ভবিষ্যতের কাজ এখনই গুছিয়ে রাখতে শুরু করে দিয়েছে নাসা! আমেরিকার মহাকাশ গবেষণাকারী ওই সংস্থার দাবি, বছর তিনেকের মধ্যে চাঁদের মাটিতে পা রাখবেন মহাকাশচারীরা। তাঁদের জন্যই সম্ভাব্য ‘আস্তানা’ খোঁজা হয়ে গিয়েছে। এ বার বাকি শুধু ঘোষণার কাজ। শীঘ্রই সে শুভকাজ সেরে ফেলবে নাসা।
মহাকাশচারীদের জন্য চাঁদের কোথায় ল্যান্ডিং অঞ্চল গড়বে নাসা? এ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানা যেতে পারে আগামী শুক্রবার। সে দিন সংবাদিক সম্মেলন ডেকেছে নাসা। সূত্রের খবর, ওই দিনই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সেই সম্ভাব্য অঞ্চল সম্পর্কে আলোকপাত করবে তারা।
‘আর্টেমিস-৩’ নামের এক মিশনের অঙ্গ হিসাবে এ কাজ শুরু করেছে নাসা। ওই মিশনের অঙ্গ হিসাবেই ২০২৫ সালে মহাকাশচারীদের চাঁদে পাঠানোর বন্দোবস্ত করবে তারা।
বস্তুত, ‘আর্টেমিস-৩’ মিশনটি সফল হলে ১৯৭২ সালে ‘অ্যাপোলো-১৭’ মিশনের পর এই প্রথম চাঁদে পা রাখবেন নাসার মহাকাশচারীরা।
এ বার ফিরে আসা যাক চাঁদের পা রাখার জায়গাগুলির কথায়। নাসা সূত্রে খবর, প্রতিটি অঞ্চলেই অনেকগুলি সম্ভাব্য ল্যান্ডিং সাইট রয়েছে। কিসের ভিত্তিতে অঞ্চলগুলি বেছে নেওয়া হয়েছে, তা-ও জানিয়েছে নাসা।
এ ক্ষেত্রে ওই এলাকাগুলির ভূখণ্ড, সেখান থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সুবিধা ছাড়াও সেখানকার আলোর অবস্থাও নাসার বিজ্ঞানীদের মাথায় রাখতে হয়েছে। সর্বোপরি, বৈজ্ঞানিক কার্যকলাপের তা কার্যকরী হবে কি না, সে দিকেও খেয়াল রেখেছেন বিজ্ঞানীরা।
চাঁদের প্রতিটি অঞ্চলের মূল্যায়ন করতে আরও বৈজ্ঞানিকদের মতামত গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছে নাসা। প্রসঙ্গত, মহাকাশের আরও গভীরে গিয়ে মহাকাশচারীদের দিয়ে অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যেই ‘আর্টেমিস-১’ নামে একটি মিশনের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। ওই মিশনে গিয়ে চাঁদে ফেরার পরিকল্পনাও রয়েছে নাসার।
নাসা জানিয়েছে, ‘আর্টেমিস-১’ নামের ওই মিশনে শামিল করা হয়েছে ওরিয়ন মহাকাশযান, মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য এসএলএস রকেট এবং ফ্লরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের গ্রাউন্ড সিস্টেম।
‘আর্টেমিস-১’ মিশনের আওতায় একাধিক মিশন রয়েছে। এর প্রথমটিতে অবশ্য কোনও মহাকাশচারী ছাড়াই যাত্রা শুরু করবে মহাকাশযান।
নাসা জানিয়েছে, ২৯ অগস্ট কেনেডি স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চ প্যাড ৩৯বি’ থেকে ওই মনুষ্যহীন মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হবে। ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যে তা মহাশূন্যে যাত্রা করবে।
নাসা আরও জানিয়েছে, প্রথম মিশনের সময়সীমা ৪২ দিন ৩ ঘণ্টা এবং ২০ মিনিটের। লক্ষ্য— চাঁদের চারপাশের বিপরীতমুখী কক্ষপথ। চাঁদে এবং তার বাইরেও অনুসন্ধানের চেষ্টা করবে ওই যানটি।
গোটা মিশনে মহাকাশযানটি অন্তত ২০ লক্ষ ১০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। নাসা সূত্রে খবর, এই মিশনটি সফল ভাবে শেষ হওয়ার পর ১০ অক্টোবর সান দিয়েগোর অদূরে প্রশান্ত মহাসাগরের উপরে একটি ‘স্প্ল্যাশডাউন সাইটে’ ফিরে আসবে মহাকাশযানটি। সে সময় যানটির গতিবেগ হবে প্রতি ঘণ্টায় ২৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ কিলোমিটার।
নাসার দাবি, প্রথম মিশনে উড়ানের সময় ওরিয়ন থেকে উৎক্ষেপিত রকেটটি এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট। এমনকি, আজ পর্যন্ত কোনও মহাকাশযান এতটা দূরে ওড়েনি। মিশন চলাকালীন এটি পৃথিবী থেকে ৪৫০,০০০ কিলোমিটার এবং চাঁদের থেকে ৬৪,০০০ কিলোমিটার দূরে যাত্রা করবে বলে জানিয়েছে নাসা।
নাসা সূত্রে খবর, ওরিয়ন মহাকাশযানটি কোনও মহাকাশ স্টেশনে ঘাঁটি না গেড়েই সফর চালিয়ে যাবে। এই মিশনে ওরিয়নের পাশাপাশি এসএলএস রকেটেরও ক্ষমতা জানা যাবে বলে আশা করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশ গবেষণাকারীদের আশা, এই মিশনটি সফল হলে ভবিষ্যতে প্রথম বার কোনও মহিলা বা অশ্বেতাঙ্গ মহাকাশচারীকে চাঁদে বা তার কাছাকাছি পাঠানোর পথ সুগম হতে পারে।
‘আর্টেমিস-১’ মিশনের মাধ্যমে চাঁদ ছাড়াও মহাকাশের গভীরে এবং মঙ্গলে টেস্টিং সিস্টেম গড়তে চায় নাসা। এ কাজে আন্তর্জাতিক অংশীদারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পার্টনারশিপ গড়তে চায় তারা। তা বাস্তবায়িত হলে, নাসার জগতে সেটিও প্রথম বার হবে।