাবাদের উপর চাপ বাড়ছিল। কারণ শেষ পর্যন্ত চিনের পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটিতে মোতায়েন হলে সেখানকার সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে যেত।

১০ ২০

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে বালুচিস্তানে সেনা অভিযানের ঘোষণা করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে শেহবাজ় সরকার। প্রথমত, ফৌজি বুটের নীচে বিদ্রোহী বালুচদের পিষে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, বেজিংকে সন্তুষ্ট রেখে সেখানে চিনা প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাওয়া।

১১ ২০

শেহবাজ় সরকারের এ হেন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’ বা পিটিআই। দেশের মধ্যে সেনা অভিযান চালানো অনুচিত এবং তা পরিস্থিতিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।

১২ ২০

বালুচিস্তানে শুরু হতে চলা ফৌজি অভিযানের পরবর্তী লক্ষ্য খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) হতে চলেছে বলেও দাবি করেছে পিটিআই। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীও। পাক সেনা কেপিতে দমনপীড়ন শুরু করলে পরিণাম ভুগতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

১৩ ২০

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমের কেপি প্রদেশটির সীমান্ত আফগানিস্তান লাগোয়া। খাইবার পাখতুনখোয়াকে ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ বা টিটিপি জঙ্গিদের গড় বলা হয়। গত কয়েক বছরে একাধিক বার সেনা অভিযান চালিয়েও এই সন্ত্রাসী সংগঠনকে বাগে আনতে পারেনি ইসলামাবাদ।

১৪ ২০

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের অনুমান, এ বার পাক সেনা বালুচিস্তানে অভিযান শুরু করলে খোলাখুলি ভাবে বিএলএ-কে সাহায্য করতে পারে টিটিপি। সে ক্ষেত্রে কেপি-তে পাক সৈনিকদের পোস্টগুলি নিশানা করতে পারে এই জঙ্গি গোষ্ঠী। পিছন থেকে মদত দিতে পারে আফগানিস্তানের তালিবান শাসকরাও।

১৫ ২০

২০১৩ সালে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তানে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বেজিং। শুরু হয় ‘চিন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর’-এর (সিপিইসি) কাজ। এই প্রকল্পের আওতায় বালুচিস্তানের গ্বদর বন্দর থেকে শুরু করে চিনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাশগড় পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার লম্বা রাস্তা তৈরির কথা রয়েছে।

১৬ ২০

এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা বালুচ জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের আগুনে নতুন করে ঘি পড়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রকল্পের নামে এলাকার জমি দখল করছে পাক সেনা ও সরকার। স্থানীয়দের আর্থিক সমৃদ্ধির কোনও রকম সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না।

১৭ ২০

বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বালুচদের হাতে অস্ত্র ওঠার অন্যতম প্রধান কারণ হল এই সিপিইসি। গত কয়েক বছরে এখানকার স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলি এই প্রকল্পে একাধিক হামলা চালিয়েছে। বিএলএ-র আক্রমণে প্রাণ গিয়েছে একাধিক চিনা শ্রমিক ও ইঞ্জিনিয়ারের।

১৮ ২০

আয়তনের নিরিখে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ হল বালুচিস্তান। এখানে রয়েছে ইউরেনিয়াম এবং সোনার খনি। মেলে প্রাকৃতিক গ্যাসও। খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির অন্যতম পিছিয়ে পড়া এলাকা এটি। বালুচদের ৭০ শতাংশই দারিদ্রসীমার নীচে রয়েছেন।

১৯ ২০

ইসলামাবাদের এই বৈমাতৃসুলভ আচরণের কারণে বালুচ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি গত কয়েক বছরে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়েছে। এ বছরের নভেম্বরে রাজধানী কোয়েটার রেলস্টেশনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় বিএলএ, যাতে প্রাণ হারান অন্তত ৩০ জন। আহতের সংখ্যা ৬২ ছাড়িয়েছিল। ওই হামলার পরই সেনা পাঠানোর কথা ঘোষণা করে দেয় বেজিং।

২০ ২০

শেহবাজ় প্রশাসন জানিয়েছে, এ মাসে পাক ভূমিতে পা রাখবে পিএলএ। পাক ফৌজের সঙ্গে যৌথ মহড়ায় যোগ দেবে তারা। চলবে সন্ত্রাস মোকাবিলার কসরৎও। এই মহড়া নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে। লালফৌজ পাকিস্তানে ঢুকলে বালুচিস্তানে অভিযানের অভিমুখ বদল হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement