এ বার যেন সরাসরি টাটাদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধে’ নেমে পড়লেন মুকেশ অম্বানী। তবে বিদেশের মাটিতে। যুদ্ধের ময়দানও মুকেশের জন্য প্রায় নতুন। বিদেশে টাটাদের হোটেল ব্যবসার বাজার দখল করতে বড়সড় বিনিয়োগ করেছেন রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ-এর অন্যতম মালিক মুকেশ।
দেশীয় বাজারে সবচেয়ে বড় হোটেল চেন-এর মালিকানা রয়েছে ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানি লিমিটেড (আইএইচসিএল) নামের এক সংস্থার হাতে। যা আসলে টাটা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন। তাজ হোটেল ব্র্যান্ডনেম-এ সেই হোটেলগুলি চালান টাটারা।
হোটেল ব্যবসায় বিদেশের বাজারেও পা রেখেছেন টাটারা। বস্টন, সান ফ্রান্সিসকো, নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, কেপ টাউনের মতো শহর ছাড়া মলদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কায় আইএইচসিএল-এর হোটেল রয়েছে।
বিদেশের মাটিতে টাটাদের সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে নিউ ইয়র্কের বাজারকেই পাখির চোখ করেছেন মুকেশ। এমনই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
চলতি বছরের গোড়ায় হোটেল ব্যবসায় বড়সড় পদক্ষেপ করেছেন মুকেশ অম্বানী। নিউ ইয়র্কের একটি বিলাসবহুল হোটেলের বড়সড় অংশ কিনেছে তাঁর সংস্থা তাঁর সংস্থা রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টমেন্টস অ্যান্ড হোল্ডিংস লিমিটেড। ঘটনাচক্রে, ওই হোটেলের কয়েকশো মিটার দূরেই রয়েছে ‘দ্য পিয়ের’— টাটাদের হোটেল।
হোটেল ব্যবসার খুঁটিনাটি নিয়ে বোঝেন এমন মানুষজনের দাবি, এই বিনিয়োগের মাধ্যমে টাটাদের বাজারে হাত দিয়েছেন মুকেশ।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, নিউ ইয়র্কে মান্দারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলের ৭৩.৩৭ শতাংশ কিনেছে মুকেশের সংস্থা। তার জন্য মুকেশের খরচ কত?
সংবাদমাধ্যমের দাবি, চলতি বছরের গোড়ায় মান্দারিন ওরিয়েন্টাল হোটেল গোষ্ঠীর সঙ্গে মুকেশের সংস্থার চুক্তি পাকা হয়ে গিয়েছে। মান্দারিনের বড়সড় অংশের দখল নিতে ৯.৮১৫ কোটি ডলার খরচ করতে হবে মুকেশের সংস্থাকে।
পূর্বতন গোষ্ঠীর ১১.৫ কোটি ডলারের বেশি ঋণের দায়ভারও বহন করবে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টমেন্টস অ্যান্ড হোল্ডিংস লিমিটেড। সব মিলিয়ে এই বিনিয়োগের মূল্য প্রায় ২,০০০ কোটি ডলার।
এই প্রথম নয়। এর আগেও অবশ্য হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন মুকেশ। গত বছর ব্রিটেনের স্টোক পার্ক নামে একটি হোটেল কিনেছেন ৫৯২ কোটিতে। তবে এ বার তাঁর লক্ষ্য আমেরিকার বাজার। তার জন্য স্টোক পার্কের থেকেও চার গুণ বেশি টাকা খসিয়েছেন তিনি।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ‘দ্য পিয়ের’-কে কড়া টক্কর দিতে পারে মান্দারিন। নিউ ইয়র্কের অভিজাত মহল্লায় রয়েছে এই হোটেল। ম্যানহাটনের কলম্বাস সার্কলের ডয়েশ ব্যাঙ্ক সেন্টারের এই বিলাসী হোটেলে কী কী রয়েছে? ২৪৮ রুম এবং স্যুট ছাড়াও রয়েছে আরামে সময় কাটানোর যাবতীয় মশলা।
মিডটাউন ম্যানহাটনের সেন্ট্রাল পার্কের অদূরেই এই হোটেলে রয়েছে ‘এম ও লাউঞ্জ’। যে রেস্তরাঁয় সারা দিন ধরেই খানাপিনা করার ঢালাও ব্যবস্থা রয়েছে।
হোটেল ছেড়ে বাইরে বেরতে ইচ্ছে না করলে যেতে পারেন মান্দারিন ওরিয়েন্টাল স্পা-য়। ১৪,৫০০ বর্গফুটের এই স্পা আপনার মন কেড়ে নিতে পারে।
আলসেমি করে দিন কাটাতে না চাইলে অবশ্য যেতে পারেন অত্যাধুনিক ফিটনেস সেন্টারে। তা-ও রয়েছে হোটেলে। ফিটনেস সেন্টারের সঙ্গে রয়েছে ৭৫ ফুট লম্বা ল্যাপ পুল।
হোটেলের কাছেই আমেরিকার ধনকুবেরদের বিনোদনের বন্দোবস্ত। তবে নিতান্তই যদি হোটেলবন্দি হয়ে থাকতে ইচ্ছে না করে, তবে ঘোরাঘুরি করতে পারেন সেন্ট্রাল পার্কে। থিয়েটার দেখতে ব্রডওয়েতে অথবা জ্যাজ শুনতে লিঙ্কন সেন্টারেও ঢুকতে পারেন। আশপাশে শপিং মল বা রেস্তরাঁরও অভাব নেই। ফলে মুকেশের হোটেলে যে ভিড় লেগেই থাকবে, তেমনই মনে করেছে ওয়াকিবহাল মহল।