এই মুহূর্তে দেশের সব থেকে ধনী শিল্পপতি মুকেশ অম্বানী। বিশ্বের সবচেয়ে বিত্তশালীদের তালিকাতেও তাঁর নাম রয়েছে একেবারে প্রথম দিকে। মুকেশ রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান। ২০২৯ সাল পর্যন্ত তিনি রিলায়্যান্সের চেয়ারম্যান থাকবেন। তবে এ বার উত্তরসূরিদেরও দায়িত্ব বুঝিয়ে জায়গা পাকা করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন মুকেশ। আকাশ, ঈশা, অনন্তদের মঞ্চ তৈরি করে দেওয়ার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে জোরকদমে।
নতুন কৌশলগত পদক্ষেপে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ় লিমিটেড (আরআইএল)-এর নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনছে অম্বানীরা। মুকেশের কন্যা ঈশা এবং দুই পুত্র আকাশ ও অনন্তের নাম আরআইএল-এর পরিচালনা পর্ষদের নয়া ডিরেক্টর হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আরআইএল-এর বার্ষিক সাধারণ সভার আগে ঈশা, আকাশ, অনন্তকে নন-এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর পদে নিয়োগের প্রস্তাবে সায় দেয় সংস্থার পর্ষদ। তবে তাঁরা ডিরেক্টর পদে বসবেন কি না, তা চূড়ান্ত করতে শেয়ারের অংশীদারদেরও অনুমতি প্রয়োজন।
রিলায়েন্স গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, ধীরুভাই অম্বানীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর ‘রিলায়্যান্স ফ্যামিলি ডে’র আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানেই বোর্ডের নতুন ডিরেক্টরদের নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
এর আগে ধাপে ধাপে আরআইএল-এর মালিকানাধীন বিভিন্ন সংস্থার রাশ তিন সন্তানের হাতে ছেড়েছেন মুকেশ। আরও কয়েকটি সংস্থার দায়িত্বভার তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া বাকি। তার মধ্যেই গোষ্ঠীর পরিচালনা পর্ষদেও নিযুক্ত করা হল মুকেশের তিন সন্তানকে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আগে থেকেই কোন কোন সংস্থার দায়িত্ব রয়েছে ঈশা, আকাশ, অনন্তের কাঁধে।
ভারতের ডিজিটাল বিপ্লব ঘটানোর দাবি করেছে রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর টেলিকম সংস্থা জিয়ো। সেই সংস্থার দায়িত্ব আপাতত আকাশের। তিনি জিয়ো ইনফোকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান।
মুকেশের হাত ধরে বাজারে আসা এই টেলিকম সংস্থা যাত্রা শুরুর কয়েক বছরে মধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে। বর্তমানে ৫জি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে চলেছে জিয়ো। জিয়োর মাধ্যমে ভারতের প্রযুক্তিগত ভবিষ্যতকে নতুন রূপ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন আকাশ।
রিলায়্যান্স রিটেলের দায়িত্বে রয়েছেন মুকেশ কন্যা ঈশা। খুচরা ব্যবসায় ঈশার নেতৃত্ব উল্লেখযোগ্য। ঈশা দায়িত্ব নেওয়ার পর এই ব্যবসার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হয়েছে। দু’লাখেরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করেছে রিলায়্যান্স রিটেল।
মুকেশের কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত রিলায়্যান্স এনার্জির গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। অনন্তের নেতৃত্বে অম্বানীদের শক্তি ও জ্বালানি ক্ষেত্রের ব্যবসা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস অম্বানীদের।
এ বার তিন সন্তানের হাতে নতুন দায়িত্ব তুলে দিতে চলেছেন মুকেশ। তবে এই দায়িত্বের পালাবদলকে শুধু পারিবারিক উত্তারাধিকার হিসাবে মেনে নিতে নারাজ অম্বানী পরিবার। তাঁদের মতে, দক্ষ নেতৃত্বের হাতেই তুলে দেওয়া হচ্ছে গোষ্ঠীর দায়ভার।
এর আগে মুকেশ একাধিক বার মন্তব্য করেছেন যে, রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধ থেকে তিনি পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরি করতে প্রস্তুত।
সূত্রের খবর, সন্তানেরা ডিরেক্টর হিসাবে যাত্রা শুরুর আগে তাদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে চলেছেন মুকেশ। কী ভাবে রিলায়্যান্স গোষ্ঠী আর্থিক ভাবে আরও শক্তিশালী হতে পারে, তা নিয়েও নাকি বাবার সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলোচনা চলছে পুত্র-কন্যাদের।
প্রতি বছর ধীরুভাইয়ের জন্মবার্ষিকী হিসাবে ২৮ ডিসেম্বর ‘রিলায়্যান্স ফ্যামিলি ডে’ পালন করা হয়। সেই দিনই তিন ভাই-বোনের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে নতুন দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ধীরুভাই ১৯৫৮ সালে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাণিজ্য এবং শিল্পে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ সম্মান দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় বাণিজ্যের অন্যতম পথিকৃৎ শিল্পপতি হওয়া সত্ত্বেও ধীরুভাইয়ের বিরুদ্ধে কারসাজি, কর ফাঁকির অভিযোগ উঠেছিল।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৯ সাল পর্যন্ত রিলায়্যান্সের চেয়ারম্যান থাকবেন মুকেশ। এই সময়ের মধ্যে, তিনি গোষ্ঠী থেকে বার্ষিক বেতন বাবদ এক টাকাও না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে এই বেতন না নেওয়ার জন্য মুকেশের বিপুল অর্থভান্ডারে বিশেষ কোনও প্রভাব পড়েনি। একটি ব্যবসায়িক পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে মুকেশের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭,৩৫,৮৮০ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, মুকেশের তিন সন্তান পরিচালনা পর্ষদে জায়গা করে নিলেও পর্ষদ থেকে সরছেন স্ত্রী নীতা। পাঁচ বছর পর চেয়ারম্যান এবং চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদ থেকে সরবেন মুকেশও।