Naina Sahni case

Tandoor Murder Case: পরকীয়া সন্দেহে গুলি করে খুন, পরে তন্দুর ওভেনে পোড়ানো হয় স্ত্রীর টুকরো করা দেহ!

নয়না সাহনি হত্যা যা ‘তন্দুর হত্যাকাণ্ড’ নামে বেশি পরিচিত, তা আজও ভারতের জটিলতম অপরাধের মধ্যে একটি।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২২ ১৮:১৪
Share:
০১ ২০

১৯৯৫ সালের ২ জুলাই। রাজধানীর বুকে এমন একটি খুন হয় যা বহু দিন পর্যন্ত দিল্লিবাসীকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। রাগ ও সন্দেহ যে এমন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে তা কল্পনাতীত।

০২ ২০

নয়না সাহনি হত্যা যা ‘তন্দুর হত্যাকাণ্ড’ নামে বেশি পরিচিত, তা আজও ভারতের জটিলতম অপরাধের মধ্যে একটি।

Advertisement
০৩ ২০

যুব কংগ্রেস দলের সদস্য ছিলেন নয়না। তাঁর স্বামী সুশীল শর্মাও একই দলের সদস্য ছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, নিজের স্বামীর হাতেই খুন হতে হয় নয়নাকে।

০৪ ২০

কিন্তু এই খুনের নেপথ্যে রাজনীতির কোনও মারপ্যাঁচ ছিল না। বরং ছিল পরকীয়া, তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি, সন্দেহ ও পারিবারিক অশান্তি।

০৫ ২০

নয়নার এক সহপাঠী ছিলেন মতলুব করিম। কাকতালীয় ভাবে, মতলুবও যুব কংগ্রেস দলের সদস্য ছিলেন। কর্মসূত্রে সুশীল, নয়না ও মতলুবের মধ্যে বন্ধুত্ব ক্রমে দৃঢ় হতে থাকে।

০৬ ২০

কিন্তু সমস্যা দেখা যায়, যখন নয়না ও মতলুব একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। তাঁদের দু’জনের এত মেলামেশা সুশীল পছন্দ করতেন না। এই কারণে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকত সুশীল ও নয়নার।

০৭ ২০

কিন্তু হঠাৎ সুশীলের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। কাজ সেরে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। তখনই নয়নাকে কারওর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে শোনেন তিনি। সুশীল ঘরের ভিতর আসতেই তাড়াহুড়ো করে ফোন রেখে দেন নয়না।

০৮ ২০

স্ত্রীর এ রকম আচরণে খানিকটা সন্দেহ জাগে সুশীলের। তখনই তাঁর নজরে পড়ে মদ ভর্তি গ্লাসের দিকে। তা দেখে সুশীলের আরও সন্দেহ বেড়ে যায়। কার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন, মত্ত অবস্থায় বারংবার জিজ্ঞাসা করছিলেন সুশীল।

০৯ ২০

ধীরে ধীরে স্বামী-স্ত্রীর কথোপকথন অশান্তির রূপ নেয়। বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছিলেন জানালেও সন্দেহের বশে আবার নম্বর ‘রিডায়াল’ করে দেখেন সুশীল।

১০ ২০

কিন্তু ফোনের ওপার থেকে ভেসে আসে একটি পুরুষকণ্ঠ। গলার আওয়াজটিও খুব পরিচিত। এ যে মতলুব! নয়না তা হলে তাঁর অনুপস্থিতিতে মতলুবের সঙ্গেই কথা বলছিলেন।

১১ ২০

তাঁর সন্দেহই ঠিক! আর রাগ সামলাতে না পেরে নয়নাকে লক্ষ করে পর পর দু’বার গুলি চালিয়ে দেন সুশীল। একটি গুলি নয়নার গলায়, অন্য গুলিটি তাঁর মাথায় লাগে।

১২ ২০

তখন রাত সাড়ে আটটা। ঘরের মধ্যে পড়ে রয়েছে নয়নার নিথর দেহ। তিনি যে নিজের স্ত্রীকেই খুন করে ফেলেছেন, তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না সুশীল। কিন্তু সেই মুহূর্তে নয়নার মৃতদেহ না সরালে সমস্যায় পড়বেন তিনি, এই ভেবে একটি পলিথিন ব্যাগের ভিতর দেহটি ভরে ফেললেন সুশীল।

১৩ ২০

যমুনা ব্রিজের উপর থেকে এই ব্যাগটি ফেলে দিলেই আর কেউ নয়নার লাশের হদিস পাবে না, তিনিও শাস্তি পাওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবেন। তাই রাত গভীর হলে গাড়ির ডিকির ভিতরে ব্যাগটি রেখে যমুনা ব্রিজের দিকে গাড়ি চালিয়ে যান।

১৪ ২০

কিন্তু ব্রিজের উপর প্রচুর গাড়ির যাতায়াত। পর পর দু’বার গাড়ি নিয়ে ব্রিজের চক্কর কেটেও কোনও নিরিবিলি জায়গা খুঁজে পেলেন না তিনি। এমন সময় তাঁর মাথায় ভয়ানক পরিকল্পনা আসে।

১৫ ২০

শহরের ভিতর ‘বাগিয়া’ নামের একটি রেস্তরাঁয় যান তিনি। রেস্তরাঁর ম্যানেজার কেশব কুমার তাঁর পরিচিত ছিলেন। কেশবের সহায়তায় নয়নার দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলেন সুশীল। তার পর দেহের টুকরোর চার দিকে মাখন লাগিয়ে তন্দুর ওভেনে পোড়াতে শুরু করেন দু’জন মিলে।

১৬ ২০

ঠিক সে সময় রেস্তরাঁর সামনে দিয়ে দুই পুলিশকর্মী যাচ্ছিলেন, অস্বাভাবিক মাত্রায় আগুন জ্বলছে দেখে রেস্তরাঁর দিকে এগিয়ে যান তাঁরা। মাংস রোস্ট করছেন বলে পুলিশদের জানান সুশীল। কিন্তু বাজে পোড়া গন্ধে চারদিক ভরে যাওয়ায় পুলিশের মনে সন্দেহ জাগে।

১৭ ২০

তন্দুর ওভেনের ভিতরে দেখেন, কোনও মাংস নয়, বরং পোড়া অবস্থায় রয়েছে মানুষের দেহের কাটা অংশবিশেষ। কেশব পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও সুশীল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। ঘটনার আট দিন পর, ১০ জুলাই সুশীল পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

১৮ ২০

আগুনে নয়নার দেহ এমন ভাবে পুড়ে গিয়েছিল যে প্রথম বার ময়নাতদন্তে গুলির কোনও চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অনুরোধে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করা হয়। তিনটি ভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তারদের সহায়তায় প্রমাণ সামনে আসে এবং ২৭ জুলাই সুশীলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

১৯ ২০

দিল্লির নিম্ন আদালত এবং হাই কোর্ট থেকে ফাঁসির নির্দেশ দিলে সুশীল সুপ্রিম কোর্টে ফাঁসির সাজা রদের আর্জি করেন। যে হেতু সুশীল রাগের বশে খুন করে ফেলেছেন এবং এটিই তাঁর প্রথম অপরাধ, তাই সাজার পরিমাণ কমিয়ে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

২০ ২০

তবে কুড়ি বছর জেলে খাটার পর সুশীলকে দিল্লি হাই কোর্ট মুক্তি দিলেও ‘তন্দুর হত্যাকাণ্ড’-এর মর্মান্তিকতা আজও দিল্লি শহরের বুকে জেগে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement