অতিমারির সময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দ্বিপাক্ষিক সামরিক কার্যকলাপ। সেই কার্যকলাপই আবার শুরু করতে চলেছে নেপাল এবং চিন। এর ফলে কি ফের কাছাকাছি আসতে চলেছে দুই দেশ? দুশ্চিন্তার কারণ থাকছে ভারতেরও?
নেপালের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অতিমারির আগে দুই দেশের সামরিক বাহিনী একসঙ্গে মহড়া দিত, শরীরচর্চা করত। চিনে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিত নেপালি সেনা। সেগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কাঠমাণ্ডু পোস্ট জানিয়েছে, দুই দেশের এই সামরিক কার্যকলাপই ফের শুরু হতে চলেছে।
চিনে গিয়ে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি)-এ প্রশিক্ষণ নিতে পারবে নেপালের সেনা। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সামরিক কার্যকলাপকে বলে ‘সাগরমাথা মৈত্রী’। সেই উদ্যোগের অধীনে এই প্রশিক্ষণ।
নেপালের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গত বুধবার চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির তিব্বত মিলিটারি কমান্ড মেজর জেনারেল ইউ অ্যান্ডি পাঁচ দিনের সরকারি সফরে কাঠমাণ্ডুতে গিয়েছিলেন।
কাঠমাণ্ডু পৌঁছে বুধবারই নেপালের সেনাপ্রধান প্রভু রাম শর্মার সঙ্গে কথা বলেন অ্যান্ডি। সেনার একটি সূত্র বলছে, দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক মজবুত করার জন্যই চলেছে আলোচনা।
নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কৃষ্ণপ্রসাদ ভাণ্ডারি বলেন, ‘‘এই বৈঠকের নেপথ্যে গুপ্ত কোনও কারণ রয়েছে কি না, আমি জানি না। তবে মনে করা হচ্ছে, দুই দেশের সেনার মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতেই এই বৈঠক।’’
ওই বৈঠকের পরেই দ্বিপাক্ষিক সামরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কবে থেকে সামরিক কার্যকলাপ শুরু হবে, সেই দিনক্ষণ এখনও জানাননি ভাণ্ডারি। ২০১৭ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে চলছে এই সামরিক কার্যকলাপ।
সেনার একটি সূত্র জানিয়েছে, অনুপ্রবেশ রোখা, বিপর্যয় মোকাবিলা এবং উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্যেই একে অপরের হাত ধরতে চাইছে দুই দেশ। তাতেই কি কিছুটা হলেও চাপ বাড়ছে ভারতের? উঠছে প্রশ্ন।
সামরিক কর্তাদের পাশাপাশি দুই দেশের সরকারি প্রশাসকদেরও কথাবার্তা চলেছে। কুনমিংয়ে বাণিজ্য প্রসারের চিন-দক্ষিণ এশিয়া এক্সপো চলছিল। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় নেপালকে। ১০০ জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে উপস্থিত হয় নেপাল। সেই কর্মসূচির পাশেই নেপালের ভাইস প্রেসিডেন্ট রামশে প্রসাদ যাদবের সঙ্গে বৈঠক করেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং য়ি।
এর পরেই চিনের বিদেশ মন্ত্রক একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। সেখানে যাদব এবং ওয়াং য়ির একটি কথোপকথন তুলে ধরা হয়েছে। যাদব জানিয়েছেন, নেপাল এবং চিন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগী। কৌশলগত সহযোগিতার ক্ষেত্রেও দুই দেশের সম্পর্ক আরও গাঢ় হতে চলেছে।
নেপালের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গিয়েছে, চিনের বিদেশমন্ত্রীও যাদবের সুরেই কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাবে। বন্ধুত্ব আরও মজবুত হবে।
দুই দেশ মিলে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকে নজর দেবে বলেও জানিয়েছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, হিমালয় এবং সংলগ্ন অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করার দিকে নজর দেওয়া হবে। এতে চিনের পাশে থাকবে নেপালও।
এ ছাড়া বাণিজ্যের প্রসার নিয়েও কথা হয়েছে দুই দেশের। নেপালে উৎপাদিত কৃষিজাত দ্রব্য যেন চিন আমদানি করে সে বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন যাদব। তবে চিন তাতে রাজি হয়েছে কি না, জানা যায়নি।
চিনের তরফে দাবি করা হয়েছে, নেপাল তাদের আশ্বাস দিয়েছে, চিন-বিরোধী কার্যকলাপের জন্য নিজেদের জমি ব্যবহার করতে দেবে না। এ জন্য নেপালের প্রশংসাও করেছে চিন।
চিনের আরও দাবি, নেপালের শাসক এবং বিরোধী দল বরাবরই চিনের সঙ্গে বন্ধুত্বের পক্ষপাতী। বিদেশমন্ত্রী ওয়াং জানিয়েছেন, এই দুই দেশের বন্ধুত্ব ‘পাহাড় এবং নদীর মতো’।
মনে করা হচ্ছে, এ ভাবে আসলে ভারতকেই বার্তা দিতে চাইছে চিন। সে কারণেই নেপালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি। যা তারা আগেও করেছে।
তবে চিনের সঙ্গে শুধু নয়, ভারতের সঙ্গেও নেপালের সেনাবাহিনীর দ্বিপাক্ষিক কার্যকলাপ রয়েছে। বার্ষিক এই উদ্যোগকে বলে ‘সূর্য কিরণ’। দুই দেশের সেনাবাহিনী এক সঙ্গে মহড়া দেয়।
ভারত এবং চিনের মধ্যে ১,৮৫০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সেই সীমান্তে নিরাপত্তা বজায় রাখতে, উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানের উদ্দেশ্যে দুই দেশের সেনাবাহিনী দ্বিপাক্ষিক কার্যকলাপে অংশ নেয়। দুই দেশের সেনা যৌথ ভাবে বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের কাজেও নামে।
গত ১৮ বছর ধরে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে এই কার্যকলাপ চলছে। এতে প্রতি বছর উভয় পক্ষ থেকে ৩০০ জন করে জওয়ান অংশগ্রহণ করেন। এ বার চিনের সঙ্গে সেই দ্বিপাক্ষিক সামরিক কার্যকলাপ শুরু। এর প্রভাব কি পড়বে ‘সূর্য কিরণ’-এ? উঠছে প্রশ্ন।