Hypersonic Missile

৪৮০ কেজি বিস্ফোরক নিয়ে ভীমবেগে হামলা, ‘হাইপারসনিক’ ব্রহ্মাস্ত্রে ভারতের কিস্তিমাত!

প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডি‌আরডিও-র ‘হাইপারসনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দুনিয়া জুড়ে শুরু হয়েছে শোরগোল। এই ব্রহ্মাস্ত্র যুদ্ধের সময়ে খেলা ঘোরাবে, বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৬
Share:
০১ ১৯

চিন-পাকিস্তানের ঘুম উড়িয়ে ‘হাইপারসনিক’ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা করল ভারত। যাকে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাইলফলক বলে চিহ্নিত করছেন সমর বিশেষজ্ঞেরা। শুধু তাই নয়, যুদ্ধের সময়ে এই হাতিয়ার ভারতের জন্য ‘গেম চেঞ্জার’ হতে চলেছে বলেও স্পষ্ট করেছেন তাঁরা।

০২ ১৯

নয়াদিল্লির এই শব্দভেদী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দুনিয়া জুড়ে কেন শোরগোল পড়ে গিয়েছে? এর নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা। বর্তমানে রাশিয়া, চিন এবং আমেরিকার মতো হাতেগোনা তিন-চারটি দেশের কাছেই রয়েছে এই মারণাস্ত্র।

Advertisement
০৩ ১৯

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মূল শক্তি লুকিয়ে রয়েছে এর গতিতে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি শব্দের চেয়ে কমপক্ষে পাঁচ গুণ বেশি জোরে ছুটতে পারে। ফলে রাডার বা ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’র (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) পক্ষে এগুলিকে চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব।

০৪ ১৯

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মূলত দু’ধরনের হয়ে থাকে। একটির নাম ‘হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকলস’। রকেটের মাধ্যমে এগুলি উৎক্ষেপণ করতে হয়। অ্যারোডায়নামিক লিফ্‌ট ব্যবহার করে তা ভীমবেগে লক্ষ্যবস্তুর দিকে এগিয়ে যায়।

০৫ ১৯

দ্বিতীয় ধরনটি হল ‘হাইপারসনিক ক্রুজ় মিসাইল’। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলিতে রয়েছে স্ক্যামজেট ইঞ্জিন। উৎক্ষেপণের পর বাতাসে থাকাকালীন সর্ব ক্ষণ হাইপারসনিক গতি বজায় রাখতে পারে এগুলি। এই দু’য়ের মধ্যে কোন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

০৬ ১৯

উচ্চ গতি সম্পন্ন এই ক্ষেপণাস্ত্রের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল লঞ্চিংয়ের পর প্রয়োজন মতো দিক পরিবর্তন। সাপের মতো এঁকেবেঁকে নিশানার দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এর। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অনেকটা নীচের স্তর দিয়ে ছুটতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। ফলে একে চিহ্নিত করতে পারে না রাডার বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

০৭ ১৯

যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক কম্যান্ডের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার জেনারেল জন হাইটেন বলেছেন, ‘‘হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের লম্বা দূরত্বে উড়ে গিয়ে আঘাত হানার ক্ষমতা রয়েছে। পরমাণু বা প্রথাগত বিস্ফোরক দিয়ে এর মাধ্যমে হামলা করা যেতে পারে।’’

০৮ ১৯

সূত্রের খবর, ভারত যে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে তাকে স্থল, জল ও আকাশ তিন জায়গা থেকেই লঞ্চ করা যেতে পারে। এর পাল্লা দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি। ৪৮০ কেজির বিস্ফোরক নিয়ে আক্রমণ শানাবার ক্ষমতা রয়েছে এই ক্ষেপণাস্ত্রের।

০৯ ১৯

গত বছর (পড়ুন ২০২৩ সাল) হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে ব্রিটেন। সেখানে বলা হয়েছে, স্থলভাগের উপরে তো বটেই, ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার বা সুড়ঙ্গের মতো লক্ষ্যবস্তু উড়িয়ে দিতেও এই মারণাস্ত্রের জুড়ি মেলা ভার। সমুদ্রের বুকে শত্রুপক্ষের বড় জাহাজ ডোবানোর জন্যও এটিকে ব্যবহার করা যেতে পারে।

১০ ১৯

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে চলা ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এ (স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন) হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়া। যার নাম ‘কেএইচ-৪৭এম২ কিলজ়েল’ বলে জানায় মস্কো। এর সাহায্যে ফ্রাঙ্কিভস্ক এলাকার ভূগর্ভস্থ গোলাবারুদের বিশাল গুদাম উড়িয়ে দেয় রুশ বায়ুসেনা।

১১ ১৯

এ ছাড়া ‘৩এম২২ জ়িরকম’ নামের আরও একটি পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম হাইপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে ক্রেমলিনের অস্ত্রাগারে। শব্দের চেয়ে ন’গুণ গতিতে ছুটতে পারে রাশিয়ার এই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’। চিনের ‘পিপলস্ লিবারেশন আর্মি’র (পিএলএ) হাতে থাকা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রে নাম ‘ডিএফ জ়েডএফ’।

১২ ১৯

সরকারি ভাবে ভারতের তৈরি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রটির গতিবেগ প্রকাশ করেনি নয়াদিল্লি। তবে সূত্রের খবর, সেকেন্ডে ৩.০৮৭ কিমি পথ পাড়ি দিতে পারবে এই হাতিয়ার। পুরো পাকিস্তান এবং চিনের ৪৫ শতাংশ এলাকা এর পাল্লার মধ্যে চলে আসছে বলে জানা গিয়েছে।

১৩ ১৯

ভারতের তিন সেনার অস্ত্রাগারে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকার গুরুত্বকে নানা ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত ফৌজি অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল পি আর শঙ্কর। তাঁর কথায়, ‘‘তেল-সহ বিশ্ব বাণিজ্যের বড় অংশই ভারত মহাসাগরীয় এলাকার উপর নির্ভরশীল। এই একটি ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে যাকে সুরক্ষিত করতে পারবে নৌসেনা।’’

১৪ ১৯

দ্বিতীয়ত, চিন ও পাকিস্তান সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বড় ভূমিকা নেবে বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল শঙ্কর। তিনি বলেছেন, ‘‘একের পর এক নতুন হাতিয়ার তৈরি করে দুনিয়া-সহ ভারতকে চমকাচ্ছে বেজিং। হাইপারসনিক অস্ত্র হাতে থাকলে কোনও কিছু করার আগে দু’বার ভাবতে হবে ড্রাগনকে।’’

১৫ ১৯

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে মলাক্কা থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাকে স্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া যাবে। ঠেকানো যাবে চিনের গুপ্তচর জাহাজের দাদাগিরি। আর তাই ভারতের এই সাফল্য ইউরোপ এবং আমেরিকাতেও শোরগোল ফেলে দিয়েছে।

১৬ ১৯

বর্তমানে লম্বা দূরত্বের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির দিকে নজর দিয়েছে আমেরিকার জনপ্রিয় প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘লকহিড মার্টিন’। এর জন্য বহু টাকা বরাদ্দ করেছে ওয়াশিংটন। এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির দিকে নজর রয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, ইজ়রায়েল এবং অস্ট্রেলিয়ার।

১৭ ১৯

চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর ওড়িশার এপিজে আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে লম্বা দূরত্বের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘ডিআরডিও’। পরীক্ষার সময়ে বিভিন্ন পর্যায় মেনে একে ট্র্যাক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।

১৮ ১৯

হারপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার পর প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) তিনি লেখেন, ‘‘এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। উন্নত সামরিক প্রযুক্তি সম্পন্ন দেশগুলির তালিকায় চলে এসেছি আমরা।’’

১৯ ১৯

রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘ব্রহ্মস’ ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে নয়াদিল্লি। এর মার্ক টু ভ্যারিয়্যান্ট হাইপারসনিক গতিসম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু অর্থের অভাবে আপাতত সেই প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে। এই অবস্থায় সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে ফেলল ভারত।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement