মাস্টাং র্যাঞ্চ। আমেরিকার সবচেয়ে প্রাচীন এবং আইনসম্মত যৌনপল্লি। নেভাডা প্রদেশের স্টোরি কাউন্টিতে মাত্র দু’টি আবাসন নিয়ে তৈরি মাস্টাং র্যাঞ্চ।
সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নামীদামি তারকা, মাস্টাং র্যাঞ্চে সকলের যাতায়াত রয়েছে। তারকাদের জন্য লোকচক্ষু এড়িয়ে পিছনের দরজা দিয়ে প্রবেশের আলাদা ব্যবস্থাও রয়েছে।
যৌনতার এই আখড়াতে মারপিট, খুন-জখমের মতো নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপের ইতিহাস রয়েছে। তবে অনেকের দাবি, সেই সঙ্গে মাস্টাং র্যাঞ্চে রয়েছে অশরীরী উপস্থিতিও। অর্থাৎ, এই যৌনপল্লি ভূতুড়ে।
মাস্টাং র্যাঞ্চের বর্তমান পরিচালিকার নাম ম্যাডাম তারা আডকিন্স। ১৯৯০ সাল থেকে এই যৌনপল্লির দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
১৯৭১ সালে মাস্টাং র্যাঞ্চের পথ চলা শুরু। এই যৌনপল্লি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জো কনফর্টে নামের এক ব্যক্তি। তিনি এক সময় ট্যাক্সি চালাতেন। ইটালি থেকে আমেরিকায় চলে এসেছিলেন তিনি।
একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ট্যাক্সিতে এমন অনেক যাত্রী উঠতেন, যাঁরা শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য নারীশরীরের সন্ধান করছেন। তাঁদের কথা ভেবেই আমেরিকায় এমন দেহব্যবসার ক্ষেত্র তিনি প্রতিষ্ঠা করেন।
মাস্টাং র্যাঞ্চের যাবতীয় অতীত কেচ্ছা-কাহিনির সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠাতা কনফর্টের নাম। ১৯৭৬ সালে আমেরিকার জনপ্রিয় বক্সার অস্কার বোনাভেনাকে যৌনপল্লির দুয়ারে গুলি করে হত্যা করা হয়। শোনা যায়, কনফর্টের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন। তার পরেই এই খুন।
অপরাধজগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কনফর্টে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এক সময় তিনি ব্রাজ়িলে পালিয়ে যান। ২০১৯ সালে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
আমেরিকায় এক মাত্র নেভাডা প্রদেশেই যৌনবৃত্তি আইনসম্মত, বৈধ। সেখানে যাঁরা এই বৃত্তি গ্রহণ করেন, তাঁরা সকলেই শিক্ষিত। জীবনের জটিলতায় বাধ্য হয়ে, নয় স্বেচ্ছায় কেউ কেউ এই পেশা গ্রহণ করে মাস্টাং র্যাঞ্চে আসেন।
আমেরিকার এই যৌনপল্লিতে যৌনবৃত্তি গ্রহণ করে যাঁরা আসেন, তাঁদের প্রত্যেকের পরিচয়, পরিবারের খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া হয়। পরিবার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে, তথ্য যাচাই করে তবেই মাস্টাং র্যাঞ্চে ঢুকতে দেওয়া হয় যে কোনও মহিলাকে। তাঁরা যে কোনও পাচারচক্রের শিকার হননি, তা নিশ্চিত করা হয় এ ভাবেই।
মহিলা ও পুরুষ, মাস্টাং র্যাঞ্চে যাঁরাই শারীরিক চাহিদা মেটাতে আসেন, সব ক্ষেত্রেই যৌনরোগ আছে কি না, যাচাই করে নেওয়া হয়।
মাস্টাং র্যাঞ্চের ভূতুড়ে কাণ্ডকারখানার কথা স্বীকার করে নেন অনেকেই। এই যৌনপল্লিতে কর্মরত এক তরুণী জানিয়েছেন, মাস্টাং র্যাঞ্চের সবচেয়ে ভূতুড়ে ঘরটি হল বি১। কী হয়েছে সেখানে?
তরুণী জানিয়েছেন, এই ঘরে যাঁরাই রাত কাটান, সকালে উঠে তাঁরা অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা শোনান। অনেকেই নাকি রাতে আয়নায় অন্য তরুণীদের সাজগোজ করতে দেখেন, যাঁদের বাস্তবে কোনও অস্তিত্বই নেই।
এ ছাড়া, রাতে হলঘরে শোনা যায় অশরীরী পদশব্দ। কেউ বা কারা যেন সারা রাত হেঁটে চলে বেড়ান। তবে এই নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গা ছাড়া মাস্টাং র্যাঞ্চের সামগ্রিক পরিবেশ খুবই খোলামেলা এবং উপভোগ্য, দাবি ওই তরুণীর।
১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যে কেউ মাস্টাং র্যাঞ্চে আসতে পারেন। প্রতিবন্ধীরাও সুখ খুঁজতে আসেন এই যৌনপল্লিতে। মাস্টাং র্যাঞ্চ কাউকে ফেরায় না।
মাস্টাং র্যাঞ্চ শুধু যে যৌন চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভিড় জমান, তা নয়। কেউ কেউ আসেন শুধু মাত্র সঙ্গী খুঁজতে। বন্ধুত্ব পাতিয়ে কিছু ভাল সময় কাটানোর জন্য এই যৌনপল্লিতে আসেন অনেকে।
মাস্টাং র্যাঞ্চের সকল যৌনকর্মীর প্রতি সাত দিন অন্তর অন্তর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। শরীরে কোনও যৌনরোগ বাসা বেঁধেছে কি না, তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা।
আমেরিকার চলচ্চিত্রেও মাস্টাং র্যাঞ্চের ভূমিকা রয়েছে। নানা সময় নানা ছবিতে এই যৌনপল্লিকে কাজে লাগানো হয়েছে। মাস্টাং র্যাঞ্চে অনেক ছবির শুটিং হয়েছে।
যৌনপেশাকে আঁকড়ে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মাস্টাং র্যাঞ্চ চলে আসেন মহিলারা। তাঁরা তাঁদের রোজগারের ৫০ শতাংশ কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেন। পরিবর্তে মেলে নিশ্চিন্ত আশ্রয়, স্বাধীন জীবনযাপন।
যৌনক্রিয়ার সঙ্গে মাস্টাং র্যাঞ্চ মদ্যপানও চলে আকছার। তবে এই যৌনপল্লিতে নিষিদ্ধ মাদক সেবন করা যায় না। অতিরিক্ত মদ্যপানও সেখানে নিষিদ্ধ।