নব্বইয়ের দশকের ব্লকবাস্টার ছবি, কমেডি ঘরানার ছবি হিসাবে হিন্দি ফিল্মজগতে সেই সময় প্রথম সারিতে নাম লিখিয়েছিল বলি অভিনেতা গোবিন্দের সিনেমা। সেই ছবিতে অভিনয় করেছিল একটি বাঁদরও। বলিপাড়া সূত্রে খবর, ওই বাঁদরটি নাকি গোবিন্দের চেয়েও বেশি উপার্জন করেছিল।
১৯৯৩ সালে ডেভিড ধওয়ানের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘আঁখে’ ছবিটি। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গোবিন্দ এবং চাঙ্কি পান্ডে।
হাস্যকৌতুকে মোড়া কোনও চরিত্র নিপুণ ভাবে বড় পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে দক্ষ গোবিন্দ এবং চাঙ্কি দু’জনেই। তার উপর আবার পরিচালকের আসনে ডেভিড। ডেভিড এবং গোবিন্দ নব্বইয়ের দশকে যে ছবিতেই পরিচালক-অভিনেতা হিসাবে জুটি বেঁধেছেন, তার অধিকাংশই কমেডি ঘরানার ছবি হিসাবে দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে সফল হয়েছে। ‘আঁখে’ ছবিটিও এর ব্যতিক্রম ছিল না।
গোবিন্দ এবং চাঙ্কি পান্ডে ছাড়াও ‘আঁখে’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শিল্পা শিরোদকর, রীতু শিবপুরি। রাজ বব্বর এবং শক্তি কপূরের মতো অভিনেতারাও ছিলেন এই ছবিতে। তবে ছবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিল একটি বাঁদর।
পুরনো এক সাক্ষাৎকারে চাঙ্কি জানিয়েছিলেন, ‘আঁখে’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করে গোবিন্দ বা তিনি যা আয় করেছিলেন, তার থেকে অনেক বেশি উপার্জন করেছিল বাঁদরটি।
চাঙ্কি জানান, ‘আঁখে’ ছবিতে অভিনয় করে গোবিন্দ এবং তিনি দু’জনেই ১৮ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক পান। কিন্তু বাঁদরটিকে তার থেকেও বেশি পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।
‘আঁখে’ ছবিতে যে বাঁদরটিকে ব্যবহার করা হয়েছিল তার জন্য ২০ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।
চাঙ্কি বলেন, ‘‘বাঁদরটি কিন্তু খুব দামি ছিল। দক্ষিণ ভারত থেকে তাকে সেটে নিয়ে আসা হয়েছিল। বাঁদরের সঙ্গে আবার ছ’জন সহযোগীও ছিল।’’
বাঁদরটিকে বিলাসবহুল হোটেলে রাখার আয়োজন করা হয়েছিল বলে জানান চাঙ্কি। সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেন, ‘‘বাঁদরটিকে দেখে মনে হত যেন ওই-ই সবথেকে বড় তারকা। সেটে ওর জন্য কত কী যে হয়েছে, তা বলার নয়। তবে ওকে সকলে খুব ভালবাসত।’’
চাঙ্কির দাবি, ‘আঁখে’ ছবির শুটিংয়ের সময় নাকি একাধিক বার তাঁকে কামড়ে দিয়েছিল বাঁদরটি। চাঙ্কি বলেন, ‘‘ওকে নিয়ে শুটিং করতে গিয়ে আমি নাজেহাল হয়ে যেতাম। আমাকে কামড়েওছিল ও। সে কারণে ইনজেকশনও নিতে হয়েছিল আমাকে।’’
কপিল শর্মার শোয়ে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গোবিন্দ তাঁর স্ত্রী সুনীতা আহুজা। সেই সময় ‘আঁখে’ ছবি নিয়ে প্রশ্ন করা হয় গোবিন্দকে। কপিল মজার সুরে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘ওই বাঁদরটি কি চাঙ্কির সঙ্গে একই ঘরে থাকতেন না কি তার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা ছিল?’’
কপিলের প্রশ্নে গোবিন্দ বলেন, ‘‘ওই বাঁদরের গায়ে হাত দেওয়াই চাঙ্কির জন্য বড় ব্যাপার ছিল। তার উপর আবার একই ঘরে থাকা!’’
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বাঁদরটির হাবভাব নিয়ে মুখ খুলতে দেখা যায় ‘আঁখে’ ছবির প্রযোজক পাহলাজ নিহালানিকে। পাহলাজ জানান, বাঁদরটিকে চেন্নাই থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল তাকে। সেটে কোনও কিছু তছনছ করেনি সে।
পাহলাজ জানান, বাঁদরটির গায়ে শক্তি ছিল প্রচুর। তার কাজকর্ম দেখে সকলে অবাক হয়ে যেত। পাহলাজ বলেন, ‘‘এমন অনেক সময় হয়েছে যখন রীতুর কোলে উঠে বসে পড়ত। রীতুর জামার বোতাম নিয়ে খেলা করত।’’
পাহলাজ জানান, যখন শুটিং থাকত না তখন নাকি ধূমপান করত বাঁদরটি। অবসর সময়ে পান করবে বলে তার জন্য আলাদা করে নাকি মদের ব্যবস্থাও করা হত বলে দাবি করেন পাহলাজ।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, মুক্তি পাওয়ার পর ‘আঁখে’ এতটাই জনপ্রিয় হয় যে, একটানা ১২ সপ্তাহ প্রেক্ষাগৃহে এই ছবিটি চলে।
প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ করে বানানো হয়েছিল ‘আঁখে’ ছবিটি। কিন্তু মুক্তির পর বক্স অফিসে ছবিটি ৪৫ কোটি টাকার ব্যবসা করে।