ছুটির ফাঁদে এ বার বসেরা! অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সমুদ্রের জলে সবে পা ডুবিয়েছেন, বেজে উঠল পকেটের মোবাইল। অফিস থেকে ফোন! দীর্ঘ দিন ধরে পরিকল্পনা করে সাজানো ছুটির ধরতাইটা সেই গেল কেটে। তার পর ফোনে যা বার্তা বিনিময় হল, তাতে গোটা ছুটিটাই মাঠে মারা গেল। সে সব দিন অতীত হতে আর বেশি দেরি নেই।
ছুটির সময় অফিসের বিরক্তিকর ফোনের দাওয়াই বার করে ফেলেছে মুম্বইয়ের একটি সংস্থা। এখন থেকে ছুটিতে যাওয়া কর্মীর মোবাইলে বসের ছায়া পড়লেই ১ লক্ষ টাকা জরিমানা গুনতে হবে। ছুটি এখন থেকে কেবলই ছুটি।
মুম্বইয়ে ‘ফ্যান্টাসি স্পোর্টস প্ল্যাটফর্ম’ চালায় একটি সংস্থা। সেই সংস্থার কর্মীদের জন্য চালু হয়েছে নতুন এক নিয়ম। যে নিয়মে, অধস্তন বা সহকর্মী ছুটিতে থাকলে তাঁকে ফোন করে বিরক্ত করতে পারবেন না ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। করলেই ১ লক্ষ টাকা জরিমানা।
এমন নিয়ম চালু হয়েছে অফিসের ভিতর ব্যক্তিগত দক্ষতা পরীক্ষার মানদণ্ড হিসাবেও। কোনও নির্দিষ্ট কর্মী বা কয়েক জনের অভাবে অফিসের দৈনন্দিন কাজে কতটা প্রভাব পড়ছে তা মেপে দেখার সুযোগও থাকছে এই নীতিতে।
অনেক সময়ই দেখা যায়, কোনও নির্দিষ্ট কর্মী অফিসে না থাকলে নির্দিষ্ট কাজে সমস্যায় পড়েন সহকর্মীরা। কিন্তু ফোনেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের উপায় না থাকলে নিজেকেই সেই কাজ করতে হবে। তাতে ব্যক্তিনির্ভরতা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে করে মুম্বইয়ের সংস্থাটি।
সারা বছর কাজের ফাঁকে ঠিক কতটা ছুটি প্রয়োজনীয়, তা নিয়ে নানা মহলের নানা মত। সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে ছুটি দেওয়ার পক্ষপাতী। এহ বাহ্য, ছুটিতে গেলে ফোন করেও বিরক্ত করা যাবে না কর্মীদের। এর প্রভাব কর্মীর ব্যক্তিগত জীবনেও পড়বে।
ওই সংস্থাতেই বছরে অন্যান্য ছুটিছাটার পাশাপাশি রয়েছে এক সপ্তাহের একটি বাধ্যতামূলক ছুটি। অন্যান্য ছুটি নিন বা না নিন, বছরে একটি বার এক সপ্তাহের জন্য অফিসই আপনাকে আলবিদা জানাবে।
সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ভাবিত শেঠ বলছেন, ‘‘বছরে এক বার এক সপ্তাহের জন্য অফিস আপনাকে ভুলে যাবে। আপনি অখণ্ড অবসর উপভোগ করে আবার তরতাজা হয়ে কাজে ফিরে আসুন। এটাই আমাদের মন্ত্র। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, এতে খুব সুবিধা হয়।’’
পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ফোন করলেই জরিমানা করে কর্মীদের অখণ্ড অবসর উপভোগ করার রাস্তা পরিষ্কার করে দেওয়া হচ্ছে। এতে অফিসে নির্দিষ্ট ব্যক্তিনির্ভরতা কমানো যাবে বলে মনে করেন ভাবিত।
বিশ্ব জুড়েই কর্মীদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা হয়। গোল্ডম্যান স্যাক্স গোষ্ঠী-সহ অনেক সংস্থাই কর্মীদের অসীমিত ছুটি নেওয়ার সুযোগ দেয়।
বিভিন্ন সংস্থায় কর্মীদের বিনামূল্যে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। ইদানীং, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর দুনিয়ায় কোনও ক্যাফে বা পাবে বসে কর্মী কাজ করতে চাইলে তারও ব্যবস্থা করে দিচ্ছে অফিস, তেমন নজিরও বিরল নয়।
এ ছাড়া অফিস পরিসরের বাইরে যাতে কর্মীরা পরিবার নিয়ে বাকি সহকর্মীদের সঙ্গে মিশতে পারেন, তেমন ‘অফিস পার্টি’র আয়োজনও হয়ে যাকে। মূল লক্ষ্য, অফিসের কর্মীদের উপর থেকে কাজের বোঝাটা কিছু ক্ষণের জন্য হলেও লাঘব করে দেওয়া। তাতে তরতাজা অবস্থায় নতুন উদ্যমে কাজে ফিরতে পারেন কর্মীরা।
বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম যোগ্যতার কর্মী কাজ করেন কোনও সংস্থায়। কিন্তু তার মধ্যে কয়েক জনের দক্ষতা বেশি। তাঁরাই সংস্থার কর্মী মূলধন। কোনও ভাবেই তাঁদের উৎপাদনশীলতায় ভাটা পড়ুক, চায় না কোনও সংস্থাই। তাই তাঁদের কথা ভেবেই ছুটির সাতসতেরো নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে এ যুগের সংস্থাগুলো।
এর উল্টো দিকও আছে। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের একটি সংস্থা এই নীতিকে বাতিল করে দিয়েছে। সেই সংস্থার দাবি, এতে কর্মীরা ঠিক কত ছুটি নেবেন, তা বুঝে উঠতে পারেন না। তাতে তাঁরা নিজেদের অপরাধী ভাবেন। যা এই নীতির ঘোষিত উদ্দেশ্যের ধারেকাছেও নয়।