করোনা অতিমারির পর থেকেই অফিসে নয়, বাড়ি থেকে কাজ করতেই বেশি উৎসাহী কর্মীরা। সমীক্ষা বলছে, অধিকাংশ কর্মী কাজের ক্ষেত্রে হাইব্রিড মডেলই বেশি পছন্দ করছেন। অর্থাৎ, যেখানে বাড়ি থেকে এবং অফিসে গিয়ে দু’ভাবেই কাজ করার সুযোগ আছে।
দেশ-বিদেশের নামীদামি বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকে সময়সীমা বদলে বদলে কাজ করার জন্য বলা হচ্ছে। কোথাও দু’দিন করে দফতরে এসে কাজ করে বাকি দিন বাড়ি থেকে করতে বলা হচ্ছে।
কর্মীরাও উৎসাহী, কারণ যাতায়াতের সময়টাও বেঁচে যাচ্ছে। কাজের পরিমাণ বাড়ছে, একই সঙ্গে কমছে মানসিক চাপও।
অনলাইন এবং অফলাইনে কাজের সুযোগের সঙ্গে আরও একটি বিষয় বর্তমানে চর্চার বিষয়বস্তু হয়ে উঠছে। সেটি হল ‘হট ডেস্কিং’। এটি হল অফিসে কাজের জায়গা ভাগাভাগি করে নেওয়া।
বহু সংস্থায় হট ডেস্কিংই এখন বিকল্প হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কোনও অফিসে পর্যাপ্ত কাজের জায়গা না থাকলে সেই সমস্যার সমাধান এই ‘হট ডেস্কিং’। বহু সংস্থাও অফিসের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আটকাতে সমাধান হিসাবে বেছে নিচ্ছে এই বিকল্পকেই।
যেখানে প্রতিটি স্থান কোনও নির্দিষ্ট কর্মীর জন্য সংরক্ষিত না হয়ে যে কোনও কর্মচারীর জন্য তা বরাদ্দ করা যেতে পারে। একাধিক কর্মী দিন বা সপ্তাহে একই জায়গা ব্যবহার করতে পারেন।
হট ডেস্কিং হল একটি ওয়ার্কস্পেস মডেল যেখানে কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত কোনও ডেস্ক নেই। তার পরিবর্তে অফিসে যে কোনও ডেস্ক বা ওয়ার্কস্পেস থেকে কাজ করতে পারবেন কর্মীরা।
এই মডেলটি এমন কাজের জন্য আদর্শ, যেখানে প্রচুর সংখ্যক কর্মচারী রয়েছেন যাঁদের স্থায়ী ডেস্ক বা কাজের সময়সূচির প্রয়োজন নেই।
কর্মীরা সাধারণত ফোন বা ল্যাপটপে লগ ইন করে নেটওয়ার্কে থাকা যে কোনও ডেস্ক ব্যবহার করতে পারেন। ক্লাউড-ভিত্তিক সিস্টেমগুলিতে রয়েছে ভিওআইপি যোগাযোগ। ভার্চুয়াল মাধ্যমে কর্মীরা অফিস বা বাড়ি বা নিজেদের পছন্দ মতো জায়গা থেকে কাজ করতে পারেন।
নতুন এই ব্যবস্থায় কর্মীদের সুবিধা হলেও এতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, হট ডেস্কিং বা ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কারণে সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করেছেন সহকর্মীরা।
বোর্নমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানিয়েছেন, পরবর্তী তিন বছরের মধ্যেই সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে স্থান পাবে অফিসে গিয়ে কাজ না করার বিষয়টি। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা হল শারীরিক ভাবে মানুষের থেকে দূরে থাকা। যেমন, অন্য কারও সঙ্গে দেখা না করা বা কথা না বলা।
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা হল যখন কেউ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান না বা একাকী বাস করতে পছন্দ করেন। গবেষণা বলছে, একাকিত্ব অনুভব না করলেও অনেকেই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকাকে স্বাভাবিক, এমনকি আরামদায়ক মনে করেন।
কারণ অতিমারির সময়ে যে ব্যবসায়ী বা কর্মীরা অপেক্ষা করতেন অফিসে গিয়ে কাজ করার জন্য, তাঁরাও এখন আর বিশেষ উৎসাহ দেখাচ্ছেন না।
ছোট ছোট সংস্থা, বিশেষত স্টার্ট আপের মতো সংস্থাগুলি ব্যয়ের চাপ কমাতে কর্মীদের বসার ব্যবস্থা না করতে পেরে হট ডেস্কিংয়ের মতো বিকল্পই বেছে নিচ্ছে।