Kaali-Peeli Taxi

কালো-হলুদ পদ্মিনী ট্যাক্সির বিদায়! মুম্বইয়ের রাস্তায় রবিবারেই শেষ দিন

সোমবার থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মুম্বইয়ের বিখ্যাত অভিজ্ঞান প্রিমিয়ার পদ্মিনী কালো-হলুদ ট্যাক্সি। এর আগে একই ভাবে মুম্বইয়ের রাস্তা থেকে হারিয়ে গিয়েছিল বেস্টের কিংবদন্তি লাল দোতলা বাস।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
মুম্বই শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:২০
Share:
০১ ১৭

‘মৃত্যুদিন’ রবিবারই। সোমবার থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মুম্বইয়ের বিখ্যাত অভিজ্ঞান প্রিমিয়ার পদ্মিনী কালো-হলুদ ট্যাক্সি। এর আগে একই ভাবে মুম্বইয়ের রাস্তায় হারিয়ে গিয়েছিল বেস্টের কিংবদন্তি লাল দোতলা বাস।

০২ ১৭

সরকারি সূত্রের খবর, রবিবারই ২০ বছরের নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে বাণিজ্যনগরীর শেষ নথিভুক্ত প্রিমিয়ার পদ্মিনী ‘কালি-পিলি’ ট্যাক্সিটির। ফলে, ৩০ অক্টোবর, সোমবার থেকে মুম্বইয়ের বিখ্যাত অভিজ্ঞান প্রিমিয়ার পদ্মিনী কালো-হলুদ ট্যাক্সি বাস্তব থেকে চলে যাবে ইতিহাসের পাতায়।

Advertisement
০৩ ১৭

মুম্বই বললেই মুহূর্তে যে ছবি মনে উঁকি দেয়, তার নাম কালি-পিলি ট্যাক্সি। বিশেষজ্ঞের পরিভাষায় ‘ফিয়াট ১১০০ডি’। শেষ পাঁচ দশক সময় ধরে এই হলুদ-কালো ট্যাক্সিই মুম্বইবাসীকে নিরাপদ সফরের অভিজ্ঞতা দিয়ে এসেছে। সেই সঙ্গেই একাত্ম হয়ে গিয়েছে মুম্বইয়ের নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে।

০৪ ১৭

সিনেমা থেকে খেলা, বাণিজ্য থেকে রাজনীতি— মুম্বইয়ের প্রিমিয়ার পদ্মিনী হলুদ-কালো ট্যাক্সির বিকল্প ছিল না কোনও দিনই। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে কখন যে কালি-পিলি দৌড় থেকেই ছিটকে পড়ল, বোঝাই গেল না। তার আগেই অবশ্য কালের নিয়মে রাস্তা থেকে হারিয়ে গিয়েছে আর এক বিখ্যাত লাল রঙের দোতলা বাস।

০৫ ১৭

মুম্বইয়ে বাণিজ্যিক গাড়ি একটানা ২০ বছর ব্যবহার করা যায়। তার পর তা চলে যায় বাতিলের খাতায়। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, শেষ প্রিমিয়ার পদ্মিনী কালো-হলুদ ট্যাক্সিটি নথিভুক্ত হয়েছিল তারদেও আরটিও-তে। তারিখ ছিল ২০০৩ সালের ২৯ অক্টোবর। ক্যালেন্ডার গুনে রবিবারই শেষ হচ্ছে সেই ২০ বছরের সময়সীমা। ফলে কালের নিয়মেই তা বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

০৬ ১৭

নতুনের জন্য পুরাতনকে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। চিরায়ত এ নিয়মে ব্যতিক্রমের জায়গা নেই। কিন্তু প্রিমিয়ার পদ্মিনী কালি-পিলি ট্যাক্সির সঙ্গে মুম্বইয়ের সম্পর্কের গভীরতা যা, তাতে তাকে তামাদি ঘোষণা করাও যেন বুকে পাথর রাখারই শামিল।

০৭ ১৭

ঠিক যেমন বলছেন, শেষ নথিভুক্ত প্রিমিয়ার পদ্মিনী কালি-পিলি ট্যাক্সিটির চালক আব্দুল করিম কারসেকর। ২০০৩ সালের সেই দিনটি আজ বড্ড মনে পড়ছে আব্দুলের। যে দিন প্রথম বার গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। প্রভাদেবীর বাসিন্দা আব্দুলের গাড়ির নম্বর ছিল, এমএইচ ০১ জেএ ২৫৫৬।

০৮ ১৭

২০ বছরের যাত্রা শেষ হল রবিবার। শেষ বার কালি-পিলির স্টিয়ারিংয়ে অভ্যস্ত হাত রেখে তিনি বলেন, ‘‘ইয়ে মুম্বই কি শান হ্যায়, অউর হামারি জান হ্যায়!’’ (এটা মুম্বইয়ের সম্মান আর আমার জীবন)। চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে তাঁর।

০৯ ১৭

মুম্বইয়ের গাড়িপ্রেমী ড্যানিয়েল সিক্যুয়েরারও মনখারাপ। ছেলেবেলা থেকে যে সঙ্গী, সে এ ভাবে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাচ্ছে দেখে মাথায় ভিড় করছে কত শত স্মৃতি। তিনি সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, যাতে অন্তত একটি প্রিমিয়ার পদ্মিনী কালি-পিলি ট্যাক্সি সংরক্ষণ করা হয়। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুম্বইয়ের বিখ্যাত অভিজ্ঞানকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগটুকু অন্তত পায়।

১০ ১৭

কিন্তু তিনিও খুব একটা আশাবাদী নন। যে ভাবে লাল রঙের দোতলা বাস কালের গর্ভে বিলীন হয়েছে, তাঁর আশঙ্কা, কালি-পিলিরও না তেমনই দশা হয়।

১১ ১৭

তাহলে কি মুম্বইয়ের রাস্তায় আর দেখাই মিলবে না কালি-পিলির? উত্তর হল, না। প্রিমিয়ার পদ্মিনী কালো-হলুদ ট্যাক্সিই কেবল তামাদি হয়েছে। বাণিজ্যনগরীর রাস্তায় বহাল তবিয়তেই ছুটে চলবে ‘ওয়াগন-আর’ বা ‘স্যান্ট্রো’ কালি-পিলি ট্যাক্সি। তবে বিখ্যাত অভিজ্ঞান প্রিমিয়ার পদ্মিনী কালো-হলুদ ট্যাক্সি আর দৌড়বে না মায়ানগরীর সরণিতে।

১২ ১৭

সূত্র জানাচ্ছে, সময়ের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছিল না কালি-পিলি। অ্যাপ ক্যাব যখন ব্যক্তিগত পরিবহণের বাজারের সিংহভাগ দখল করে বসে আছে, তখন হলুদ-কালো ট্যাক্সির বাজার ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছিল।

১৩ ১৭

প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দৌড়েও পিছিয়ে পড়ছিল প্রিমিয়ার পদ্মিনী। তারই অনিবার্য পরিণতি, মুম্বইয়ের রাস্তাকে চিরতরে বিদায় বলা।

১৪ ১৭

শহরের নাম তখন বম্বে। ১৯৬৪ সালে ট্যাক্সি হিসাবে প্রিমিয়ার পদ্মিনীর যাত্রাশুরু। ১৯৭০ সাল নাগাদ ইতালির ফিয়াট কোম্পানি বাজারে আনে ‘প্রিমিয়ার প্রেসিডেন্ট’। পরবর্তী কালে তারই নাম হয় ‘প্রিমিয়ার পদ্মিনী’।

১৫ ১৭

বম্বে, পরবর্তীতে মুম্বইয়ের রাস্তা দাপিয়ে ছুটতে থাকে পথের রানি, পদ্মিনী। ট্রেডমার্ক ফিয়াটের হলেও গা়ড়িটি তৈরি করত যৌথ অংশীদারির সংস্থা ‘প্রিমিয়ার অটোমোবাইল লিমিট’ (পিএএল)। ২০০১ সালে পিএএল এই ধরনের গাড়ি তৈরি করা বন্ধ করে দেয়। অতঃপর শেষ নথিভুক্ত গাড়িরও মেয়াদ ফুরিয়ে গেল রবিবার।

১৬ ১৭

ভারতের মহানগরে ট্যাক্সি পরিষেবা বললেই মনে পড়ে যায় কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি আর মুম্বইয়ের কালি-পিলি ট্যাক্সির কথা। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল, কলকাতায় যেমন বেশির ভাগ ট্যাক্সিই একটা সময় পর্যন্ত ছিল কেবলমাত্র হলুদ অ্যাম্বাসাডর। ঠিক তেমনই, মুম্বইয়ের রাস্তায় একচ্ছত্র দাপট ছিল ‘ফিয়াট ১১০০ডি’-এর।

১৭ ১৭

মুম্বই যেমন অ্যাম্বাসাডরকে আদর করে কোলে বসায়নি, তেমনই কলকাতার রাস্তায় হলুদ ফিয়াট ট্যাক্সির দেখাও মেলেনি। অথচ, এ নিয়ে কোথাও কোনও বোঝাপড়াও ছিল না। তা হলে কেন দুই শহরের দুই ধরনের ট্যাক্সির মিশ্রণ ঘটল না? উত্তর মেলার আগেই মায়ানগরীর মায়া কাটিয়ে মুম্বইয়ের রাস্তাকে আলবিদা জানাচ্ছে অতিপ্রিয় কালি-পিলি।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement