World War II

মাফিয়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিউ ইয়র্ক বন্দর রক্ষা করে আমেরিকার সেনা! বদলে যায় ইতিহাস

অন্য রকম হতে পারত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফল। হিটলারের নাৎসি বাহিনীই হয়তো রাজত্ব করত গোটা দুনিয়ায়। যদি না দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার নৌবাহিনীকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতেন মাফিয়ারা।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৪৮
Share:
০১ ১৬

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। জার্মানির নাৎসি বাহিনীর হাত থেকে বাঁচাতে হবে নিউ ইয়র্ক বন্দর। চিন্তায় আমেরিকান নৌবাহিনী। সে সময় সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন মৎস্যজীবী আর মাফিয়ারা। শেষ পর্যন্ত রক্ষাও পেয়েছিল নিউ ইয়র্ক বন্দর। সে গল্প সিনেমার থেকে কিছু কম নয়।

০২ ১৬

১৯৪২ সালের ১৩ জুন। নিউ ইয়র্কের কাছে লং আইল্যান্ডে ভেসে ওঠে জার্মান ডুবোজাহাজ ইউ-বোট। তার পরেই লং আইল্যান্ডে অচেনা লোকের গতিবিধি চোখে পড়ে।

Advertisement
০৩ ১৬

জার্মান গুপ্তচর জর্জ ডাশের নেতৃত্বে চার গুপ্তঘাতক ঢুকেছিল নিউ ইয়র্কে। উদ্দেশ্য ছিল, লং আইল্যান্ডে বালির নীচে বিস্ফোরক পুঁতে রাখা। অ্যাস্টোরিয়ার হেলগেট সেতু উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল জার্মানরা। সে কারণেই পাঠানো হয়েছিল জর্জদের।

০৪ ১৬

আমেরিকার নৌবাহিনীর গুপ্তচর লেফটেন্যান্ট জেনারেল চার্লস র‌্যাডক্লিফ হাফেনডেনের কানেও এই খবর আসে। তিনি বিশেষ সূত্রে জানতে পারেন লং আইল্যান্ডের পূর্ব দিকে কয়েক জন সন্দেহভাজন ঘোরাফেরা করছে। তিনি যদিও গতানুগতিক ভাবে নিজের কাজটা করতেন না। তাঁর খবর সংগ্রহের উৎসও ছিল অন্য রকম। হাফেনডেন খবরের জন্য ভরসা করতেন মাফিয়া এবং গুন্ডাদের উপর।

০৫ ১৬

লং আইল্যান্ডে সন্দেহভাজনদের ঘোরাফেরা করতে দেখে এক সরাইখানায় বৈঠকে বসলেন হাফেনডেন। যে মাফিয়ারা তাঁকে খবর দিতেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেন। মাফিয়াদের এই দলটি বড় ভূমিকা নিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। অনেক দূতাবাসে ছলচাতুরি করে ঢুকে খবর নিয়ে আসতেন তাঁরা। আর বন্দরের খবর সংগ্রহ করতেন মৎস্যজীবীদের থেকে।

০৬ ১৬

হাফেনডেনের নিউ ইয়র্ক বন্দর বাঁচানোর এই উদ্যোগ নিয়ে একটি বই লেখেন ম্যাথিউ ব্ল্যাক। বইয়ের নাম ‘অপারেশন আন্ডারওয়ার্ল্ড: হাউ দ্য মাফিয়া অ্যান্ড দ্য ইউএস গভর্নমেন্ট টিমড আপ টু উইন ওয়ার্ল্ড ওয়ার’। লেখক ম্যাথিউ জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমেরিকান নৌবাহিনী বুঝতে পারে নিউ ইয়র্কের বন্দর রক্ষার মতো যথেষ্ট পরিকাঠামো নেই তাঁদের। গুপ্তচরবৃত্তির জন্য স্থানীয় দোকানি, মৎস্যজীবীদের উপর ভরসা করতে শুরু করে তারা। কিন্তু স্থানীয়রাই আমেরিকার নৌসেনাকে পছন্দ করতেন না।

০৭ ১৬

হাফেনডেন মাফিয়াদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন, তাঁরাও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকাকে সাহায্য করতে চান। তাঁরাও দেশকে ভালবাসেন। নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়তে চান। সেটা বুঝেই তাঁদের উপর বন্দরে নজরদারির ভার দেন। সেই কাজটা সফল ভাবে করেও ছিলেন মাফিয়ারা।

০৮ ১৬

জার্মান সেনা নিউ ইয়র্ক বন্দর আক্রমণ করবে জানতে পেরে হাফেনডেন নতুন পরিকল্পনা নেন। মাঝরাতে দেখা করেন ফুলটন মাছের বাজারের একচ্ছত্র অধিপতি ফ্র্যাঙ্ক ‘সকস’ লানজা। তিনি ছিলেন ঘোরতর হিটলার-বিরোধী। মুসোলিনিকেও সহ্য করতে পারতেন না। সে কারণে হাফেনডেনকে সাহায্য করতে রাজি হয়ে যান।

০৯ ১৬

দায়িত্ব পেয়ে কাজে নেমে পড়েন সকস। তিনি আবার গুপ্তচরবৃত্তির কাজে নিয়োগ করেন দাগী আপরাধী লাকি লুসিয়ানোকে। এই লাকি বহু বছর জেলে ছিলেন। তাই তাঁর সঙ্গে দেখা করা খুব সহজ ছিল না।

১০ ১৬

নৌসেনা আবার এই গোটা বিষয়ে আমেরিকার ফেডেরাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-কে কিছু জানাতে চায়নি। গোটা বিষয়টি খুব গোপন ভাবে করিয়েছিল তারা। লুসিয়ানোকে কাজে লাগানোর জন্য তাঁকে এক জেল থেকে অন্য জেলে আনানো হয়েছিল। লুসিয়ানো নিজে এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না।

১১ ১৬

নতুন সেই জেলে বসেই লুসিয়ানোর সঙ্গে বৈঠক হত সকস, নৌবাহিনীর গুপ্তচর হাফেনডেনের। সকস লানজার মতো লুসিয়ানো দেশপ্রেমী ছিলেন না। নৌবাহিনীকে সাহায্যের পরিবর্তে শর্ত দিয়েছিলেন তিনি। জেলে বসেই নিজের গ্যাংয়ের কাজকর্ম চালাতে চেয়েছিলেন।

১২ ১৬

জেলে বসে সকসের সঙ্গে নিউ ইয়র্ক বন্দর বাঁচানোর পরিকল্পনা করতেন লুসিয়ানো। লেখল ব্ল্যাক দাবি করেছেন, ওই সময়ে নিজের গ্যাংয়ের সদস্যদের সঙ্গে অন্তত ২০ বার বৈঠক করেছিলেন।

১৩ ১৬

সে বারের মতো জার্মান সেনার নিউ ইয়র্ক বন্দর দখলের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছিলেন হাফেনডেন। পাশে ছিলেন মাছ ব্যবসার সম্রাট সকস আর মাফিয়া লুসিয়ানো। এক বছর পর এঁদের সাহায্য নিয়েই ইটালির সিসিলি দখল করে আমেরিকার নৌবাহিনী।

১৪ ১৬

ইউরোপে লড়াই করার মতো ক্ষমতা সে সময় ছিল না আমেরিকারা। সিসিলি দখল ছিল দূরের স্বপ্ন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের যা মানচিত্র, নথি, গোপন খবর আমেরিকার হাতে ছিল, তা সবই পোড়ানো হয়েছিল। ফলে ইউরোপে নিয়ে এক প্রকার অন্ধকারে ছিল আমেরিকা। সেই যোগসূত্র ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছিলেন মাফিয়া লুসিয়ানো।

১৫ ১৬

লুসিয়ানো এক কালে সিসিলিরই বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর পূর্বপরিচিতদের মাধ্যমেই ফের গোপন নথি জোগার করছিলেন লুসিয়ানো আর তা দিচ্ছিলেন আমেরিকার নৌবাহিনীকে।

১৬ ১৬

১৯৪৩ সালে সিসিলি দখল করে মিত্রশক্তি। তাতে বড় ভূমিকা ছিল লুসিয়ানোর। সিসিলি দখলের পর আমেরিকার মাফিয়ারাই সেখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলেন। স্থানীয় মাফিয়াদের সঙ্গেও যোগাযোগ গড়ে তোলেন। তাঁদের বোঝান, মিত্র শক্তি আসলে হিটলার-বিরোধী। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের শত্রুতা নেই। সে দিন মাফিয়ারা সাহায্যে জন্য এগিয়ে না এলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফল অন্য রকম হতে পারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement