করোনা আক্রান্ত হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন এক অন্তঃসত্বা। ৫০ দিন পর জেগে উঠে তাঁর দেখা হল তাঁর নবজাতকের সঙ্গে।
এক মাসের কন্যা। জন্মের প্রথম মাস মাকে ছাড়াই কাটিয়েছে সে। তাঁর মা-ও দেখতে পাননি মেয়ের প্রথম স্নান, শুনতে পাননি প্রথম কান্না, অনুভব করেননি প্রথম স্পর্শ। মেয়ের প্রথম অনেক কিছুই না-দেখা হয়ে রয়ে গিয়েছে তাঁর।
ওই মহিলার নাম লরা ওয়ার্ড। বয়স ৩৩। লরা একটি স্কুলের সহ শিক্ষিকা। অক্টোবরের মাঝামাঝি সন্তানের জন্ম দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। বদলে তাঁর প্রসব করানো হয় দু’মাস আগে। জুলাইয়ের শেষ দিকে।
লরা তখন কোমায় আক্রান্ত। তবে তার আগে তিনি শুনেছেন, সন্তানকে সময়ের অনেক আগে প্রসব না করালে বিপদ। তিনি বা সন্তান কেউ ই সেক্ষেত্রে বাঁচবেন না। জ্ঞান হারানোর আগে লরা মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ছিলেন অস্ত্রোপচারের। এরপর লরার ঘুম ভাঙে ৩০ সেপ্টেম্বর।
কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর শুরু হয় নতুন যন্ত্রণা। শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন লরা। হাতের একটা আঙুলও নাড়তে পারছিলেন না। পরে লরা বলেছেন, মেয়েকে চোখের সামনে দেখে তাঁকে নিজের হাতে না ধরার কষ্ট তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। পুরো পরিস্থিতিটাই ছিল ভয়ানক হতাশার।
তারপরও ক্রমাগত লরাকে সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন তাঁর স্বামী এবং বড় ছেলে উইলিয়াম। লরা জানিয়েছেন, বেঁচে থাকতে গেলে প্রাথমিক যে কাজ গুলো করা দরকার, তার কোনওটিই করতে পারছিলেন না তিনি। তাঁকে শিশুর মতোই নতুন করে খাবার খাওয়া, ব্রাশ করা, এমনকি হাঁটাও শিখতে হয়েছে। আর এ কাজে তাঁকে সাহায্য করেছে তাঁর স্বামী এবং বড় ছেলে উইলিয়াম।
জুন মাসের শেষের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন লরা। তারপর থেকে পাঁচটি হাসপাতালে বিভিন্ন পর্যায়ে চিকিৎসা হয়েছে তাঁর। এখনও তিনি বাড়ি ফিরতে পারেননি।
এ দিকে লরার স্বামী লি পণ করেছিলেন স্ত্রী সুস্থ হয়ে বাড়ি না ফিরলে সদ্যোজাত কন্যার নামকরণও করবেন না। সেই প্রতিজ্ঞা অবশ্য লরার অনুরোধেই ভাঙতে হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী কন্যার নাম রেখেছেন হোপ।
হাসপাতালের সেবিকারা জানিয়েছিলেন, কম সময়ে অনেক বেশি শারীরিক উন্নতি করেছেন লরা। তবে লরা তার পিছনে কারণও খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর কথায়, নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে তিনি ফিরে এসেছেন সন্তানদের বিশেষ করে সদ্যোজাত কন্যাকে নিজের হাতে ছুঁয়ে দেখার অদম্য ইচ্ছা থেকে।
নামের ব্যাপারে একটু বেশিই অনুভূতিপ্রবণ ছিলেন লরা। তবে মেয়ের জন্য ওই নামটিই মনে ধরেছে তাঁর। হোপ মানে আশা। যা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।