চন্দ্রজয় করেছে ভারত। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযানের সফল অবতরণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ভারত। ১৪ দিন ধরে চাঁদের দেশের অচেনা দিকগুলি পৃথিবীকে চেনানোর কাজে লেগে পড়েছে চন্দ্রযান-৩-এর রোভার প্রজ্ঞান। মহাকাশে ভারতের ইতিহাস তৈরির পর থেকেই তামাম দুনিয়ার নজরে এখন ‘চাঁদমামা’।
আকাশে ওই রুপোলি রঙের গোলককে ঘিরে তো কৌতূহলের অন্ত নেই। চাঁদের বুড়ির চরকা কাটার গল্পকথা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির দুনিয়াতেও তরতাজা। চাঁদের দেশের না-জানি কত রহস্য উন্মোচনের অপেক্ষায় আকুল এই মানবজাতি। তাই আবার চন্দ্রাভিযানে শামিল হচ্ছে নাসা।
এই প্রথম চাঁদে পাঠানো হবে কোনও মহিলা মহাকাশচারীকে। অর্থাৎ, এ বার চন্দ্রলোকেও নারীশক্তির উদ্যাপন। এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাসা। ভারতের চন্দ্রাভিযানের পর এখন সে দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।
১৯৬৯ সালে প্রথম বার চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিলেন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং। তাঁর সঙ্গেই চন্দ্রভূমে নেমেছিলেন এডুইন অলড্রিন। তবে সেই নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। এর পর ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো ১৭-এর কমান্ডার ইউজিন সার্নান চাঁদের মাটিতে হেঁটেছিলেন। সেই শেষ বার কোনও মহাকাশচারী চাঁদে হেঁটেছিলেন।
তবে তাঁরা সকলেই পুরুষ মহাকাশচারী। এই প্রথম চাঁদে পাড়ি দেবেন কোনও মহিলা মহাকাশচারী। সেই অভিযান সফল করাই এখন পাখির চোখ নাসার। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে এই অভিযান করার কথা।
তাঁর নাম ক্রিস্টিনা হামোক কচ। তিনিই প্রথম মহিলা মহাকাশচারী হিসাবে চাঁদের মাটিতে পা রাখতে চলেছেন। এই অভিযানে বিশেষজ্ঞ হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে ক্রিস্টিনাকে।
ক্রিস্টিনার সঙ্গে অভিযানে শামিল হবেন আরও তিন মহাকাশচারী। তাঁরা হলেন জেরেমি হানসেন, ভিক্টর গ্লোভার এবং রিড ওয়াইজম্যান।
১০ দিন ধরে তাঁরা চন্দ্রলোকে ঘুরে বেড়াবেন। মহাকাশ বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য ১০ দিনের আটেমিস-২ অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাসা।
প্রথম মহিলা মহাকাশচারী হিসাবে চাঁদে পাড়ি! যতটা রোমাঞ্চকর, ঠিক ততটাই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে মহাকাশচারী হিসাবে এমন সুবর্ণসুযোগ পেয়ে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত ক্রিস্টিনা।
ক্রিস্টিনা বলেছেন, ‘‘খুবই সম্মানিত বোধ করছি। যখনই অভিযানের কথা ভাবছি, দারুণ লাগছে। বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রকেটে চড়ে যাচ্ছি আমরা। চাঁদে পাড়ি দেব।’’
১৯৭৯ সালের ২৯ জানুয়ারি মিশিগানের গ্র্যান্ড র্যাপিডসে জন্ম ক্রিস্টিনার। তাঁর বেড়ে ওঠা নর্থ ক্যারোলিনার জ্যাকসিনভিলে।
ছোট থেকেই ক্রিস্টিনার স্বপ্ন ছিল মহাকাশচারী হবেন। সেই মতোই নিজের লক্ষ্যপূরণ করেছেন তিনি।
১৯৯৭ সালে নর্থ ক্যারোলিনা স্কুল অফ সায়েন্স অ্যান্ড ম্যাথেমেটিক্স থেকে স্নাতক পাশ করেন ক্রিস্টিনা। পরে নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পদার্থবিদ্যায় স্নাতক পাশ করেন তিনি। পরে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।
২০০১ সালে নাসা অ্যাকাডেমি প্রোগ্রামে যোগ দেন। নাসায় ক্রিস্টিনার সফর শুরু ২০১৩ সাল থেকে।
২০১৯ সালে প্রথম বার মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন ক্রিস্টিনা। ছ’টি স্পেসওয়াকের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। মোট ৪২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট স্পেসওয়াক করেছেন তিনি। মহাকাশে মোট ৩২৮ দিন কাটিয়েছেন ক্রিস্টিনা।
মহাকাশ ঘুরেছেন। এ বার গন্তব্য চাঁদ। চন্দ্রলোকে পা দিয়ে এ বার নতুন ইতিহাস তৈরির পথে ক্রিস্টিনা। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।