এ দেশে যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে এখনও তেমন কথা বলা হয় না। কোনও প্রশ্ন থাকলে চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করতেও সঙ্কোচ বোধ করেন বহু মানুষ। পত্রিকা, ভিডিয়ো, কামসূত্র পড়ে বা দেখেই কৌতূহল দমন করেন তাঁরা। আর মনের মধ্যে পুষে রাখেন হাজারো ভুল ধারণা। সে সব ভুল ধারণার সংখ্যা কিন্তু কম নয়।
যৌন সঙ্গম নিয়ে নানা ভুল ধারণা, জল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল পুরুষাঙ্গের আকার, আকৃতি। মনে করা হয়, পুরুষাঙ্গ আকারে ছোট হলে সংসর্গ সুখও খাটো হয়। কিন্তু বিজ্ঞান অন্য কথা বলছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, যৌনাঙ্গের আকারের উপর সংসর্গ সুখ নির্ভর করে না।
যোনিদ্বারের চার সেন্টিমিটার অংশে সংজ্ঞাবহ স্নায়ু রয়েছে। যা মোট যোনিপথের এক-তৃতীয়াংশ। ওই অংশটুকুই উত্তেজনা অনুভব করে। যৌনতৃপ্তি ঘটে। এর থেকে স্পষ্ট যে, যোনিপথের বাকি দুই-তৃতীয়াংশ কোনও সংজ্ঞা অনুভব করে না। সুতরাং বলা যেতেই পারে, পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য চার সেন্টিমিটার হলেই যথেষ্ট। যা কাজে লাগে না, তা নিয়ে ভাবার কি কোনও প্রয়োজন রয়েছে?
ধারণা রয়েছে, স্ট্রবেরি বা অয়স্টার খেলে যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গবেষকরা বলছেন, বাস্তবের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। এখনও কোনও প্রমাণ মেলেনি যে, এগুলি খেলে যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
মহিলারা প্রায়ই অভিযোগ করেন, যৌনতা নিয়ে পুরুষেরাই বেশি ভাবেন। এমনকি নিজের প্রিয়জনের থেকেও বেশি যৌনতা নিয়ে ভাবেন পুরুষেরা। সঙ্গমের ক্ষেত্রে সব সময় পুরুষেরাই প্রথম পদক্ষেপ করেন।
মহিলাদের এই ধারণার সঙ্গেও বাস্তবের কোনও যোগ নেই। যৌনসঙ্গমের ক্ষেত্রে মহিলারাও পুরুষদের মতোই সক্রিয়। এক জন ১৮ বছর বয়সি পুরুষ যতটা যৌনতা নিয়ে ভাবেন, একই বয়সি মহিলাও ততটাই ভাবেন। আর যৌন সংসর্গের ক্ষেত্রে পুরুষরাই সব সময় প্রথম পদক্ষেপ করেন না। মহিলারাও করেন।
সঠিক সময়ে যৌনক্রিয়ায় ইতি ঘটালে (উইথড্রল) গর্ভধারণের আশঙ্কা থাকে না! অনেক যুগলই এমনটা মনে করেন। যদিও এই ধারণা একেবারেই ভুল। চরম পরিণতির আগেও শুক্রাণু নির্গত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিপদ। চিকিৎসকেরা বলেন, একটি মাত্র শুক্রাণুর কারণেও হতে পারে গর্ভধারণ।
প্রচলিত ধারণা, মহিলারা পর্ন দেখতে পছন্দ করেন না। পুরুষরাই এ সব পছন্দ করেন। এই ধারণাও কিন্তু ভুল।
সমীক্ষা বলছে, পুরুষদের মতো মহিলারাও পর্ন দেখেন এবং তা দেখে যৌন সংসর্গের দৃশ্য কল্পনা করেন। কেমন হবে তাঁদের যৌনজীবন, তা-ও কল্পনা করেন মহিলারা। ঠিক যেমন করেন পুরুষেরা।
মহিলাদের ঋতুচক্র চলাকালীন সঙ্গম করলে তাঁরা গর্ভধারণ করেন না! এই ধারণাও কিন্তু ভুল। ঋতুচক্র চলাকালীন সঙ্গম করলেও সন্তানধারণের সম্ভাবনা রয়েছে।
মহিলাদের মধ্যে শুক্রাণু দীর্ঘ দিন জীবিত থাকতে পারে। ঋতুচক্র শেষ হওয়ার পর ফের তা সক্রিয় হয়ে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঋতুচক্রের সময় সঙ্গমের ফলেও কোনও মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হতে পারেন।
সঙ্গমের সময় মহিলারা যখন চরম সুখ (অর্গাজ়ম) অনুভব করেন, তখন তা জোরালো ভাবে প্রকাশ করেন! এটা কিন্তু সব সময় ঘটে না। অনেক মহিলা চুপিসারে চরম সুখের মুহূর্তে পৌঁছে যান। সে ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিকতা নেই। অনেকেরই এ রকম হতে পারে।
সব মহিলারই একটি ‘জি-স্পট’ থাকে! জি-স্পট যোনিপথের এমন কোনও অংশ, যেখানে উত্তেজনা অনেক বেশি বলে মনে করা হয়। ওই অংশ উত্তেজিত হলে মহিলারা চরম সুখ লাভ করেন।
গবেষকরা বলছেন, এই ধারণাও ভুল। সব মহিলারই যে জি-স্পট থাকবে, এমন কোনও কথা নেই। আর থাকলেও তা যোনিপথেই থাকবে, তারও মানে নেই। অন্য কোনও অঙ্গেও থাকতে পারে সেই জি-স্পট। কোথায় রয়েছে, তা পুরুষ সঙ্গীকেই খুঁজে নিতে হবে।
সঙ্গমের সময় সুখী হলে মহিলারা শীৎকার করেন! কেউ শীৎকার করেন না মানে তিনি সুখী নন! এই ধারণাও কিন্তু ভুল।
অনেক মহিলা যৌনসুখ পেয়েও নীরব থাকেন। পুরুষেরা হয়তো শীৎকার পছন্দ করেন, কিন্তু প্রত্যেক সঙ্গী তা করবেন, এর কোনও মানে নেই। যদি না করেন, তা মেনে নেওয়াই ভাল। ছবি: সংগৃহীত